ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

হুমকির মুখে হরমুজ প্রণালী, দিক বদলালো দুই সুপারট্যাংকার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১৩:১৫:৪১
হুমকির মুখে হরমুজ প্রণালী, দিক বদলালো দুই সুপারট্যাংকার

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা যখন ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে, ঠিক সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ হরমুজ প্রণালীতে অস্বাভাবিক গতিবিধি দেখা গেছে। ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর পরিস্থিতির চরম উত্তেজনার মধ্যে দুটি বিশালাকৃতির খালি সুপারট্যাংকার আকস্মিকভাবে গন্তব্য পরিবর্তন করে ফিরে যায়, যা আন্তর্জাতিক জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

সোমবার (২৩ জুন) ব্লুমবার্গ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কসউইজডম লেক’ ও ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামের সুপারট্যাংকার দুটি রবিবার হরমুজ প্রণালীতে প্রবেশের পর হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে। আলজাজিরাও তাদের প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করে উল্লেখ করেছে, এই ট্যাংকার দুটি প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহনে সক্ষম হলেও বর্তমানে খালি ছিল।

জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই দুটি ট্যাংকারের আকস্মিক দিক পরিবর্তনকে একটি "প্রাথমিক পুনঃপথ-পরিকল্পনার ইঙ্গিত" হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ব্লুমবার্গের মতে, এমন সিদ্ধান্ত সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী দিয়ে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে এই অঞ্চলে সামান্য অস্থিরতাও তেলের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (EIA) হরমুজ প্রণালীকে "বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল ট্রানজিট চোকপয়েন্ট" হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই প্রণালীর মাধ্যমেই সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করা হয়। এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য হরমুজ প্রণালী একটি জীবনরেখার মতো।

এর আগে ইরান একাধিকবার সরাসরি হুমকি দিয়েছিল যে, যদি তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় বা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়, তবে তারা প্রয়োজনে এই প্রণালী "সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেবে"। বিশেষজ্ঞরা একে "জ্বালানি যুদ্ধের সম্ভাব্য সূচনা বিন্দু" হিসেবে দেখছেন।

জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ী ও ট্যাংকার মালিকরা এখন গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছেন। বর্তমানে তারা ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশেষ করে এই উত্তেজনা চলমান থাকলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হতে পারে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ, প্রণালীটি বন্ধ হলে কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেই বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয় এবং হরমুজ প্রণালীতে নিরাপদ নৌ চলাচল ব্যাহত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে বাজারে তেল সরবরাহের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করতে পারে।

হরমুজ প্রণালীর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, জ্বালানি সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্যের ওপর একটি গুরুতর বার্তা বহন করছে। সুপারট্যাংকারগুলোর আকস্মিক ইউ-টার্ন শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বৈশ্বিক বাজারকে যে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তার একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ