রাশিয়ার কৌশলগত দ্বৈততা: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যস্থতা না পক্ষপাত?

ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় "প্রতিরোধমূলক" হামলা চালানোর পর, রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মস্কো ইরানের বিরুদ্ধে এই হামলাকে "অযৌক্তিক সামরিক আগ্রাসন" বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২০ জনের বেশি এবং ইরানি পাল্টা হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছে।
রাশিয়া ও ইরান পূর্ববর্তী সময়ে সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। ইরান রাশিয়াকে শাহেদ ড্রোন সরবরাহ করেছে এবং গত বছর ফাতহ-৩৬০ ক্ষেপণাস্ত্রও দেওয়ার খবর ছিল। তবে বর্তমানে রাশিয়া নিজেই এসব ড্রোন তৈরি করছে, তাই তাদের সামরিক সক্ষমতা এই সংঘাতে তেমন প্রভাবিত হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষক রুসলান সুলেমানভ বলেন, ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে বিমান, মহাকাশ ও পরমাণু প্রযুক্তি পাওয়ার আশা করেছিল, কিন্তু মস্কো সেই চাহিদা পূরণ করেনি। কারণ, রাশিয়া চায় মধ্যপ্রাচ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে।
রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক যতই কৌশলগত হোক না কেন, মস্কো সরাসরি ইরানের পক্ষে যুদ্ধে জড়াবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে রাশিয়া চীনসহ ইরানের পক্ষে অবস্থান নেবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার পূর্ববর্তী কৌশলগত বোঝাপড়া এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিরিয়ায় আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েল একতরফাভাবে গোলান মালভূমিতে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান করছে, যা রাশিয়ার কাছে বিরূপ বার্তা বহন করে।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অতীতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ২০১৬ সালে একসঙ্গে ব্যালে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছিল তার প্রমাণ।
মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার মধ্যস্থতার সম্ভাবনা?
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই সংকট রাশিয়ার জন্য কূটনৈতিক প্রভাব খাটানোর সুযোগ হতে পারে। পুতিন ইতোমধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাশিয়া উভয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখায় আলোচনার একটি সম্ভাব্য মঞ্চ হতে পারে।
তবে সুলেমানভের মতে, সিরিয়ায় পরিবর্তনের পর রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব কমে গেছে এবং বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধেই রাশিয়ার সম্পূর্ণ মনোযোগ। যদিও এই সংকট সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রভাবিত না করলেও, পশ্চিমা মনোযোগ সরে যাওয়ায় মস্কো লাভবান হতে পারে।
বিশ্লেষক মালিনিন বলেন, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন কিছুটা হ্রাস পেতে পারে ইসরায়েলের পক্ষে মনোযোগ সরে যাওয়ায়, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলবে না।
এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া এখন একাধারে বিশ্ব রাজনীতির মধ্যস্থতাকারী ও কৌশলগত পর্যবেক্ষক কিন্তু তার সীমাবদ্ধতা ও স্বার্থ বিবেচনায় মস্কোর ভূমিকা সীমিত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান