ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’র পর জাতিসংঘে তেহরানের কড়া বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ০৯:২৮:১৪
‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’র পর জাতিসংঘে তেহরানের কড়া বার্তা

ইরান সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দেশটির ওপর সামরিক আগ্রাসনের সূচনাকারী হিসেবে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। রোববার (২৯ জুন) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবর পাঠানো এক কূটনৈতিক চিঠিতে এ দাবি জানায় তেহরান।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “আমরা আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যে নিরাপত্তা পরিষদ যেন ইসরাইলি সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রকে আগ্রাসনের সূচনাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার আওতায় আনে। তাদের এ আগ্রাসন শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।”

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “এ ধরনের জঘন্য ও গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে জাতিসংঘের উচিত আগ্রাসনকারী দেশগুলোর প্রতি জবাবদিহির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা, যারা সরাসরি এই আগ্রাসনের নির্দেশ দিয়েছেন, তারাও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যক্তিগতভাবে দায়ী।”

উল্লেখ্য, চলমান এই সংকটের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জুন, যখন ইসরাইল একতরফাভাবে ইরানের সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পরবর্তী ১২ দিনজুড়ে ইসরাইল তেহরান, ইসফাহান, কোম এবং অন্যান্য এলাকায় একাধিক হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং বেসামরিক আবাসিক এলাকা।

এই আগ্রাসনে সমর্থন জানিয়ে ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরান একে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাবে ইরান তড়িৎ প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পস (IRGC) এর অধীনে অ্যারোস্পেস ফোর্স ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ও নগর অঞ্চলে। এই প্রতিশোধমূলক আক্রমণ ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’-এর অংশ ছিল। ইরান দাবি করে, তাদের হামলায় ইসরাইলি অবকাঠামো, সামরিক ঘাঁটি এবং বেসামরিক সুবিধাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চরম উত্তেজনার মধ্যেই ২৪ জুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এই ১২ দিনের সরাসরি সংঘাত, যা পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন দুটি রাষ্ট্রকে প্রায় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল, অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র-স্পন্সরিত এক চুক্তির মাধ্যমে স্থগিত হয়।

যুদ্ধবিরতির অধীনে উভয় পক্ষ সাময়িকভাবে আক্রমণ বন্ধ করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিরতি কেবল কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের সুযোগ হতে পারে দীর্ঘমেয়াদে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

তেহরানের জাতিসংঘে পাঠানো বার্তাটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইরান দৃঢ়ভাবে বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা এই ধরনের আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরবতা নিজেই এক ধরনের সহায়তা। আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের আদর্শগুলো রক্ষায় এটি অনিবার্য যে নিরাপত্তা পরিষদ যেন নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই আহ্বান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি যুদ্ধবিরতির ভঙ্গ বা সংঘর্ষের পুনরারম্ভ ঘটে। একইসঙ্গে এটি তেহরানের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে, যেখানে দেশটি নিজেকে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালনের দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত