তিনতলা লোহার এই ট্যাংক কি শুধু জং ধরা এক কাঠামো?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ২৩:৪৫:১৭
তিনতলা লোহার এই ট্যাংক কি শুধু জং ধরা এক কাঠামো?

ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া রেলস্টেশন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল একটি লোহার জলাধার এখন আর স্রেফ একটি পুরনো কাঠামো নয়—এটি হয়ে উঠেছে সময়ের নীরব দলিল, রেলওয়ের এক জীবন্ত অতীত।

প্রায় তিনতলা সমান উচ্চতার এই গোলাকৃতি পানির ট্যাংকটি নির্মিত হয়েছিল মূলত স্টিম ইঞ্জিনচালিত ট্রেনের জন্য পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে। সে সময় প্রতিটি ট্রেন রুহিয়ায় থামত, পানি ভরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠত স্টেশন, ট্যাংকের আশপাশে জড়ো হতো স্টাফ, কুলি ও যাত্রীদের ভিড়। চারপাশে তখন কেবল কোলাহল, বাণিজ্য, যাত্রা আর যান্ত্রিক শব্দের এক সুর।

কিন্তু সময় বদলেছে। ট্যাংকটির গায়ে এখন জমেছে জং, শরীর জুড়ে উঠেছে লতা-গুল্ম। তার গায়ে এখনও আঁকা আছে কালচে পাইপলাইন, লোহার সিঁড়ি, কনট্রোল ভালভ—যা একসময় পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে এসব শুধুই অতীতের চিহ্ন, নিস্তব্ধ রেলপথের এক স্মারক।

স্মৃতির জানালায় ফিরে তাকালে…পাকিস্তান আমলে রুহিয়া স্টেশনে কাজ করতেন 'টালিবাবু' নামে একজন রেলস্টাফ। তাঁর ৯০ বছর বয়সী স্ত্রী বলেন,

“এই ট্যাংকের চারপাশে মানুষ গিজগিজ করত। ট্রেন থামলেই সবাই হইহই করে নামত-পড়ত, পানি ভরত। রুহিয়া ছিল এক বন্দর।”

আজ সেই দৃশ্য নিঃশব্দ হয়ে গেছে। জলাধারের পাশে আর কোলাহল নেই, আছে শুধু ঝোপঝাড় আর নিঃসঙ্গতা।

এখনও সময় আছে...বাংলাদেশে এরকম লোহার জলাধার আজ হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র টিকে আছে। কিন্তু এসবের রক্ষণাবেক্ষণ বা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। অথচ এই পানির ট্যাংক ঘিরে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি ‘রেলওয়ে হেরিটেজ জোন’, যেখানে শিশু-কিশোরেরা জানতে পারবে দেশীয় রেল ব্যবস্থার বিবর্তনের গল্প।

রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বললেন,

“এই জলাধার আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রযুক্তি যত বদলাক না কেন, অতীতকে স্মরণ ও সংরক্ষণ করাটাই ভবিষ্যতের প্রতি শ্রদ্ধা।”

আজ সে লোহার ট্যাংক আর পানি দেয় না ঠিকই, কিন্তু সে বলে, “আমি ইতিহাসের তৃষ্ণা মেটাই।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত