সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপির তীব্র মতানৈক্যর নেপথ্যে যা থাকছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৬:২২:৫২
সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপির তীব্র মতানৈক্যর নেপথ্যে যা থাকছে

নির্বাচনের সময়কাল, সরকারের নিরপেক্ষতা ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে চলমান অনিশ্চয়তা ও দ্বন্দ্ব কিছুটা প্রশমিত হলেও, সামগ্রিক রাজনীতিতে জটিলতা কমেনি। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির হাইকম্যান্ডের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ পরবর্তী পরিস্থিতি আংশিক আশাব্যঞ্জক মনে হলেও, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংস্কার প্রক্রিয়া ঘিরে একাধিক দিক থেকে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট কিছুটা নিরসন হলেও, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য ছোট দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ইস্যুতে তীব্র মতানৈক্য রয়ে গেছে। এর ফলে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বহুবার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ স্বাভাবিক হলেও মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো। তবে বাস্তবতা হলো, সংবিধানের কাঠামো, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিংবা সাংবিধানিক সংস্থা গঠনের মতো ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি একমত নয়।

বহু দল ঐকমত্য কমিশনের ‘একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’ এই প্রস্তাব সমর্থন করলেও বিএনপি এতে দ্বিমত পোষণ করছে। তাদের প্রস্তাব, দুই মেয়াদের পর একটি ‘গ্যাপ’ রেখে ব্যক্তির তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণের চাহিদা থাকলে ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রয়োজন দেখা দিলে তৃতীয়বারের সুযোগ থাকা উচিত।

অন্যদিকে, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা মনে করেন, একই ব্যক্তি বারবার ক্ষমতায় এলে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ঝুঁকি বাড়বে এবং অতীত আন্দোলনের আত্মত্যাগ নিষ্ফল হবে।

সংস্কার বাস্তবায়নের সময় নিয়েও মতানৈক্য প্রকট। জামায়াত ও এনসিপি চায়, নির্বাচনের আগেই মৌলিক সংস্কারগুলো কার্যকর হোক তারা বলছে, না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ঝুলে যাবে। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, অধ্যাদেশ জারি করেও এসব বাস্তবায়ন সম্ভব। এই সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের আগে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে না।

সংবিধান সংশোধন হবে, না কি পুরোপুরি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হবে এই প্রশ্নেও বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি ও জামায়াত সংশোধনের পক্ষে থাকলেও এনসিপি চায় নতুন সংবিধান। তাদের দাবি, সংশোধনমূলক সংবিধান ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আবারও বাতিল হতে পারে যেমনটি অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ক্ষেত্রে ঘটেছে।

বিএনপি বলছে, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়েই ‘জুলাই সনদ’ হবে। বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় জনমত যাচাই করে পরে বাস্তবায়ন করবে। বিএনপির যুক্তি, সবার সঙ্গে সব ইস্যুতে একমত হওয়া সম্ভব নয়, তবে মৌলিক বিষয়ে সহমত তৈরির প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

তবে এনসিপি ও জামায়াত বলছে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ রেখে ঐকমত্য হলে তা রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের লক্ষ্যে যথেষ্ট হবে না। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া জুলাই সনদ তাদের কাছে অর্থবহ নয়।

জামায়াত মনে করে, যেসব ইস্যুতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলোর মীমাংসা হতে পারে গণভোটের মাধ্যমে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, মৌলিক ইস্যুগুলো ফেলে রাখা যাবে না। জনগণের রায়ের মাধ্যমেই এগুলোর স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ আশাবাদী। তিনি বলছেন, “আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারি না, তবে যদি দলগুলো কিছুটা ছাড় দেয়, তবে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন সম্ভব হবে।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত