অবশেষে ইসরায়েল হামলা নিয়ে হুতি গোষ্ঠীর পরিকল্পনা সামনে এলো

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানকে “বর্বর আগ্রাসন” আখ্যা দিয়ে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে হামলার হুমকি দিয়েছে। হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়েহিয়া সারি সোমবার রাজধানী সানা থেকে এক বিবৃতিতে জানান, গাজার জনগণের ওপর অবরোধ ও হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিরোধ এখন শুধু লোহিত সাগরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ইসরায়েলের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যে পরিণত করবে।

মুখপাত্র ইয়েহিয়া সারি বলেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধমূলক নৌ অবরোধের অংশ হিসেবে হাইফা বন্দরে চলাচলরত সব জাহাজ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছে। যতক্ষণ না ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করছে ও অবরোধ তুলে নিচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের অভিযান চলবে।”

হুতিদের এ ধরনের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সরাসরি হামলার হুমকি এটিকে একটি নতুন কৌশলগত স্তরে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে শুধু সমুদ্রপথ নয়, স্থলভাগের অবকাঠামোও এখন ঝুঁকির মুখে।

হুতিদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, “ইসরায়েল গাজার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।” একইদিনে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু মানুষের প্রাণহানির খবর জানিয়েছে স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো। এই মন্তব্যের মাধ্যমে নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দেন যে, গাজার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি এবং আরও তীব্র সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা থাকছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতেও মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা চালায়। যুদ্ধাবস্থার সেই টানাপোড়েন ১০ মে একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতিতে শেষ হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একাধিক ভৌগোলিক অঞ্চলে সংঘাত ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার এ প্রবণতা বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামোকে নড়বড়ে করে তুলছে।

ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে হুতিদের হুমকি শুধু গাজায় চলমান সংঘাতের প্রতিফলন নয়, বরং তা সমগ্র অঞ্চলে যুদ্ধের সম্ভাব্য সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গাজায় অবরোধ অব্যাহত থাকলে এবং হুতিরা এ ধরনের ঘোষণাকে বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলে, এটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্য ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকরা এখন অপেক্ষা করছেন, ইসরায়েল এই হুমকিকে কীভাবে মোকাবিলা করে এবং আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় হস্তক্ষেপ করে।