দীর্ঘ পতনের পরে শেয়ারবাজারে ফিরল স্বস্তি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ০৯:৫৫:২০
দীর্ঘ পতনের পরে শেয়ারবাজারে ফিরল স্বস্তি

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার দেশের উভয় শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূচক ও লেনদেনের উত্থানে লেনদেন শেষ করে। মূলধারার সূচক ডিএসইএক্স ৬৫.১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৮৩২.৮৩ পয়েন্টে, যা সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক ধাপ অতিক্রম করেছে।

বাজারে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। বাজারের পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ এবং কিছু কোম্পানির আর্থিক অগ্রগতির ইতিবাচক বার্তা সব মিলিয়ে এই উত্থানকে অনেকে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত বলে মনে করছেন।

৭টি খাতে ১০০% দর বৃদ্ধি: বাজারে বিরল ইতিবাচক দৃশ্য

বৃহস্পতিবারের লেনদেনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ৭টি খাতে থাকা সব কোম্পানিরই শেয়ারদর বেড়েছে। ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সিমেন্ট, সিরামিক, প্রকৌশল, সেবা, চামড়া, টেলিকমিউনিকেশন ও ভ্রমণ ও অবকাশ এই সাত খাতে একটিও কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়নি।

এমন চিত্র একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের মনোবল বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বাজারে সমন্বিত আস্থার ইঙ্গিত দিয়েছে।

প্রকৌশল খাত: হল্টেড কোম্পানিতে চাহিদা তুঙ্গে

প্রকৌশল খাতের পারফরম্যান্স ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। খাতটির ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ৩৯টির দর বেড়েছে এবং ৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল।ইয়াকিন পলিমার ৯.৬৮ শতাংশ বাড়তি দর নিয়ে বিক্রেতা সংকটে হল্টেড হয়।অ্যাটলাস বাংলাদেশ ও ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড দু'টিই ৯ শতাংশের বেশি বাড়তি দর নিয়ে লেনদেন শেষ করে।

প্রকৌশল খাতে বিক্রেতা সংকটের এই চিত্র স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এই খাতে দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছে।

সিমেন্ট খাত: শতভাগ কোম্পানির দরবৃদ্ধি

সিমেন্ট খাতের ৭টি কোম্পানির সবকটিই দিনশেষে দরবৃদ্ধির মাধ্যমে লেনদেন শেষ করে।হাইডেলবার্গ সিমেন্ট প্রায় ৪.১৪ শতাংশ বেড়ে ২২৩.৫০ টাকায় উঠে আসে।ক্রাউন সিমেন্ট এবং আরামিট সিমেন্ট যথাক্রমে ৩.৩৫ ও ২.৫০ শতাংশ বাড়ে।

সিমেন্ট খাত সাধারণত অবকাঠামো ও নির্মাণ খাতের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় এ খাতের উত্থান অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধিরও প্রতিফলন হতে পারে।

সিরামিক খাত: ধারাবাহিক উন্নতির পথচলা

সিরামিক খাতের ৫টি কোম্পানির সবগুলোরই শেয়ারদর বেড়েছে।মুন্নু সিরামিকস ২.৪৩% বেড়ে ছিল শীর্ষে।স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস ও ফু-ওয়াং সিরামিকস যথাক্রমে ২.৩৪% ও ১.৬০% বাড়ে।

সিরামিক খাতে এমন স্থিতিশীল উন্নয়ন দেশের হাউজিং খাতের সক্রিয়তা এবং মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার চিত্র তুলে ধরে।

চামড়া খাতের ৬টি কোম্পানির সবগুলোরই দরবৃদ্ধি ছিল চোখে পড়ার মতো।লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ৯.৯৪% বেড়ে বিক্রেতা সংকটে হল্টেড হয়।ফরচুন সুজ ও সমতা লেদার যথাক্রমে ২.৭৮% ও ২.৩২% বেড়েছে।

ঈদ ও উৎসব সামনে থাকায় চামড়াশিল্পে পণ্য চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাসে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে পারে।

টেলিকম খাত: গ্রামীণফোনের দাপট

গ্রামীণফোন ৬.৯০ টাকার বা ২.৩৩% দরবৃদ্ধি নিয়ে খাতটির নেতৃত্ব দেয়।বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস ৩.৯৭% এবং রবি আজিয়াটা ১.৬৬% বেড়ে লেনদেন শেষ করে।

টেলিকম খাতে এই উত্থান প্রযুক্তিখাতের প্রসারের সম্ভাবনা এবং ডিজিটালাইজেশনকে ইঙ্গিত করতে পারে।

সেবা ও আবাসন খাত: ধীরগতির উল্লম্ফন

এই খাতের ৪টি কোম্পানির মধ্যে ২টির দর বেড়েছে এবং ২টি অপরিবর্তিত ছিল।সাইফ পাওয়ারটেক ও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট যথাক্রমে ১.৪৩% ও ০.৯৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।

এটি ইঙ্গিত দেয়, এই খাতে এখনও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে, যদিও গতি তুলনামূলক ধীর।

ভ্রমণ ও অবকাশ: সি পার্লের বিস্ফোরণ

৫টি কোম্পানির মধ্যে ৪টি লেনদেনে অংশ নেয়, যার মধ্যে ৩টিরই দর বেড়েছে।সি পার্ল হোটেল ৫.১৭% বেড়ে চমক দেখায়।পেনিনসুলা ও ইউনিক হোটেল যথাক্রমে ২.৮৬% ও ১.৯৯% বেড়ে অবস্থান নেয়।

আসন্ন পর্যটন মৌসুম ও অভ্যন্তরীণ ভ্রমণবৃদ্ধির প্রত্যাশা এ খাতের শেয়ারে ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি করেছে।

বৃহস্পতিবারের উত্থান বাজারে এক প্রকার "মনোবল পুনর্জন্মের দিন" হয়ে উঠেছে।৭টি খাতের ১০০% কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি শুধুমাত্র সংখ্যার খেলা নয় এটি বাজারের গভীর মনস্তাত্ত্বিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাজারে নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

সপ্তাহ শেষে এমন একটি লেনদেন-চিত্র নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। তবে বাজারে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা আনতে হলে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিক (জুলাই... বিস্তারিত