গাজীপুরের কাঁঠাল পেল জিআই স্বীকৃতি

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১০:০৭:১৫
গাজীপুরের কাঁঠাল পেল জিআই স্বীকৃতি

গাজীপুর, দেশের মধ্যাঞ্চলের অন্যতম কৃষিপ্রধান জেলা, দীর্ঘদিন ধরেই কাঁঠালের জন্য খ্যাত। রাস্তার ধারে, গ্রামীণ হাটে, কিংবা বাড়ির আঙিনায় প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় এই সুগন্ধী, সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ফলটি। আর সেই ঐতিহ্যের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এলো এবার। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে এবং সেই তালিকায় গাজীপুরের শ্রীপুর অঞ্চলের কাঁঠালকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

জিআই স্বীকৃতি মূলত একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বা হস্তশিল্পকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাজারে স্বাতন্ত্র্য এনে দেয়। গাজীপুরের কাঁঠালের এই স্বীকৃতি শুধু ফলটির ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য নয়, বরং এর প্রামাণ্য উৎপত্তি, ঐতিহ্য এবং গুণগতমানের জন্যই অর্জিত হয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ অঞ্চলে প্রতিবছর উৎপন্ন হয় প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল। এর মধ্যে শ্রীপুর একাই উৎপাদনের শীর্ষে। এখানকার উঁচু জমি, বন্যামুক্ত পরিবেশ এবং অনুকূল আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের জন্য আদর্শ। এ অঞ্চলে চাষ হয় তিন ধরনের কাঁঠাল: খাজা, গালা ও দুরসা, যেগুলোর স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি।

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসজুড়ে চলে গাজীপুরে কাঁঠালের মৌসুম। বিশেষ করে জৈনা বাজারে বসে দেশের অন্যতম বড় কাঁঠালের পাইকারি হাট, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল কিনতে ভিড় করেন পাইকার ও রপ্তানিকারকেরা। মহাসড়কের দুপাশে ট্রাকের দীর্ঘ সারি, ভ্যানগাড়িতে তোলা পাকা কাঁঠাল আর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক যেন কাঁঠালের উৎসবের চিত্রপট তৈরি করে।

গাজীপুরের কাঁঠালকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) ও পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যৌথভাবে কাজ করে। গত বছরের ৬ মার্চ, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ এর ধারা ১২ অনুযায়ী গাজীপুরের কাঁঠালকে জিআই জার্নাল-৪৬-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ৮ মার্চ এটি ডিপিডিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে কাঁঠাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ৪৭তম নিবন্ধিত জিআই পণ্য।

গাজীপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “গাজীপুরের কাঁঠালের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগতমানে রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই স্বীকৃতি দেশের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।”

প্রতিবছর গাজীপুর থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়। তবে চাষিদের অভিযোগ, মৌসুমে কাঁঠালের প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের যথাযথ অবকাঠামো না থাকায় তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। ফলত, অনেক চাষিই ফল পাকার আগেই পুরো বাগান বিক্রি করে দেন, যাতে করে প্রকৃত মূল্য আর তাদের হাতে আসে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজীপুরের কাঁঠালকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে পণ্যটির রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।

গাজীপুরের কাঁঠালের জিআই স্বীকৃতি শুধুই একটি চাষযোগ্য ফলের উন্নয়ন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির গ্লোবাল ব্র্যান্ডিংয়ের একটি নতুন অধ্যায়। ঠিক যেমন ‘নকশিকাঁথা’ বা ‘রাজশাহীর আম’ বৈশ্বিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছে, তেমনি গাজীপুরের কাঁঠালও এখন সেই পথে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত