ইন্দুরকানীতে নৃশংস হামলা, ইউপি সদস্য ও ভাবি খুন

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১০:৪৬:৫৯
ইন্দুরকানীতে নৃশংস হামলা, ইউপি সদস্য ও ভাবি খুন

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) এবং তার ভাবি মুকুল বেগম (৪৫) নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় শহিদুলের স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪২) গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার (২৭ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চর বলেশ্বর গ্রামের নিজ বাড়িতে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতের ওই সময় শহিদুল ইসলাম মোবাইলে কথা বলছিলেন। নেটওয়ার্ক সমস্যা হওয়ায় তিনি ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের পুকুরপাড়ে অবস্থান নেন। সেখানেই ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ করে। চিৎকার শুনে শহিদুলের ভাবি মুকুল বেগম এগিয়ে এলে তাকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয় বাড়ির উঠানে। পরে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম বাইরে আসলে তাকেও উপর্যুপরি কোপানো হয়।

প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তিনজনকেই উঠানে কাদাপানিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। শহিদুল ইসলাম ও তার ভাবি মুকুল বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রেহেনা বেগমকে প্রথমে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন।

নিহত শহিদুল ইসলাম চন্ডিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। তিনি পিরোজপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন। শহিদুলের বড় ভাই মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান হাওলাদার ছিলেন চন্ডিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং আরেক ভাই মনিরুজ্জামান সেলিম বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় এই পরিবারের সদস্যদের ওপর এমন ভয়াবহ হামলায় এলাকা জুড়ে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শহিদুল ইসলামের শ্যালক মিজান মাঝি জানান, সরকার পরিবর্তনের পর শহিদুলের বিরুদ্ধে তিনটি রাজনৈতিক মামলা হয়েছিল। তিনি কয়েক মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হামলার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে এখনো পরিবার এবং স্থানীয়রা দ্বিধান্বিত। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, পুরনো শত্রুতা কিংবা নির্বাচনী বিরোধ যেকোনো বিষয়ই হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মারুফ হোসেনসহ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয় এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

ওসি মারুফ হোসেন জানান, এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ও নির্মম। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দায়ীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

একই পরিবারের তিন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা ও আহত করার ঘটনাটি এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ ঘটনাকে গণতন্ত্র ও নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি আঘাত বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই হত্যাকাণ্ড শুধুই ব্যক্তি আক্রোশ নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র তা এখন তদন্তের বিষয়। তবে যাই হোক, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, দেশের রাজনৈতিক মাঠে প্রতিহিংসা ও সহিংসতা আজো ভয়াবহ রকমে বিরাজমান। দায়িত্বশীল তদন্ত ও বিচার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ