চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিষপান করলেন চোখ হারানো চার জুলাই যোদ্ধা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৫ ২১:৫০:০৪
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিষপান করলেন চোখ হারানো চার জুলাই যোদ্ধা

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিষপান করেছেন চোখ হারানো চার জন জুলাই যোদ্ধা। রোববার (২৫ মে) দুপুরে হাসপাতালের ভেতরে জনসমক্ষে তারা এই চরম সিদ্ধান্ত নেন। পরে দ্রুতই তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত।

বিষপানকারী যোদ্ধারা হলেন—শিমুল, মারুফ, সাগর এবং আখতার হোসেন (আবু তাহের)। তারা সবাই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলনে চোখ হারান। এরপর থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে তাদের চিকিৎসা চলছিল।

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এ বিষয়ে ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মো. জাহিদ হোসাইন জানান, তারা রুটিন ভিজিটের অংশ হিসেবে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বিষপানকারী আহতরা সিইওর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তবে সেটি সম্ভব হয়নি।

সিইওর সঙ্গে কোনো দাবি নিয়ে দেখা করতে চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জাহিদ বলেন, “এটি একেবারেই সত্য নয়। আমাদের পক্ষ থেকে সবাইকে জানানো হয়েছিল যে বেডেই সবার সঙ্গে দেখা করা হবে। কোনো পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল না।”

তবে আহত যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে ঘাটতি ছিল।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, “তারা মানসিকভাবে চরম হতাশায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল যদি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিতে বলা হয়, তাহলে তারা আর কোথায় যাবেন, কী করবেন—এই অনিশ্চয়তাই হয়তো তাদের বিষপান করতে প্ররোচিত করেছে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ৫৫ জন জুলাই যোদ্ধা চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে, তাদের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আশ্রয় ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা না থাকায় তারা এখনও হাসপাতাল ছাড়ছেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বড় এক ব্যর্থতার দিক দেখিয়ে দিল। চোখ হারানো এই যোদ্ধারা দেশের জন্য লড়াই করেছেন, অথচ এখন তারা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে আত্মহননের চেষ্টা করছেন—এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও মানবিক সংকট।

রেহান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ