বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সম্পদমূল্যের ধস: এক প্রান্তিকে ১০ কোম্পানির পতন

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১২:২১:৪৮
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সম্পদমূল্যের ধস: এক প্রান্তিকে ১০ কোম্পানির পতন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট প্রান্তিকে ২১টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (Net Asset Value Per Share - NAVPS) কমেছে। অন্যদিকে, ১১টি কোম্পানির সম্পদমূল্যে উর্ধ্বগতি দেখা গেছে।

এনএভিপিএস হচ্ছে একটি কোম্পানির মোট নিট সম্পদের পরিমাণকে মোট শেয়ারের সংখ্যায় ভাগ করে নির্ধারিত একটি সূচক, যা কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটায়। সাধারণত এনএভিপিএস বৃদ্ধির মানে হলো কোম্পানির স্থিতিশীলতা বাড়ছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। তবে এনএভিপিএস কমে যাওয়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যালান্স শিট দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অন্তর্ভুক্ত ২১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৯টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (NAVPS) হ্রাস পেয়েছে। এই হ্রাস পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে-

বারাকা পাওয়ার, যার এবারের এনএভিপিএস হয়েছে ২২ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২২ টাকা ৬৮ পয়সা অর্থাৎ ১২ পয়সা কমেছে। একইভাবে, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানির সম্পদমূল্য ২৭ টাকা ০৯ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ০৩ পয়সায় কমেছে ৬ পয়সা।

ডেসকো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের মধ্যে অন্যতম, যাদের এনএভিপিএস এক বছরে ৪৩ টাকা ৫১ পয়সা থেকে কমে ৩৬ টাকা ১৬ পয়সায় নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৭ টাকা ৩৫ পয়সার উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে। ডরিন পাওয়ার-এর সম্পদমূল্যও কিছুটা কমে ৫২ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে ৫২ টাকা ২৮ পয়সায় নেমেছে হ্রাস মাত্র ৬ পয়সা।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সম্পদমূল্য কমেছে তুলনামূলকভাবে বেশি, ৪২ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে কমে ৩৭ টাকা ১৩ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে, যার মানে ৫ টাকা ৬২ পয়সার পতন।

সবচেয়ে বড় হ্রাস দেখা গেছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ক্ষেত্রে। এ কোম্পানির এনএভিপিএস ৩৯৮ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে ২৩৪ টাকা ৬৩ পয়সায় নেমে এসেছে, অর্থাৎ প্রায় ১৬৩ টাকা ৭১ পয়সার বিশাল পতন হয়েছে।

লুবরেফ (বাংলাদেশ) কোম্পানির সম্পদমূল্যও কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা ৪৪ পয়সায় হ্রাস ১ টাকা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-এর এনএভিপিএস ১৭৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ১৩৯ টাকা ১১ পয়সা হয়েছে, অর্থাৎ ৩৪ টাকা ৩৯ পয়সার পতন ঘটেছে।

সবশেষে, শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির সম্পদমূল্য ৩৯ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে কমে ৩৮ টাকা ৫৫ পয়সায় নেমেছে হ্রাস ৮৩ পয়সা।

এই কমতির অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে বিনিয়োগ ও উৎপাদন ব্যয়ে বৃদ্ধি, উচ্চ সুদহার, জ্বালানি খাতে অপচয়, এবং বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতার কারণে কাঁচামালের আমদানিতে চাপ। বিশেষ করে লিন্ডে বিডি ও পাওয়ারগ্রিডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এনএভিপিএসে বড় ধরনের পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

যদিও ১০টি কোম্পানির সম্পদমূল্য কমেছে, অন্যদিকে ১১টি কোম্পানি এনএভিপিএস বৃদ্ধির দিক থেকে স্থিতিশীলতা ও আর্থিক সক্ষমতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: ইউনাইটেড পাওয়ার, এমজেএল বাংলাদেশ, সামিট পাওয়ার, রেনাটা (এনার্জি ডিভিশন), তিতাস গ্যাস, ওসিজিসিএল, বিএম ফিড, ওমেরা ফুয়েলস, ওমেরা পেট্রোলিয়াম, জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিজ এবং পারটেক্স স্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

তবে এদের বিস্তারিত এনএভিপিএস প্রতিবেদন এই সংবাদে অন্তর্ভুক্ত হয়নি; পাঠকরা ডিএসইর ওয়েবসাইটে তা খুঁজে নিতে পারবেন।

ডিএসই তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকের এনএভিপিএস এক বছরের ব্যবধানে সামান্য হলেও হ্রাস পেয়েছে। ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের দামে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই খাতের কোম্পানিগুলো নিট সম্পদে স্থবিরতা অনুভব করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন পরিকল্পনা এবং ব্যয় সংকোচন কৌশল গ্রহণ না করলে এই খাতের আরও কিছু কোম্পানি এনএভিপিএস হ্রাসের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বিনিয়োগকারীদের উচিত এনএভিপিএস কমে যাওয়া কোম্পানিগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করা এবং অস্থির সময়ে ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করা। এই সূচকটি দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য ও বাজারমূল্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত