শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৪:০২:০৫
শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টি ব্যাংক ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র বলছে, এই প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে দেখা গেছে মিশ্র পারফরম্যান্স।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭টি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে। বিপরীতে ১৬টি ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে, একটি ব্যাংকের আয় অপরিবর্তিত রয়েছে। বাকি ৩টি ব্যাংক এখনো প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের

এই প্রান্তিকে যেসব ব্যাংকের ইপিএস উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বা লোকসানে পড়েছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটি জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ২ টাকা ৮৫ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ১২ পয়সা মুনাফা।

আইএফআইসি ব্যাংক লোকসান করেছে ২ টাকা ৬০ পয়সা, যেখানে গত বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২১ পয়সা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও ব্যাপক লোকসানে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ৪ টাকা ৭৬ পয়সা, আগের বছরের ৩০ পয়সা ইপিএসের তুলনায় এটি বড় ধাক্কা।

এছাড়া মুনাফা কমেছে আরও অনেক ব্যাংকের। যেমন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা ৪৬ পয়সা থেকে কমে ১ টাকা ১ পয়সা হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের আয় ২৪ পয়সা থেকে কমে ২১ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ইউসিবি, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ আরও একাধিক ব্যাংকের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে একটি ব্যাংকের আয়

প্রথম প্রান্তিকে কেবল সিটি ব্যাংক আগের বছরের মতো একই অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকটির জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ সময়ের ইপিএস ছিল ৬৮ পয়সা, যা ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকেও একই ছিল।

যারা এখনও প্রতিবেদন দেয়নি

এই প্রতিবেদন প্রণয়নের সময় পর্যন্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন জমা দেয়নি বা প্রকাশ করেনি।

পরিস্থিতির বিশ্লেষণ

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মুনাফা কমার কারণ হিসেবে উচ্চ ঋণ বিতরণ ঝুঁকি, অবমূল্যায়িত ঋণ, সুদবাজারের চাপে আয় কমে যাওয়া এবং অপারেশনাল খরচ বেড়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কিছু ব্যাংকে অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার বিষয়টিও বারবার আলোচনায় এসেছে।

অন্যদিকে যেসব ব্যাংক আয় বাড়াতে পেরেছে, তারা তুলনামূলকভাবে সুপরিকল্পিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা

বিনিয়োগকারীদের জন্য এই পরিসংখ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক বার্তা। যেসব ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে লোকসান করছে, সেখানে বিনিয়োগের আগে আরও বেশি বিশ্লেষণ ও সতর্কতা দরকার। অন্যদিকে, যেসব ব্যাংক আয় ধরে রেখেছে বা বাড়াতে পেরেছে, তারা বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই মিশ্রচিত্র ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি-র পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি আরও শক্তিশালী করা জরুরি। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করাও এখন সময়ের দাবি।

প্রথম প্রান্তিকের এই পারফরম্যান্স পুরো ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা এক দিক থেকে চিত্রিত করলেও, আসল পরীক্ষাটি হতে পারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে। ততদিন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণমূলক সিদ্ধান্তই হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত