সবুজ পাতায় নেই আর হাসি, কুমিল্লার পানচাষিদের দিন এখন কেবল হতাশায় মোড়া

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১১:৫০:১০
সবুজ পাতায় নেই আর হাসি, কুমিল্লার পানচাষিদের দিন এখন কেবল হতাশায় মোড়া

একসময় কুমিল্লায় গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ ছিল পানচাষ। বিশেষ করে চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বরুড়া ও বুড়িচং উপজেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হতো সম্ভাবনাময় এই অর্থকরী ফসল। কিন্তু দিন দিন সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় পানচাষ কমে এসেছে উদ্বেগজনক হারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এক বছর আগেও জেলায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হতো। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০ হেক্টরে। মাঠপর্যায়ের কৃষকরা বলছেন—পোকামাকড়, রোগবালাই, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, লাভের অনুপাতে আয় কমে যাওয়া এবং কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা।

দেবিদ্বারের গুনাইঘর ও চান্দিনার হারং গ্রামের সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে—পানচাষিরা এখনো নানা কষ্টে পান বরজ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কেউ বাঁশের খুঁটিতে পানগাছ বেঁধে দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, আবার কেউ তোলা পাতা নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। সবুজ পানের ঝুলন্ত পাতায় এখনো সৌন্দর্যের ছোঁয়া থাকলেও, কৃষকের চোখে তা কেবল ক্লান্তি আর ক্ষতির প্রতিচ্ছবি।

স্থানীয় কৃষক অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন,

“পানগাছে প্রচুর পঁচন ধরছে। কী ওষুধ ব্যবহার করব, সে পরামর্শ পাই না। এত খরচ করে পান উৎপাদন করি, কিন্তু বাজারে দাম মেলে না। কৃষি অফিস থেকেও কেউ খোঁজ নেয় না।”

৪০ বছরের অভিজ্ঞ পানচাষি নেপাল বলেন,

“আমাদের বাপ-দাদার সময় এই চাষ থেকে পরিবার চলত। এখন খরচের তুলনায় লাভ হয় না বললেই চলে। অনেকে পেশা বদলে নিচ্ছেন।”

আরেক চাষি নিখিল চন্দ্রের প্রশ্ন,

“ধান-গমের চাষিরা সরকার থেকে প্রণোদনা পান, বিনা মূল্যে বীজ ও সার পান, কিন্তু আমরা পানচাষিরা কিছুই পাই না। কেন এই বৈষম্য?”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন,

“আমরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। তবে পানচাষিদের জন্য আলাদা কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”

অর্থনীতিবিদ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন,

“উৎপাদনশীল খাতে কৃষকদের অংশগ্রহণ অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই খাত থেকে যদি কৃষকেরা সরে দাঁড়ান, তাহলে বেকারত্ব বাড়বে এবং অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এই বাস্তবতায় কৃষকদের একটাই প্রত্যাশা—“যদি পানচাষকে বাঁচাতে হয়, তবে চাই পরিকল্পিত উদ্যোগ, প্রণোদনা আর পরামর্শ।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ