আল-আকসায় ইহুদিদের নাচ-গানের অনুমতি!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১২:১৭:২৪
আল-আকসায় ইহুদিদের নাচ-গানের অনুমতি!

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গেভির প্রথমবারের মতো পবিত্র আল-আকসা মসজিদের চত্বরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নৃত্য, গান ও বাধাহীন চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এক স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে চ্যানেল সেভেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিও খবরটি তুলে ধরেছে।

নতুন এই সিদ্ধান্ত বেন-গেভির প্রণীত নিরাপত্তা নীতির আওতায় গৃহীত হয়েছে, যেখানে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি দর্শনার্থীদের ‘মুক্ত অংশগ্রহণের অধিকার’কে সামনে রেখে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। চ্যানেল সেভেন জানিয়েছে, তিন সপ্তাহ আগে একাধিক ইহুদি ধর্মীয় সংগঠন বেন-গেভিরের দপ্তরে গিয়ে আল-আকসায় প্রবেশাধিকার ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানায়। তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেন-গেভির বলেন, “আমি চাই, পুরো আল-আকসা চত্বরজুড়ে সঙ্গীতের ধ্বনি বেজে উঠুক।”

এই ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে ইহুদি দর্শনার্থীদের গান, নৃত্য এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে চত্বরজুড়ে চলাফেরায় কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে এই অনুমোদন পবিত্র স্থানটির ঐতিহ্য, ধর্মীয় ভারসাম্য এবং বহুদিন ধরে চলে আসা চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইতামার বেন-গেভির নিজেও একজন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী এবং ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী দল জিউইশ পাওয়ার পার্টির শীর্ষ নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত।

আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের চত্বর ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান, যেখানে প্রাথমিক যুগে মুসলিমরা কিবলা হিসেবে মুখ করে নামাজ পড়তেন। এটি মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় মর্যাদাপূর্ণ ও ঐতিহাসিকভাবে সংরক্ষিত স্থান। আল-আকসায় ইহুদি ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট ও আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেন-গেভিরের এই সিদ্ধান্ত শুধু মুসলিম বিশ্বের আবেগে আঘাত হানে না, বরং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের নতুন উত্তেজনার বীজও বপন করে। ইতোমধ্যে পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। যদিও ১৯৮০ সালে ইসরায়েল সমগ্র জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত অঞ্চল হিসেবেই বিবেচনা করে। এমন প্রেক্ষাপটে বেন-গেভিরের সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রাজনৈতিক সংঘাত উসকে দেওয়ার একটি স্পষ্ট প্ররোচনা হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল।

এই সিদ্ধান্ত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জাতিসংঘ, এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক চাপ আসন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আল-আকসা চত্বরকে ঘিরে ধর্মীয় উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, এবং এই ধরণের পদক্ষেপ একে আরও বিস্ফোরক করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ