আনিসার জন্য খুলতে পারে পরীক্ষার দরজা!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ০৯:১৩:৫০
আনিসার জন্য খুলতে পারে পরীক্ষার দরজা!

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে বড় এক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। কঠোর নিয়ম, নিষ্ঠুর বাস্তবতা ও মানবিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদ তার প্রথম পরীক্ষাটিই দিতে পারলেন না কেবল সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে না পারার কারণে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পরীক্ষার দিন সকালে আনিসার মা স্ট্রোক করেন। পরিবারের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে হাসপাতালে মাকে ভর্তি করানোর দায়িত্ব নেয় মেয়েটিই। এই করুণ বাস্তবতায় পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে তার বিলম্ব হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা। কিন্তু কেন্দ্রে আসার পরও তাকে হলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কড়া নিয়মের ব্যাখ্যায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়ে দেন, "পরীক্ষার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে কোনোভাবেই প্রবেশ সম্ভব নয়।"

কান্নাভেজা মুখে কেন্দ্রের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আনিসার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হাজারো মানুষ আবেগে, ক্ষোভে এবং হতাশায় প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন এই মেয়েটি কি শখ করে লেট করেছে? তার অবস্থান কি সত্যিই শাস্তির ছিল, না মানবিক সহানুভূতির দাবি রাখে?

এক অভিভাবক বললেন, "একজন পরীক্ষার্থীর চেষ্টা দেখেই বোঝা যায়, সে দায়িত্বশীল। এমন দুর্যোগেও সে কেন্দ্র পর্যন্ত এসেছে এটাই তার অদম্য মানসিকতার প্রমাণ। নিয়মের বাইরে গিয়েও তাকে সুযোগ দেওয়া যেত।"

তবে ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল রাতেই তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে আনিসার বিষয়ে আশাব্যঞ্জক খবর দেন। তিনি জানান, আনিসার কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান, আনিসার অসুস্থ মা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তিনি আইনগত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, "২০০০ সালে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৩২ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার অনুমতি নিয়ে যেভাবে আইনি পদক্ষেপ হয়েছিল, সেই নজির আনিসার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যাবে। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ড মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি বিবেচনা করবে যাতে তাকে আদালতের দ্বারস্থ না হতে হয়।"

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে এক ধরনের সোচ্চার মানবিক সাড়া দেখা গেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নিয়ম কি এতটাই শক্ত যে তা জীবন-সংকটের মতো পরিস্থিতিকেও অগ্রাহ্য করে? পরীক্ষা সময়মতো দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও বড় কি মানবিকতা নয়?

একজন শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেছেন, "একজন পরীক্ষার্থীর পরিবারে বিপর্যয় ঘটলে তা তার শৃঙ্খলা নয়, সহানুভূতির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হয়। শিক্ষা শুধু নম্বরের নয়, মূল্যবোধেরও।"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা বোর্ডের নিয়মে “ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি” বিবেচনার সুযোগ থাকা উচিত। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বোর্ড, কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ মিলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আনিসার মতো শিক্ষার্থী ভবিষ্যতের জন্য বাধাগ্রস্ত হতেন না।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আনিসার কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বোর্ডের বিশেষ অনুমোদন মিললে হয়তো এই ছাত্রীকে পরীক্ষাটি আলাদাভাবে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। আইনজীবী কাজল জানিয়েছেন, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের সহায়তা নেওয়া হবে।

আনিসার ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষাব্যবস্থা শুধু নিয়মে চলে না তার চালিকাশক্তি হওয়া উচিত মানবিকতা ও বিবেচনা। একটি মেয়ে, যার বাবা নেই, মা স্ট্রোকে আক্রান্ত, সেই সংকটে থেকেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য কেন্দ্র পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে এই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল আমাদের। এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা বোর্ড এই ‘মানবিক ব্যতিক্রম’-কে কীভাবে বিবেচনা করে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিক (জুলাই... বিস্তারিত