ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় স্পষ্ট বিভাজন—ভোট পদ্ধতি ও নিয়োগ কাঠামোতে মতবিরোধ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ২১:৫৪:০০
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় স্পষ্ট বিভাজন—ভোট পদ্ধতি ও নিয়োগ কাঠামোতে মতবিরোধ

দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নীতিগত ঐকমত্য তৈরি হলেও ভোট গ্রহণের পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে এই তথ্য জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “সংখ্যানুপাতিক (প্রাপ্য ভোটভিত্তিক) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের পক্ষে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মত দিয়েছে, যদিও কিছু দল এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে।” তবে সকল রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করায়, কমিশন আশাবাদী—ভোট পদ্ধতি নিয়েও একমত হওয়া সম্ভব হবে।

বৈঠকে আলোচনা এসেছে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নতুন কাঠামো নিয়েও। আলী রীয়াজ জানান, কমিশন প্রাথমিকভাবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিলেও তা অধিকাংশ দলের সমর্থন না পাওয়ায়, পরবর্তীতে “সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ প্রতিষ্ঠান কমিটি” গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই কমিটির কাঠামো এবং কার্যপরিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে।

প্রস্তাবিত কমিটি ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবে:

১. নির্বাচন কমিশন২. দুর্নীতি দমন কমিশন৩. সরকারি কর্ম কমিশন৪. মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়৫. জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৬. তথ্য কমিশন

এই ছয় প্রতিষ্ঠানে প্রধান ও সদস্য পদে নিয়োগ দিতে কমিটি কাজ করবে।

কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন—প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, (যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয়) উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলের নেতা ও অন্য বিরোধী দলগুলোর একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। আগে প্রস্তাবিত কাঠামোয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সরাসরি অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হলেও, অধিকাংশ দল তা প্রত্যাখ্যান করায় বর্তমানে রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতির অংশগ্রহণের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন, তার যোগ্যতা নির্ধারণে কমিশন বলেছে—এই ব্যক্তি হতে হবে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য, তবে রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বে লিপ্ত নন এবং বিগত ১০ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সদস্য ছিলেন না।

আলোচনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই কমিটির কার্যকারিতা থাকবে কি না। এ প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, “প্রাথমিকভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে এটি অব্যাহত রাখার প্রস্তাব ছিল, তবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মত দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই কমিটির প্রয়োজন নেই।” এ সময় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ কীভাবে হবে তা নিয়েও পরবর্তী আলোচনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সবশেষে আলী রীয়াজ জানান, আগামী ২ জুলাই পরবর্তী আলোচনার দিন ধার্য রয়েছে, যেখানে এই বিষয়গুলোর ওপর আরও বিস্তারিত মতবিনিময় হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিক (জুলাই... বিস্তারিত