শেয়ার বাজার

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৭:৩২:৩৮
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিক (জুলাই ২০২৪–মার্চ ২০২৫) পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১২টি কোম্পানি ক্যাশ ফ্লোতে শক্তিশালী উত্থান দেখিয়েছে, অন্যদিকে ৯টি কোম্পানির নগদ প্রবাহে হঠাৎ পতন দেখা গেছে।

এই উভয়মুখী প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের জন্য একদিকে যেমন সতর্ক সংকেত, অন্যদিকে কিছু কোম্পানির প্রতি আস্থা বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শক্তিশালী ফিরেছে ১২টি কোম্পানি

ডিএসই সূত্র অনুযায়ী, নিচের ১২টি কোম্পানি উল্লেখযোগ্য হারে তাদের ক্যাশ ফ্লো বাড়াতে সক্ষম হয়েছে:

কোম্পানিআগের বছরের ক্যাশ ফ্লো (Tk)চলতি বছরের ক্যাশ ফ্লো (Tk)পরিবর্তন (Tk)
মেঘনা পেট্রোলিয়াম -14.35 149.31 +163.66
ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস 0.71 57.68 +56.97
যমুনা অয়েল 16.66 88.26 +71.60
ইউনাইটেড পাওয়ার 7.65 15.17 +7.52
পাওয়ার গ্রিড 9.84 15.47 +5.63
তিতাস গ্যাস 3.31 14.02 +10.71
ডেসকো 1.99 8.98 +6.99
সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল 2.18 7.69 +5.51
সামিট পাওয়ার 7.05 7.23 +0.18
বারাকা পাওয়ার 0.67 4.37 +3.70
লুবরেফ বিডি 1.52 2.32 +0.80
লিন্ডে বিডি 3.22 3.80 +0.58

বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যার আগের বছর শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল নেতিবাচক ১৪.৩৫ টাকা, সেটি এ বছর দাঁড়িয়েছে ১৪৯.৩১ টাকায়। এটি খাতটির মধ্যে সর্বোচ্চ ও অন্যতম নজিরবিহীন ঘুরে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত। ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, যমুনা অয়েল ও ইউনাইটেড পাওয়ারের চমৎকার পারফরম্যান্সও বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

ধস নামল ৯টি কোম্পানিতেঅন্যদিকে, ৯টি কোম্পানি চলতি প্রান্তিকে আগের তুলনায় নগদ প্রবাহে লক্ষণীয় হারে হ্রাস দেখিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থানে রয়েছে পদ্মা অয়েল, যার শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো এ বছর হয়েছে -২৭.২১ টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল +৩.০৮ টাকা।

কোম্পানিআগের বছরের ক্যাশ ফ্লো (Tk)চলতি বছরের ক্যাশ ফ্লো (Tk)পরিবর্তন (Tk)
পদ্মা অয়েল 3.08 -27.21 -30.29
বারাকা পতেঙ্গা -1.78 -5.48 -3.70
ডরিন পাওয়ার 24.97 11.28 -13.69
শাহজীবাজার পাওয়ার 9.32 1.99 -7.33
এমজেএল বিডি 8.04 0.29 -7.75
খুলনা পাওয়ার 3.21 0.81 -2.40
এনার্জিপ্যাক 1.89 0.09 -1.80
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং 1.44 0.51 -0.93
জিবিবি পাওয়ার 3.08 0.14 -2.94

ডরিন পাওয়ার ও শাহজীবাজার পাওয়ারের মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির নগদ প্রবাহে এই ধরনের পতন বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের আগেও ক্যাশ ফ্লো নেতিবাচক ছিল, এবার তা আরও নিচে নেমেছে, যা কোম্পানিটির ঋণ পরিস্থিতি ও চলতি খরচের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

বিশ্লেষণ

সবচেয়ে আলোচিত ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ক্ষেত্রে। কোম্পানিটি যেখানে গত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দেখিয়েছিল নেতিবাচক ১৪.৩৫ টাকা, সেখানে এই বছর তা দাঁড়িয়েছে ১৪৯.৩১ টাকায়। এটি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ক্যাশ ফ্লোর ঘুরে দাঁড়ানোর এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একইভাবে, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, যমুনা অয়েল, ইউনাইটেড পাওয়ার, তিতাস গ্যাস, ডেসকো, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল ও সামিট পাওয়ার তাদের আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে নগদ প্রবাহ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চাহিদা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন এবং রাজস্ব সংগ্রহে গতিশীলতা।

অপরদিকে, ডরিন পাওয়ার, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, শাহজীবাজার পাওয়ার, এমজেএল বিডি, পদ্মা অয়েল, এনার্জিপ্যাক এবং খুলনা পাওয়ারের মতো খ্যাতিমান কোম্পানিগুলো এই প্রান্তিকে ক্যাশ ফ্লোতে হঠাৎ ধসের মুখে পড়েছে। সবচেয়ে হতাশাজনক তথ্য উঠে এসেছে পদ্মা অয়েলের ক্ষেত্রে, যেখানে আগের বছর শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৩.০৮ টাকা, এবার তা নেমে এসেছে মাইনাস ২৭.২১ টাকায়। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের নগদ প্রবাহ আগেও নেতিবাচক ছিল, এবার তা আরও খারাপ হয়েছে। এই পতনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণের চাপ, অপারেশনাল ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি।

এই বিপরীতমুখী চিত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়, খাতভিত্তিক ধারণার চেয়ে কোম্পানিভিত্তিক বিশ্লেষণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তথাপি প্রতিটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক পরিকল্পনা এবং ব্যবসার কাঠামো ক্যাশ ফ্লোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

এই প্রান্তিক চিত্রে একটি দিক স্পষ্ট—বাংলাদেশের শক্তি খাতে পুনঃসংগঠনের সময় এসেছে। দক্ষ পরিচালনা ও টেকসই আর্থিক কৌশলের মাধ্যমে যেসব কোম্পানি নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতের বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করবে। অন্যদিকে, যারা পুরনো ধারায় ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাবে, তাদের জন্য সামনে অস্থিরতা ও আর্থিক সংকট অনিবার্য।

সার্বিকভাবে, মার্চ ২০২৫ প্রান্তিকের এই ক্যাশ ফ্লো চিত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তই এখন সবচেয়ে জরুরি। সময় এসেছে মৌলিক বিশ্লেষণের, এবং এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগের, যারা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ওপর আরও নিবিড় নজর দেওয়া এবং কার্যকর নীতিমালা গ্রহণও জরুরি হয়ে উঠেছে, যাতে সামগ্রিকভাবে এই খাতটি অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ