অজানা এক অধ্যায়: সাকিব আল হাসানের অভিনয় ও সিনেমার বিঘ্ন

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ১০:২৯:১০
অজানা এক অধ্যায়: সাকিব আল হাসানের অভিনয় ও সিনেমার বিঘ্ন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দেশের সিনেমা জগতে অপ্রত্যাশিত এক অধ্যায় তৈরি করেছেন তিনি শুধুমাত্র খেলার মাঠের সেরা নন, অচেনা এক সময় সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন। তবে সেই অভিনয়ের খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই সাকিব তা সরাসরি অস্বীকার করেন এবং এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া ধুঁকতে থাকে।

গত এক যুগ আগে নির্মাতা ও প্রযোজক রাজিবুল হোসেন পরিচালিত ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ শিরোনামের সিনেমার শুটিং শুরু হয়। এ সিনেমার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শহরের পাঁচ তরুণ-তরুণীর বাস্তব জীবনকাহিনী। নির্মাণ চলাকালে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন সাকিব আল হাসান, যার শুটিং কিছু অংশ কক্সবাজারে সম্পন্ন হয়। নির্মাতা জানিয়েছেন, সাকিব ক্যামেরার সামনে নিয়মিত অভিনয় করেছেন, ক্ল্যাপস্টিক ব্যবহার করে দৃশ্যধারণও করা হয়েছে পেশাদারিত্বের সঙ্গে।

তবে শুটিংয়ের কিছু অংশ সাংবাদিকদের নজরে আসার পরই সাকিব আল হাসান বিষয়টি নাকচ করে দেন এবং আরও শুটিং বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এই আচরণ নির্মাতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাজিবুল হোসেন বলেন, “সাকিব আল হাসানের মিথ্যাচার শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি করেনি, বরং এটি শিল্পভিত্তিক কাজের প্রতি তাঁর অসন্মান হিসেবেও বিবেচিত।”

নির্মাতা জানান, সিনেমাটির প্রধান স্পন্সর ফুজিফিল্ম বাংলাদেশ ছিল, যেখানে সাকিব আল হাসান ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালন করতেন। ফুজিফিল্মের সঙ্গে তার একটি চুক্তি ছিল, যেখানে বছরে নির্দিষ্ট ৮ দিন তিনি তাদের জন্য সময় দেবেন। সিনেমার প্রজেক্ট শুরু হওয়ার সময় ফুজিফিল্মের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা নির্দিষ্ট অর্থায়ন করবে এবং সাকিব অভিনয় করবেন। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই শুটিং শুরু হয়।

তবে শুটিংয়ের পর সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়ে সাকিব প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেন, এরপর ফুজিফিল্ম সাকিবকে বাদ দিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করলেও শুটিংয়ের খবর ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তা সম্ভব হয় না। নির্মাতা নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে প্রজেক্ট বন্ধ করেন, যার ফলে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা লোকসান করেন।

নির্মাতা রাজিবুল হোসেন বলেন, “সাকিব কেন এমন আচরণ করলেন তা আমার জানা নেই। প্রথম লটে তার অভিনয় সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু খবর প্রকাশের পর তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সিনেমা সঠিকভাবে শেষ করার সব চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু যখন এমন অনৈতিক ও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন আর আগানো যায় না।”

সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্মাতা নিজেই এই অজানা ঘটনাটি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিনেমাটির অসমাপ্ত থাকা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে, তাই প্রকৃত কারণ সবাইকে জানানো দরকার। তিনি বলেন, “সিনেমাটি বন্ধ হওয়ার পেছনে কোনো পরিচালনাগত ত্রুটি নেই, বরং এটি একটি নৈতিক ও অনৈতিক ঘটনার ফল।”

ক্রিকেটের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাকিব আল হাসানের এই পদক্ষেপ এবং পরবর্তী আচরণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যেকোনো পেশাদার কাজের ক্ষেত্রে সম্মান ও নৈতিকতা বজায় রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাশাপাশি এটি সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের মনোবল ও দেশের বিনোদন ক্ষেত্রের গুণগত মানে প্রভাব ফেলে।

জাতীয় ক্রিকেট দলের মাইলফলক অভিনেতা সাকিব আল হাসানের অভিনয় নিয়ে এমন বিতর্কজনক ঘটনা দেশীয় সিনেমা জগতের জন্য এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে। নির্মাতা রাজিবুল হোসেনের দাবি ও অভিযোগ নতুন করে আলোচনার বিষয় হলেও, ভবিষ্যতে সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে সম্মান ও দায়িত্ববোধের সংমিশ্রণে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরদার হয়েছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ