ওআইসি সম্মেলন ২০২৫

ওআইসি সম্মেলনে ইসরায়েলের আগ্রাসন, রোহিঙ্গা সংকট ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারে বাংলাদেশের শক্ত বার্তা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১০:২১:২১
ওআইসি সম্মেলনে ইসরায়েলের আগ্রাসন, রোহিঙ্গা সংকট ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারে বাংলাদেশের শক্ত বার্তা

ইস্তাম্বুলে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের বিদেশবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট ভাষায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরানে হামলা ও গাজায় চলমান আগ্রাসনকে অবৈধ ও অমানবিক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তেলআবিবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এই ধরনের উস্কানিমূলক হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ও কূটনৈতিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করতে।”

তিনি ইরানে হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এ ধরনের বেপরোয়া কার্যকলাপ গোটা অঞ্চল ও বিশ্বশান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।”

গাজায় গণহত্যা ও দখলদারির নিন্দা

গাজায় ইসরায়েলি হামলার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ৬০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলমান। এটি একটি গণহত্যার উদাহরণ।” তিনি বলেন, এই আগ্রাসনে নিরীহ মানুষের মৃত্যু, বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।

তিনি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক টেকসই সমাধানের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান জরুরি

উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট আর সহনীয় নয়। এটি একটি নিরাপত্তা হুমকির উৎস হতে পারে।” তিনি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মত দেন।

তিনি মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি আইসিজে-তে মামলায় ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব ভাগাভাগির আহ্বান জানান।

ইসলামভীতি, জলবায়ু সংকট ও উন্নয়নেও বাংলাদেশের আহ্বান

তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক ১৫ মার্চকে ইসলামভীতি প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় স্বাগত জানান এবং বলেন, “ওআইসি’র উচিত যৌথ আইনি, শিক্ষাগত ও গণমাধ্যমভিত্তিক কৌশলে ঘৃণা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেওয়া।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে তিনি ‘OIC Climate Resilience Initiative’ চালু করার প্রস্তাব দেন এবং তরুণদের সম্পৃক্ত করতে একটি ‘OIC Innovation Network’ গঠনের আহ্বান জানান।

তিনি চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল অর্থনীতি ও কর্মদক্ষতা উন্নয়নে যৌথ বিনিয়োগে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ওআইসি সম্পর্ক

তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ ও জনগণকেন্দ্রিক রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নেতৃত্বে আছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই রূপান্তরে ওআইসি সদস্যদের সহমর্মিতা ও সংহতি কামনা করেন।

তিনি বাংলাদেশের ওআইসি দুর্নীতি বিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষর, শ্রম কেন্দ্র সংবিধানে অংশগ্রহণ ও ওআইসিতে স্থায়ী মিশন স্থাপনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

শেষে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ওআইসি যেন শুধু নীতির সংগঠন না হয়ে একটি কার্যকর, ন্যায়ভিত্তিক ও ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে, এটাই আমাদের চাওয়া।”

ইমরান হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত