গাজা যুদ্ধ

গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেই মৃত্যুকূপ, জাতিসংঘের তীব্র নিন্দা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ০৯:৫২:০৪
গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেই মৃত্যুকূপ, জাতিসংঘের তীব্র নিন্দা

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডে ত্রাণ নিতে এসে শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) জাতিসংঘ, চিকিৎসা সংগঠন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাই এখন সাধারণ মানুষের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA)-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি টুইটারে লিখেছেন, “এই ত্রাণ ব্যবস্থাপনা এখন একটি হত্যাকাণ্ডের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। ক্ষুধার্ত মানুষ যখন তাদের পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে যান, তখনই গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন।” তিনি বলেন, “এই অমানবিকতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং জাতিসংঘের সহায়তা পুনরায় চালু করা উচিত।”

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত ৫০০-র বেশি মানুষ ত্রাণ কেন্দ্রের আশেপাশে প্রাণ হারিয়েছেন। একইসঙ্গে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “মানুষ শুধু খাবার জোগাড় করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। খাবারের খোঁজে যাওয়া কখনোই মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না।”

চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (MSF) নতুন ত্রাণ কেন্দ্র পরিচালনার পদ্ধতিকে “মানবিক সাহায্যের ছদ্মবেশে গণহত্যা” বলে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, গাজার নেতজারিম করিডোরে GHF পরিচালিত একটি বিতরণ কেন্দ্র চালুর সপ্তাহেই দেইর আল-বালাহ শহরের তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ রোগীর সংখ্যা ১৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েল সরকার এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ এক যৌথ বিবৃতিতে হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত সেনা কমান্ডারদের বিতর্কিত বক্তব্যকে “নির্লজ্জ মিথ্যাচার” বলে আখ্যা দেন। হারেৎজ জানিয়েছে, সেনা সদস্যদের অভিযোগ—তাদের ওপর নিরস্ত্র বেসামরিকদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ এসেছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আলাদা বিবৃতিতে জানায়, “ত্রাণ কেন্দ্রে আসা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি এবং সেনাদের দায়িত্ব হচ্ছে বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”

তবে গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় GHF পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রে ছয়জন নিহত হন এবং আরও তিনজন গাজার কেন্দ্রীয় অংশে ত্রাণ নেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গাজার উত্তরে একটি স্কুলে বোমা হামলায় আশ্রয় নেওয়া আটজন নিহত হন।

অন্যদিকে, হামাস ও প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালিয়েছে।

হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলায় ইসরায়েলের ১,২১৯ জন মানুষ নিহত হন, যার বেশিরভাগই বেসামরিক। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হলে এখন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৫৬,৩৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই সংখ্যা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।

-হাসানুজ্জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ