মধ্যস্থতার নামে চাঁদাবাজিঃ জাবিতে বাস ছাড়ে গোপন ভূমিকা কার?

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১১:১০:৩৬
মধ্যস্থতার নামে চাঁদাবাজিঃ জাবিতে বাস ছাড়ে গোপন ভূমিকা কার?

সত্য নিউজ: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী নীলাচল পরিবহনের নয়টি বাস আটক এবং পরে ছাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তৈরি হয়েছে অস্বচ্ছতা ও বিতর্ক। হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনায় ‘মধ্যস্থতার নামে চাঁদাবাজি’র অভিযোগ উঠেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বিব্রত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান (হিরন) হাফ ভাড়া না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের কয়েকজন আবাসিক ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে বাসগুলো আটকে দেন। প্রায় আট ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে এখানেই থেমে থাকেনি বিতর্ক। প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসচালকদের বরাতে জানা গেছে, বাস ছাড়াতে গিয়ে পরিবহন চেকার মো. ফয়সাল ক্যাম্পাসে প্রবেশের আগে বাসগুলোর কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন এবং সেটি ‘সমাধান খরচ’ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা বলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই অর্থ আদায়ের বিষয়টি গোপনে মীমাংসার চেষ্টা করেন বাস প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ফয়সালসহ নীলাচলের প্রতিনিধিরা শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সেখান থেকে হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এতে পরিস্থিতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। ঘটনায় একাধিক পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং অস্পষ্ট আর্থিক লেনদেনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বাস কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে না জানিয়ে নিজ উদ্যোগে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।”

অন্যদিকে চেকার ফয়সালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ছাত্রদলের নবীনুর রহমান বলেন, “পরিচিত একজন বাস প্রতিনিধির অনুরোধে আমি মধ্যস্থতায় সহায়তা করি। কিন্তু কোনো টাকার লেনদেনে আমি জড়িত নই।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থাপনার ওপর শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক পক্ষের সম্পৃক্ততা—দুটি বিষয়ই নতুন করে নজরে এসেছে। প্রশাসনের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আজ (সোমবার) বাস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ