কেন ট্রাম্পকে এই দুই জায়গায় পাত্তা দেন না পুতিন?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১০:১২:১০
কেন ট্রাম্পকে এই দুই জায়গায় পাত্তা দেন না পুতিন?

ইউক্রেন যুদ্ধ পেরিয়ে গেছে তিন বছরের বেশি সময়, কিন্তু এখনো এর শেষ কোথায়—তা অনিশ্চিত। যুদ্ধ থামাতে কে কী করতে পারেন, কোন শর্তে শান্তি আসবে, সে প্রশ্নগুলো আজও উত্তরবিহীন। তবে একটি বিষয় এখন স্পষ্ট—ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই বিখ্যাত ঘোষণা, “দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে দেব,” সেটি বাস্তবতা থেকে অনেক দূরের কল্পনা ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নিজেকে "সর্বকালের সেরা চুক্তিনির্মাতা" বলে দাবি করেন, ভেবেছিলেন পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং জেলেনস্কির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যবহার করে খুব সহজেই যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারবেন। এমনকি কেউ কেউ বলেছিলেন, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে চাইছেন।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ নানা শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে চলেছে। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। পুতিন বারবার প্রমাণ করছেন, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—এই চার ইউক্রেনীয় অঞ্চল পুরোপুরি কব্জা না করা পর্যন্ত তিনি পিছু হটবেন না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এক ভয়ঙ্কর গেম খেলছেন। তিনি হয়তো মনে করছেন—পশ্চিমারা একসময় ক্লান্ত হবে, ইউক্রেনকে সাহায্য বন্ধ করে দেবে, আর তখনই রাশিয়া বিজয় নিশ্চিত করবে। তিনি হয়তো ভাবছেন, ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হলে যুদ্ধবিরতি টানবে না, বরং ইউক্রেনকে সহায়তাই বন্ধ করে দেবে।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টগুলোতে পুতিনকে “পাগল” বলা, “অনেক মানুষ হত্যার” অভিযোগ আনা—এসবই তার হতাশার বহিঃপ্রকাশ। যদিও তিনি এখনো রাশিয়ার ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেননি, শুধু "অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা চাই" বলে দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন।

রাশিয়া এই যুদ্ধে মারাত্মক মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে।

  • ৯ লাখ সেনা হতাহত, যার মধ্যে ১ লাখের বেশি নিহত।
  • ২০২৪ সালে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৭%,
  • মূল্যস্ফীতি ১০.২৩%,
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার ২১%।

এরপরও পুতিন থামার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছেন না। কারণ, এই যুদ্ধ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তিনি যদি "অর্ধেক বিজয়" নিয়েই থেমে যান, তা হবে তার জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল।

পুতিন হয়তো বুঝতেই পারছেন না যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি কতটা ব্যাপক। সেনাপতিরা হয়তো ভয়েই তাকে প্রকৃত তথ্য জানাতে পারছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, ১৪ হাজারের বেশি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে। তার পরও পুতিন এই যুদ্ধকে নিজের ইচ্ছাশক্তির লড়াই মনে করছেন।

ট্রাম্পের ‘তোষামোদ’ আর ‘হুমকি’—দুটিকেই পুতিন গা করছেন না। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি পুতিন প্রত্যাখ্যান করলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নেন। কিন্তু রাশিয়ার হুমকির মুখে ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট নয়।

এই যুদ্ধ যে দীর্ঘমেয়াদে গড়াবে, তা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে কী হবে—তাও অনিশ্চিত। কিন্তু নিশ্চিত হলো, ট্রাম্পের সহজ সমাধানের বুলি বাস্তব থেকে অনেক দূরের কিছু।

এই যুদ্ধ থামাতে কেবল কথার বুলি, নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি বা কূটনৈতিক অলৌকিকতার ওপর নির্ভর করলে চলবে না। যুদ্ধ থামাতে হলে লাগবে বাস্তবিক কূটনৈতিক কৌশল, সমন্বিত আন্তর্জাতিক চাপ, এবং পুতিনের অন্তর থেকে আসা সিদ্ধান্ত।

এই যুদ্ধ যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চম বছরে প্রবেশ করে, তাহলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। বাস্তবতা হলো—এই যুদ্ধ এখন আর শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের নয়, এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত