বাংলাদেশের যেসব পণ্যে নতুন করে আমদানি নিষেধাজ্ঞা ভারতের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ০৮:২৮:৫৮
বাংলাদেশের যেসব পণ্যে নতুন করে আমদানি নিষেধাজ্ঞা ভারতের

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের একতরফা নিষেধাজ্ঞায়। ২৭ জুন শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় জানায়, বাংলাদেশ থেকে পাট, বোনা কাপড় ও সুতার মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আর ভারতের কোনও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। এসব পণ্য এখন থেকে কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রের নাহভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চলমান ছোট ও মাঝারি বাণিজ্য কার্যত বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতে।

যেসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে

নতুন নির্দেশনায় যেসব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে

  • পাটজাত পণ্য
  • একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়
  • একক শণ সুতা
  • ব্লিচ না করা পাটের বোনা কাপড়
  • পাটের একক সুতা

এসব পণ্য এতদিন সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে সরবরাহ হতো। ফলে নতুন নিষেধাজ্ঞা সরাসরি এই অঞ্চলগুলোর বাণিজ্যিক চক্রে আঘাত হানতে পারে।

এর আগেও ভারত একই রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। গত মে মাসে স্থলপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি। তখনও জানানো হয়, এসব পোশাক কেবল নাহভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।

বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতের বাজারে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। স্থলবন্দর নিষিদ্ধ হওয়ায় এই খাতে পরিবহন ব্যয়, সময় ও আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন করে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের প্রতি একধরনের কৌশলগত দূরত্ব বজায় রাখছে।

বিশ্লেষকদের মতে, স্থলবন্দর বন্ধের মতো পদক্ষেপ কেবল বাণিজ্যিক নয় বরং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। এটি অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি প্রচেষ্টা।

নতুন আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানের উদ্দেশ্যে যে পণ্য রপ্তানি হয়, তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। তবে এসব পণ্য পুনরায় অন্য দেশে রপ্তানি করার অনুমতি থাকবে না।

এই ব্যতিক্রম মূলত একটি কৌশলগত বার্তা দেয়। ভারত চায় না যে বাংলাদেশি পণ্য সরাসরি তাদের বাজারে প্রবেশ করুক, তবে তৃতীয় দেশে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে তারা নমনীয়তা দেখাতে চায়।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ব্যবসায়ী সংগঠন ও রপ্তানিকারক মহলে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে পাট ও গার্মেন্টস শিল্পে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। স্থানীয় রপ্তানিকারকরা বলছেন, স্থলবন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে পণ্য পাঠানো সম্ভব হলেও এখন তাদের দীর্ঘ সমুদ্রপথে যেতে হবে, যা সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত কেবল বাণিজ্যিক এক নীতি নয় বরং তা কৌশলগত ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিবেচ্য। সীমান্তবর্তী বাণিজ্য বন্ধ করা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের নিজস্ব ব্যবসায়ী শ্রেণির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ