নারী নেতৃত্বে ছাত্রদল: সাতক্ষীরায় ইতিহাস

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১০:৫২:২১
নারী নেতৃত্বে ছাত্রদল: সাতক্ষীরায় ইতিহাস

নারী উচ্চশিক্ষার অন্যতম অগ্রদূত সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজে তার প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঐতিহাসিক উদ্যোগকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে ছাত্রদলপন্থী শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে এক অনন্য উদ্দীপনা ও রাজনৈতিক স্পন্দন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজসহ জেলার ৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে ঘোষিত হয় নবগঠিত কমিটি। এর আগে ১৭ জুন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ স্বাক্ষরে এ সকল কমিটি অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।

নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আইরিন আমিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা ইয়াসমিন, এবং সদস্য সচিব হয়েছেন করিমুন নেছা শান্তা। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সোহানা সাবরিনা, আশুরা আক্তার আখি এবং আফরিন সুলতানা।

এই নারী নেতৃত্বকে ঘিরে কলেজ ক্যাম্পাসে যেমন উৎসাহ দেখা দিয়েছে, তেমনি জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট থেকেও আসছে অভিনন্দন বার্তা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথাগতভাবে পুরুষপ্রধান ছাত্র রাজনীতিতে এই নারী নেতৃত্ব একটি যুগান্তকারী ধাপ। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এমন সাহসী পদক্ষেপ তরুণীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে সাহস জোগাবে।

এই নেতৃত্বের বেশ কয়েকজন সদস্য ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকার জন্য ছাত্র রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। সেই আন্দোলন তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয় এবং সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতাকে আরও শক্তিশালী করে।

মন্তব্যে করিমুন নেছা শান্তা বলেন, “এই কমিটিতে সদস্য সচিব হওয়া আমার জন্য গর্বের বিষয়। আমরা রাজপথে যে সাহস দেখিয়েছি, সেটিই নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রমাণ। এখন আমাদের লক্ষ্য একটি আদর্শিক, গণতান্ত্রিক ও সক্রিয় ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা।”

তিনি আরও জানান, “ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা সদা প্রস্তুত থাকব। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই আস্থার জন্য।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রদের অধিকার ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রকে সুসংহত করতেই এই পদক্ষেপ।

একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “নারীদের নেতৃত্বে আনাই ছিল আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। সাতক্ষীরা মহিলা কলেজে এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ আন্দোলন ও ছাত্র রাজনীতির জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠবে।”

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ দক্ষিণাঞ্চলে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রার প্রতীক। ১৯৮৪ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হয় এবং দীর্ঘ পাঁচ দশকে বহু নারী নেতৃত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ছাত্র রাজনীতিতেও নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রদলের প্রথম আনুষ্ঠানিক কমিটি গঠন শুধু একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয় এটি নারীদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এই নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনা, অংশগ্রহণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার প্রত্যাশা করছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল।

এ উদ্যোগ সফল হলে, তা দেশব্যাপী অন্যান্য নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও রাজনৈতিক সক্রিয়তায় নারীদের সম্পৃক্ত করার একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত