লুঙ্গি বিক্রেতা থেকে সফল মাছচাষি: আমিরের জয়ের গল্প

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ০৮:৩৩:৫৬
লুঙ্গি বিক্রেতা থেকে সফল মাছচাষি: আমিরের জয়ের গল্প

পাবনার হুরাসাগর নদে প্রবহমান জলে খাঁচায় মাছ চাষ এখন একটি সফল বিকল্প পেশা হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য। একসময় লুঙ্গি ও গামছার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা থেকে ফিরে এসে এ চাষপদ্ধতির মাধ্যমে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন আমির আলী নামে এক প্রগতিশীল উদ্যোক্তা।

সুজানগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী বেড়াতে গিয়ে বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদে খাঁচায় মাছ চাষ দেখে মুগ্ধ হন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর নতুন জীবনের যাত্রা। বিষয়টি ভালোভাবে শিখতে প্রশিক্ষণ নেন, পরে নদীর পাশে বৃশালিখা মহল্লায় প্রথমে ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০-এ।

আমির আলী বলেন, “প্রতি খাঁচায় ৫০০টি করে ৩০০ গ্রামের মাছ ছাড়ি। মাত্র দুই মাসে এরা এক কেজি ওজনের হয়। খরচ তুলনামূলক কম, লাভ বেশি—তাই খাঁচার সংখ্যা ক্রমেই বাড়াচ্ছি।”

এই উদ্যোগ শুধু আমির আলীর একার নয়। ২০২৩ সালে বেড়া পৌরসভার বৃশালিখা মহল্লায় ২০ জন হতদরিদ্র সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় ‘মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পিপিডি (Programs for People’s Development)-এর কারিগরি সহায়তা ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF)-এর আর্থিক সহযোগিতায় তাঁরা শুরু করেন মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাঁচা চাষ।

প্রথমে মাত্র ২০টি খাঁচায় চাষ শুরু হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-এ। পরিকল্পনা রয়েছে শিগগিরই খাঁচার সংখ্যা ১০০-এ উন্নীত করার।

সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মুন্নাফ বলেন, “প্রথমে ভাবিনি এত দ্রুত সফল হব। এখন নিজেরাই পোনা উৎপাদন করছি ও বিক্রি করছি। লাভও বেড়েছে বহুগুণ।”

চাষিরা জানাচ্ছেন, নদীর প্রবহমান জলে মাছ তুলনামূলক দ্রুত বাড়ে এবং রোগবালাইও কম হয়। নদীর প্রাকৃতিক খাবারেই মাছ বড় হয়ে ওঠে, ফলে খাদ্য খরচও কমে যায়। খরচ কম হলেও উৎপাদন উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি খাঁচা থেকে বছরে গড়ে ৬০০ কেজি মাছ পাওয়া যায়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১১ হাজার টাকা (প্রতি কেজি ১৮০ টাকা ধরে)।

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক উদ্যোক্তা বলেন, “নদীর মাছের স্বাদ ভালো, চাহিদাও বেশি। এজন্য বাজারে দামও বেশি পাওয়া যায়।

প্রথমদিকে পোনা বাইরে থেকে আনতে হতো, এতে খরচ এবং ঝুঁকি উভয়ই বেশি ছিল। বর্তমানে সমবায়ের সদস্যরাই খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা তৈরি করছেন। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এসব পোনা বাজারে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কেউ কেউ নিজের খাঁচায় ব্যবহারের জন্যও পোনা উৎপাদন করছেন। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে এসেছে এবং লাভের পরিমাণ বেড়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত