মাগুরায় কারাগারের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া উদ্যোগ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ০৯:১৮:২৬
মাগুরায় কারাগারের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া উদ্যোগ

শুধু বন্দিদের তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, কারা প্রশাসন আজ সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তারই উজ্জ্বল প্রমাণ হিসেবে মাগুরা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক মানবিক কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় মাদ্রাসার এতিম ও হেফজখানার শিশুদের মাঝে মৌসুমি ফল ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। এই ব্যতিক্রমী আয়োজন শুধু শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়নি, বরং সমাজে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মানবিক ভূমিকার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

রবিবার (২৯ জুন) মাগুরা সদর উপজেলার প্রখ্যাত শিক্ষা ও আবাসিক প্রতিষ্ঠান রাহমানিয়া আরাবিয়া এতিমখানা ও হেফজখানায় এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। মাগুরা জেলা কারাগারের জেল সুপার শেখ মো. মহিউদ্দিন হায়দারের নেতৃত্বে কারা কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত উপস্থিতি ও আন্তরিকতার সঙ্গে এতিম শিশুদের হাতে তুলে দেন মৌসুমি ফল পাকা আম ও কাঁঠাল, চাল, মসুর ডাল, বিশুদ্ধ গরুর দুধ এবং স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত মিষ্টান্ন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার আবিদ আহমেদ, ডেপুটি জেলার জাহিদ হাসান, মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও সমাজসেবকগণ। তাঁদের উপস্থিতিতে এই ছোট্ট আয়োজনটি হয়ে ওঠে এক বড়সড় মানবিক বার্তা।

জেল সুপার মহিউদ্দিন হায়দার বলেন, “আমরা যখন কারাগারের দায়িত্ব নেই, তখন বুঝি এ দপ্তর শুধু অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জায়গা নয়, বরং তাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পাশে দাঁড়ানোরও সুযোগ ও দায়িত্ব আমাদের আছে। এ রকম এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে যদি একটু আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে সেটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”

তিনি আরও বলেন, “শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানসিক বিকাশ ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাও জরুরি। তাদের এই শৈশবে যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেওয়া যায়, সেটাই তাদের ভবিষ্যতের পথনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে।”

অন্যদিকে এতিমখানা ও হেফজখানার শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কারা কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে, “একজন শিশু যখন দেখে একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজের হাতে ফল ও খাবার দিয়ে তাকে ভালোবাসা জানাচ্ছেন, তখন সে শুধু খাবার পায় না পায় স্বীকৃতি, সম্মান এবং সমাজে নিজের অস্তিত্বের স্বরূপ উপলব্ধি করার সুযোগ।”

স্থানীয়দের অনেকেই এই আয়োজন দেখে বলেছেন, "এ ধরনের সহানুভূতিশীল সরকারি উদ্যোগ সমাজে উদারতা ও সহমর্মিতার চর্চাকে উৎসাহিত করে। অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি হতে পারে একটি রোল মডেল।"

এই আয়োজনের মাধ্যমে মাগুরা জেলা কারাগার প্রমাণ করেছে যে, কারাগার কেবল শৃঙ্খলা বা সংশোধনের জায়গা নয় মানবিকতার প্রকাশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের ক্ষেত্রও হতে পারে। শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরেও হৃদয়ের জায়গা থাকে যেখানে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর সমাজ পরিবর্তনের ইচ্ছা একত্রে বিকশিত হতে পারে।

এই ধরনের উদ্যোগ শুধু সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মুখে হাসি ফোটায় না, বরং বৃহত্তর পরিসরে সরকারি-বেসরকারি সম্পর্ক, সমাজের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেন্দ্র করে মানবিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে বাস্তবতার রূপ দিতে সহায়তা করে। এ যেন এক অনাড়ম্বর প্রয়াস, যার প্রতিটি মুহূর্তই ছুঁয়ে যায় হৃদয়।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত