“আমরা আপনার পাশে আছি”—নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের বার্তা প্রধান উপদেষ্টাকে

বিশ্বের নানা দেশের প্রভাবশালী নেতারা শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অধ্যাপক ইউনূসের হোটেল স্যুইটে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান রূপান্তরের সময়ে সহযোগিতা, দক্ষতা ও পরামর্শ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিজামি গঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্টোইয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক সভাপতি, বেশ কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি।
নেতারা অধ্যাপক ইউনূসের আজীবন দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এক নেতা বলেন, “আমরা আপনাকে ও বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন করতে এখানে এসেছি। আমরা পুরোপুরি আপনার পাশে আছি।”
তাঁরা উল্লেখ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পরিবর্তনের পথে এগিয়েছে। তবে গত ১৬ বছরের দুর্নীতি, শাসনব্যর্থতা ও অপশাসনের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নেতা বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। “যা কিছু করার প্রয়োজন, আমাদের বলুন। আমরা প্রস্তুত,” বলেন আরেকজন নেতা।
কেরি কেনেডি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা মানবাধিকার নিয়ে অসাধারণ অগ্রগতি করেছেন।” জর্জটাউন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার ঘোষণা দেন যে প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাবে। এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, “আপনার প্রয়োজন হলে আমরা আছি।”
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বনেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হয়ে সমর্থন দেওয়া আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আমি সত্যিই আবেগাপ্লুত।” তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে দীর্ঘ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “দেশটি যেন ১৫ বছর ধরে একটানা ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।”
তিনি স্বীকার করেন, জনগণের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি: “মানুষ রাতারাতি পরিবর্তন দেখতে চায়। কিন্তু সীমিত সম্পদ নিয়েও আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করতে হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।”
অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের আপনার পরামর্শ ও নৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত মূল্যবান হবে।” বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।
-সুত্রঃ ডেইলি সান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘মাই প্রফেসর’ বললেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেরিং তোবগে বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে দুই দেশই বড় সুবিধা পাবে। পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সরাসরি সংযোগের প্রস্তাব দেন তিনি, যাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়ে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটিকে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ করা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
অধ্যাপক ইউনূস এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ ও ভুটান উন্নত যোগাযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে পারে।”
বৈঠকে তোবগে আরও বলেন, ভুটান ধর্মীয় পর্যটন বাড়াতে চায় এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ইতিহাসে ভুটানে ধর্ম প্রচারে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ভুটানে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিনিয়োগকে স্বাগত জানান এবং ভুটানের জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি ভুটানে ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের সহায়তা চান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতেও দুই নেতা আলোচনা করেন। তোবগে জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভুটান অংশ নেবে।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন “সঠিক হাতে” রয়েছে। তিনি ইউনূসকে নিজের “রোল মডেল” আখ্যা দিয়ে ডাকেন “মাই প্রফেসর” নামে।
তোবগে সম্প্রতি থিম্পুতে উদ্বোধন হওয়া বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস ভবনের নকশার প্রশংসা করেন। ভবনটির নকশা ‘বঙ্গোপসাগর ও হিমালয়ের পাদদেশের মিলন’ থিমে তৈরি হয়েছে।
বৈঠকের শেষে অধ্যাপক ইউনূস প্রধানমন্ত্রী তোবগেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তোবগে জানান, তিনি ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন।
-নাজমুল হোসেন
আজ ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
সিলেট মহানগরীতে বিকল্প সোর্স লাইন নির্মাণকাজের জন্য আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ থেকে জানানো হয়েছে, এই কাজ চলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
বিউবোর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৩/১১ কেভি শেখঘাট উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স লাইন নির্মাণকাজের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই
শেখঘাট উপকেন্দ্রের অধীন পুলিশ লাইনস, ভাতালিয়া, লালাদিঘীর পাড় ও নবাব রোড ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলো হলো:
পশ্চিম শেখঘাট, নবীন আবাসিক এলাকা, ভাঙ্গাটিকর, লালাদিঘীর পাড়, ইগুলাল রোড, কুয়ারপাড়, লামাবাজার, বিলপাড়।
লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, ওসমানী মেডিকেল রোড, কাজলশাহ, মুন্সিপাড়া, পুলিশ লাইনস, মধুশহীদ, রিকাবী বাজার।
দরগা মহল্লা, শাপলার গলি, উদ্দ্যম আবাসিক এলাকা, নয়াপাড়া, ভাতালিয়া, দক্ষিণ কাজলশাহ, ইসকন মন্দির, সৌরভ আবাসিক এলাকা, নবাব রোড, বর্ণমালা পয়েন্ট।
মনিপুরী বস্তি, সাগরদিঘীর পাড়, সুরাম আবাসিক এলাকা, প্রেসক্লাব, মীরের ময়দান, কেওয়া পাড়া, ডিজিএফআই অফিস, এসএমপি ও তৎসংলগ্ন এলাকা।
বিউবো জানিয়েছে, নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের আগেও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হতে পারে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
‘স্মার্টফোন মারণাস্ত্র’: মেধাহীনতা ও আত্মহত্যার ঝুঁকিতে শিশু-কিশোররা
দেশে শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর ফলে একদিকে যেমন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমছে, তেমনি কমছে মেধাচর্চার প্রবণতাও। ছোটখাটো প্রশ্নেই তারা ‘দেখি গুগল কী বলে’ বলে মা-বাবার ফোন হাতড়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এই প্রজন্মের জন্য এক বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষাবহির্ভূত কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। মা-বাবার যথেষ্ট সময় না দেওয়া এবং খেলার মাঠের অভাবে ৮৫ ভাগ শিশু মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
ভয়ংকর পরিসংখ্যান ও বাস্তব উদাহরণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুল হকের তত্ত্বাবধানে করা এক গবেষণায় উঠে আসে যে, বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত, যার মধ্যে ২৯ শতাংশের মারাত্মক আসক্তি রয়েছে। এই শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা ইউনিসেফ কর্তৃক সুপারিশ করা সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় তিন গুণ।
আসক্তির ধরন: গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ শিশু কার্টুন দেখার জন্য, ৪৯ শতাংশ গেম খেলার জন্য এবং ৪৫ শতাংশ ভিডিও বা গান শোনার জন্য ফোন ব্যবহার করে। অথচ পড়াশোনার কাজে ফোন ব্যবহার করে মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু।
বিপজ্জনক পরিণতি: গত বছর শেরপুরের ১০ বছরের এক শিশু নতুন মডেলের মোবাইল কেনার লোভে বাবার ট্রাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে একা ঢাকায় চলে আসে। অন্যদিকে, মোবাইল ফোন না পাওয়ায় যশোর ও কুষ্টিয়ায় নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। গোপালগঞ্জে দশম শ্রেণির এক ছাত্র ৫৫ হাজার টাকার মোবাইল না পেয়ে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
পারিবারে অশান্তি ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অভিভাবকরা বলছেন, ফোন ছাড়া তাদের সন্তানরা খায় না, ঘুমায় না বা পড়ালেখায় মনোযোগ দেয় না। ফোন থেকে বিরত থাকতে বললে তারা আক্রমণাত্মক আচরণ করে। ইন্টারনেট না থাকলে বা চার্জ শেষ হলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বলেন, “গুগল-ইউটিউব নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বইমুখী পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। স্মার্টফোন এখন শিশুদের জন্য ‘মারণাস্ত্রের’ মতো দাঁড়িয়েছে, যা তাদের মানসিক বিকাশ ও সামাজিক আচরণ নষ্ট করছে।”
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে মস্তিষ্কের ৯৫ শতাংশ বিকাশ ঘটে। এই সময়ে মোবাইল ব্যবহার করলে সেই বিকাশ ব্যাহত হয়। এর ফলে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, মনোযোগের ঘাটতি ও আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়েও গবেষকরা সতর্ক করেছেন।
গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে, সন্তানকে সময় দিতে হবে, খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং পড়াশোনার জন্য সীমিত ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ড. ইউনূসের আহ্বান: পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হোক মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ এশিয়ায়
সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। খবর বাসস।
পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলের গুরুত্ব
ড. ইউনূস বলেন, “শুধু মিয়ানমার নয়, এ বছর আমরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছি—ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে।” তিনি বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে আমরা বাস করি। বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই এত সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এত অল্প দূরত্বে অবস্থান করছে না।” তাই নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে আমরা পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যে অধিকার প্রতিটি দেশের রয়েছে, তার প্রতি সমর্থন জানাই।
নিরাপত্তায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি
ড. ইউনূস বলেন, “একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে, আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার আগেই, এই বছর, আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) আওতাধীন পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যৌথ কনভেনশনে যোগদান করেছি।”
তিনি যোগ করেন, “এই যোগদানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের পারমাণবিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।” অধ্যাপক ইউনূস পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধ ও নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
ডঃ ইউনূসের জাতিসংঘ ভাষণ: নির্বাচন, সংস্কার ও বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশের বার্তা
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরেন।
রূপান্তরের যাত্রা
ভাষণের শুরুতে ইউনূস উল্লেখ করেন, এক বছর আগে তিনি যখন সাধারণ পরিষদের মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ সদ্য গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের পথে পা বাড়িয়েছিল। আজ তিনি বিশ্বকে জানালেন, কীভাবে ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সংস্কারের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। তার ভাষায়, “সহজ পথ ছিল নির্বাহী আদেশে পরিবর্তন আনা, কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছি কঠিন পথ—জনগণের অংশগ্রহণমূলক পথ।”
সংস্কার কমিশন ও গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি
ইউনূস জানান, ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণে কাজ চলছে। লক্ষ্য একটাই—কোনো স্বৈরশাসকের প্রত্যাবর্তন রোধ করা এবং জনগণের রক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিক জবাবদিহির আওতায় রাখা। তিনি মনে করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ঘোষিত “জুলাই ঘোষণা” নিশ্চিত করেছে যে ভবিষ্যতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনা
অন্তর্বর্তী সরকারের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে রয়েছে সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন। বিগত দেড় দশকে জবাবদিহিহীন অবকাঠামো প্রকল্প কীভাবে অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করেছে, তা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হওয়া শত শত কোটি ডলার ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। তবে আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতা এবং গচ্ছিত দেশগুলোর সদিচ্ছা ব্যতীত এ প্রচেষ্টা সফল হবে না। তিনি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থপাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধিবিধান প্রণয়নের আহ্বান জানান।
বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও ডিপফেকের হুমকি
বর্তমান বিশ্বে মিথ্যা সংবাদ, অপপ্রচার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ডিপফেককে তিনি গুরুতর হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার মতে, এ ধরনের কার্যক্রম সামাজিক আস্থা ও সম্প্রীতি দুর্বল করছে। এজন্য বৈশ্বিক সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরও অনিশ্চিত হয়েছে। রাখাইনে বৈষম্যমূলক নীতি ও অধিকারবঞ্চনা অব্যাহত থাকায় রোহিঙ্গারা আরও প্রান্তিক হচ্ছে। ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নয়; এটি বৈশ্বিক মানবিক সংকট। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, তহবিলের ঘাটতি পূরণে অবিলম্বে এগিয়ে আসতে। নইলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সুরক্ষা ও নিরাপত্তাঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
গাজা ও বৈশ্বিক ন্যায়বিচার
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউনূস। শিশুদের মৃত্যু, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ এবং হাসপাতাল-স্কুল ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি সবার চোখের সামনেই একটি গণহত্যা।” বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানান।
তরুণদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়ার আহ্বান
ভাষণের শেষ অংশে ইউনূস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়া শুধু রাষ্ট্রের নয়, সমগ্র মানবজাতির দায়িত্ব।
‘আর জীবনে ইন্টারনেট দেব না’: ইনু-শেখ হাসিনার কথোপকথন
গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর ইন্টারনেট পুনরায় চালু করে আন্দোলন-বিরোধী প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেন তৎকালীন মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। কিন্তু ক্ষোভে শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন যে, তিনি আর জীবনে ইন্টারনেট সংযোগ দেবেন না।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপের অডিও রেকর্ডের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
কথোপকথনের কিছু অংশ
ট্রাইব্যুনালে শোনানো অডিও রেকর্ডে শেখ হাসিনা ও ইনুর কথোপকথনের কিছু অংশ নিচে দেওয়া হলো:
শেখ হাসিনা: “...আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুপাশ দিয়ে ধরবে... মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে... সেনা পাঠানো হচ্ছে... আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে... র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর দিয়ে মারবে।”
হাসানুল হক ইনু: “... আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন দুই-পাঁচ দিন যা চলল, চলল; কিন্তু কারফিউয়ের পর যেন আর মিছিল না নামতে পারে সেজন্য একটা হোমওয়ার্ক করতে, করা দরকার যেরকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে সেইগুলা চিহ্নিত আরকি... ছাত্রদল, বিএনপির ছেলে-মেয়ে...।”
হাসানুল হক ইনু: “...আমি একাত্তরে রাত আটটার সময় যাব একা কথা বলব। আমি বলব যে, সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নাই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।”
হাসানুল হক ইনু: “... এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরা নিউজে ফ্লাড করে দিলাম...।”
শেখ হাসিনা: “ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পোড়ায় দিছে। জীবনে... আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে... আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইতে থাকুক, ওইটা চলতে হবে...।”
হাসানুল হক ইনু: “... আপনি এই... জামায়াত শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।”
শেখ হাসিনা: “একেবারে...।”
আন্দোলন দমনে ফোনালাপ ও মামলা
আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৫৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। জবানবন্দিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কড়া সমালোচনা করলেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক বৈঠকে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকে ভারত ভালোভাবে নেয়নি, এ কারণেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন। এক মাস আগে সার্জিও গোরকে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘ভুয়া খবরে পরিস্থিতি খারাপ করেছে ভারতীয় মিডিয়া’
ড. ইউনূস মার্কিন দূতকে বলেন, “ছাত্ররা গত বছর যা করেছে সেটি ভারত পছন্দ করেনি। এ কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়াগুলোর ভুয়া খবর পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। ভারত থেকে অনেক ভুয়া খবর আসছে। তারা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে যে, গত বছরের গণবিপ্লব ছিল একটি ইসলামি আন্দোলন।”
এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও ড. ইউনূস আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, যিনি সমস্যার সৃষ্টি করছেন। এগুলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে।”
ড. ইউনূস আরও অভিযোগ করেন যে, ভারতের কারণেই সার্ক জোটকে পুনরুজ্জীবিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “সার্ক কাজ করছে না কারণ একটি দেশের রাজনীতির সঙ্গে এটি ফিট হচ্ছে না।”
আঞ্চলিক জোট ও কূটনীতি
সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় ড. ইউনূস এশিয়ার আরেক জোট আসিয়ান-এ যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভারত যদিও এখন সার্কের সদস্য, কিন্তু তারা পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে তৈরি বিমসটেককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভারত তাদের বিভিন্ন বিষয় বিমসটেকের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে জানিয়ে থাকে। সম্প্রতি বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৈঠক করেছিলেন।
ইয়াবার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে চাল-সার পাচার হয়: কৃষি উপদেষ্টা
আরকান আর্মির কাছ থেকে আসা ইয়াবার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে সার, ওষুধ ও চাল পাচার হয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এই পাচার রোধে তিনি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের অর্জন ও সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, “দেশের সার সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য ঘাটতি মোকাবিলায় সার আমদানিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, সারের সরবরাহ ব্যবস্থায় পূর্বে যে সিন্ডিকেট ছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সারের দাম কোনোভাবেই বাড়ানো হবে না। অন্তত আমি যে কয়দিন আছি সারের দাম কোনভাবেই বাড়বে না।”
কৃষি জমি সুরক্ষা ও প্রকল্প
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষি জমি সংরক্ষণে কঠোর বিধান রেখে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়নের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন বিএডিসিকে সার কেনার জন্য ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত এক বছরে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রায় ২,৬৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়টি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
চার বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন ড. ইউনূস, সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়: প্রেস সচিব
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চার বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে বাংলাদেশ ও চার দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈঠক
শফিকুল আলম জানান, নিউইয়র্ক সফরের তৃতীয় দিনে ড. ইউনূস চার বিশ্বনেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন।
ইতালি: দিনের শুরুতে তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। ড. ইউনূসের অনুরোধে মেলোনি ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন এবং ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরের আশা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তান: জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনায় ড. ইউনূস শোক প্রকাশ করেন এবং বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
ফিনল্যান্ড: প্রধান উপদেষ্টা ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গেও বৈঠক করেন। ফিনল্যান্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
কসোভো: কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভজোস্যা ওসমানির সঙ্গেও বৈঠক করেন ড. ইউনূস। প্রেস সচিব জানান, কসোভোর অর্থনীতি ইউরোপে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা
শফিকুল আলম জানান, প্রতিটি বৈঠকেই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা ‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন এবং সেখানে তিনি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এই বৈঠকে তার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের ছয়জন রাজনৈতিক নেতাকে শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত:
- “আমরা আপনার পাশে আছি”—নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের বার্তা প্রধান উপদেষ্টাকে
- রেকর্ড গড়ে বায়ার্নের শততম গোল করলেন হ্যারি কেন
- শিরোপা ধরে রাখতে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ তরুণরা
- প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘মাই প্রফেসর’ বললেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
- আজ ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- গান ছাড়লেন তাহসান, ফাটল কি মিথিলা-সৃজিতের সংসারেও?
- ‘স্মার্টফোন মারণাস্ত্র’: মেধাহীনতা ও আত্মহত্যার ঝুঁকিতে শিশু-কিশোররা
- আজ দুপুর পর্যন্ত দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস
- ট্রাম্পের ১০০% শুল্কে ধাক্কা খেল ভারতীয় ওষুধ খাত
- ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ
- ‘নেতারা প্রকাশ্যে নিন্দা করলেও গোপনে প্রশংসা করেন’: জাতিসংঘে নেতানিয়াহু
- ‘আমরা চোর-ডাকাতদের আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না’: মুফতি ফয়জুল করীম
- ড. ইউনূসের আহ্বান: পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হোক মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ এশিয়ায়
- নির্বাচন নিয়ে আর সংশয় নেই: মির্জা ফখরুল
- নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন কৌশলে বিএনপি-জামায়াত
- বিসিবি নির্বাচন: সমঝোতা প্রস্তাব ঘিরে তামিমের বাসায় রাতের বৈঠক
- জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ ঘিরে তীব্র বিতর্ক, বিক্ষোভ ও বর্জন
- ডঃ ইউনূসের জাতিসংঘ ভাষণ: নির্বাচন, সংস্কার ও বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশের বার্তা
- ‘নিখোঁজ’ মামুনুর রশিদকে দ্রুত ফেরত চান জামায়াত আমির
- সারজিস আলম: ‘খুনি হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না’
- পাকিস্তানকে হারানোর মিশনে দারুণ শুরু বাংলাদেশের, চাপে পাকিস্তান
- ‘আর জীবনে ইন্টারনেট দেব না’: ইনু-শেখ হাসিনার কথোপকথন
- সিলেটে ডিসি অফিস ঘেরাও, নগরভবনে ইটপাটকেল: রিকশাচালকদের তাণ্ডব
- অঘোষিত সেমিফাইনাল: টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ
- জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত, দেখে নিন পরীক্ষার সময়সূচি
- মেয়ের লাশ ২০ বছর ধরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন মা
- ইসরায়েলের তেল আবিবে গাড়ি বিস্ফোরণ
- রাজনৈতিক চাপের কারণে শাপলা প্রতীক দিতে পারছে না ইসি: এনসিপি নেতা
- ‘আমাকে আলাদা করে তুলে ধরার চেষ্টা হয়নি’: ডা. তাসনিম জারা
- ‘আমাকে ধরতে চাইলে আপনারাও ধরা পড়বেন’: তামিম ইকবাল
- ভারতের লাদাখে বিক্ষোভের নেপথ্যে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান?
- ‘যারা কম জনপ্রিয়, তাদের জন্যই পিআর লাভজনক’: সালাহউদ্দিন আহমদ
- যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কড়া সমালোচনা করলেন ড. ইউনূস
- কম পুঁজিতে শুরু করা সম্ভব লাভজনক ৪টি ব্যবসা
- ইয়াবার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে চাল-সার পাচার হয়: কৃষি উপদেষ্টা
- ‘শাপলা প্রতীক কেন দেব না, তার ব্যাখ্যা দেব না’: সিইসি
- ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে জামায়াতের ইন্ধন’: রুহুল কবির রিজভী
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবারের লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবারের টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- আমিরাতে ধরপাকড় বেড়েছে, বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
- ‘৭১ এ হারাইছি, আজকেও হারাবো’: চমক
- গাজায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অঙ্গচ্ছেদ হওয়া শিশু: ইউএনআরডব্লিউএ
- গাজায় শান্তি ফেরাতে ট্রাম্পের ২১-দফা পরিকল্পনা
- নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন
- বাঁচা-মরার লড়াই: পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশর একাদশে কারা থাকছেন?
- চার বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন ড. ইউনূস, সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়: প্রেস সচিব
- কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
- ভিকি-ক্যাটরিনার সুখবর: সালমানের নামে ভাইরাল হলো ভুয়া পোস্ট
- পাবজি খেলার নেশায় মা ও তিন ভাইবোনকে হত্যা
- রেনেসাঁর দর্শন ও দিশা: গ্রিক-রোমান জ্ঞান, মুসলিম দার্শনিকদের ভূমিকা ও আধুনিকতার উন্মেষ
- এশিয়া কাপ থেকে প্রিমিয়ার লিগ, দেখে নিন আজকের খেলার সূচি
- ডিএসইতে রবিবারের লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে সোমবারের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- যে কারণে পুরুষের টেস্টোস্টেরন কমে: না জানলে বিপদ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- দিল্লি হাই কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জ্যাকুলিন ফের্নান্দেজের আপিল
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- তামিম ইকবালের অভিযোগ: বিসিবি নির্বাচনে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ চলছে
- বিএনপি ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হবে: ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
- ডিএসইতে সোমবারের লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- বাড়ছে বাণিজ্য, বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার আজকের হার
- ভারত-পাকিস্তান লড়াই আর রইল না! সূর্যকুমারের স্পষ্ট ঘোষণা, একতরফা ম্যাচে বিধ্বস্ত পাকিস্তান
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ