ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানের অভ্যন্তর থেকেই ইরানে হামলা, যুদ্ধের পেছনের গোপন অভিযান ফাঁস

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ০৮:১২:২৯
ইরানের অভ্যন্তর থেকেই ইরানে হামলা, যুদ্ধের পেছনের গোপন অভিযান ফাঁস

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থনে, সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে যে ১২ দিনব্যাপী যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, তা ছিল শুধু আকাশপথ বা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে নয় বরং এই হামলার একটি বড় অংশ সংঘটিত হয়েছে ইরানের অভ্যন্তর থেকেই। গোপন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই অভিযান এখনো আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে।

যুদ্ধ শুরু হয় ১৩ জুন ভোররাতে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং মোসাদ একযোগে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করার পাশাপাশি ইরানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে হামলা পরিচালনা করে।

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু ফুটেজ প্রকাশ করে, যেগুলো স্পষ্টত রাতের আঁধারে ধারণকৃত এবং অজ্ঞাত ইরানি লোকেশন থেকে নেওয়া।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মোসাদ সদস্যরা মরুভূমিসদৃশ এলাকায় ট্যাকটিক্যাল গিয়ারে সজ্জিত অবস্থায়, নৈশ দৃষ্টিসম্পন্ন চশমা পরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা এমন অস্ত্র মোতায়েন করেন, যা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল যার ফলে আকাশপথে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সহজেই ঢুকতে সক্ষম হয়।

উল্লেখযোগ্য ফুটেজগুলোতে আরও দেখা যায়, অতি ক্ষুদ্র কিন্তু উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রজেক্টাইল (ক্ষেপণাস্ত্র) ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো ছিল ইসরায়েলি তৈরি 'স্পাইক' ক্ষেপণাস্ত্র ছোট ও অ্যান্টি-আর্মার শ্রেণির অস্ত্র, যা জিপিএস ও ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত এবং সরাসরি চোখের আড়ালে থাকা লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।

ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে বিভিন্ন উন্মুক্ত এলাকায়।

তারা দাবি করে, এই অস্ত্রগুলো ছিল সম্পূর্ণভাবে রিমোট কন্ট্রোলড এবং ইন্টারনেটভিত্তিক অটোমেশন প্রযুক্তিতে চালিত। ইরান এসব অস্ত্র পরিচালনাকারীদের "সন্ত্রাসী মোসাদ এজেন্ট" হিসেবে অভিহিত করেছে।

এই অভ্যন্তরীণ অভিযান অনেকাংশেই স্মরণ করিয়ে দেয় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সংঘটিত মোসাদের আরেক অপারেশন যেখানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছিল।

সেই সময় তেহরান শহরের কাছেই এক গাড়িবহরে থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইরান জানিয়েছিল, হামলাটি করা হয়েছিল রিমোট কন্ট্রোল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত এক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে, যা ছিল একটি পিকআপ ট্রাকে বসানো। পরে সেই ট্রাকটি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

ফাখরিজাদেহ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বুধবার ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে তিনজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ইরানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এদের বিরুদ্ধে ফাখরিজাদেহ ছাড়াও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে।

এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আধুনিক যুদ্ধ কেবল সামরিক বাহিনীর হাতেই সীমাবদ্ধ নেই এটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র এবং সুপরিকল্পিত গুপ্তচরবৃত্তির সমন্বয়ে এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।

ইসরায়েল ও মোসাদের এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান ইঙ্গিত করে, তাদের লক্ষ্য কেবল আকাশ বা সীমান্তে নয় বরং শত্রুর কেন্দ্রস্থলেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযান শুধু একটি যুদ্ধ নয় বরং এক অভ্যন্তরীণ তাত্ত্বিক শক্তির বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন।

সূত্র: আল জাজিরা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ