আজ রাতে যখন দৃশ্যমান হবে ‘সুপার ব্লাড মুন’ চন্দ্রগ্রহণ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৭ ১২:০৩:২৯
আজ রাতে যখন দৃশ্যমান হবে ‘সুপার ব্লাড মুন’ চন্দ্রগ্রহণ
ছবিঃ সংগৃহীত

আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। রাত থেকেই শুরু হয়ে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত স্থায়ী হবে এই জ্যোতির্বিদ্যাগত বিরল দৃশ্য। পুরো গ্রহণ চলবে প্রায় ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট।

বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গ্রহণের ধাপগুলো নিম্নরূপ:

পেনুম্ব্রাল গ্রহণ শুরু: রাত ৯টা ২৮ মিনিট ২৫ সেকেন্ড

আংশিক গ্রহণ শুরু: রাত ১০টা ২৭ মিনিট ০৯ সেকেন্ড

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু: রাত ১১টা ৩০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড

সর্বোচ্চ গ্রহণ: রাত ১২টা ১১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড

পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শেষ: রাত ১২টা ৫২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড

আংশিক গ্রহণ শেষ: রাত ১টা ৫৬ মিনিট ৩১ সেকেন্ড

পেনুম্ব্রাল গ্রহণ শেষ: রাত ২টা ৫৫ মিনিট ৮ সেকেন্ড

অতএব, আজ রাত আকাশ পরিষ্কার থাকলে বাড়ির ছাদ থেকেই সরাসরি এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করা যাবে।

জ্যোতির্বিদরা জানান, যখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং পৃথিবী মাঝখানে এসে সূর্যের আলো চাঁদে পৌঁছাতে বাধা দেয়, তখনই ঘটে চন্দ্রগ্রহণ। এ সময় পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে গিয়ে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমানতা হারায়। এ কারণেই কয়েক ঘণ্টার জন্য পৃথিবীর যে কোনো দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়।

এবারের পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে বলা হচ্ছে ‘সুপার ব্লাড মুন’। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণ সময়ের চাঁদের তুলনায় এটি প্রায় ৭ শতাংশ বড় এবং ১৫ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। লালচে আভা ধারণ করায় একে ‘ব্লাড মুন’ নামেও অভিহিত করা হয়েছে।

-রাফসান


রূপকথা নয় সত্যি! আমাজনের গভীরে মিললো সেই ফুটন্ত জলের নদী

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১২:১৯:৪৪
রূপকথা নয় সত্যি! আমাজনের গভীরে মিললো সেই ফুটন্ত জলের নদী
ছবিঃ সংগৃহীত

রূপকথার গল্পে কিংবা সিনেমায় আমরা প্রায়ই এমন দৃশ্যের দেখা পাই, যেখানে ফুটন্ত জলে কিছু পড়ে গেলে তা মুহূর্তেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু যদি বলি, এমন একটি নদী বাস্তবেও আছে, যার জল এতটাই উত্তপ্ত যে তাতে ভুলবশত কোনো প্রাণী পড়ে গেলেই তা সেদ্ধ হয়ে যায়? হ্যাঁ, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন মহাবনের গভীরে পেরুর অংশে রয়েছে এমনই এক রহস্যময় নদী, যার পানি সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। এই নদীর ভয়ঙ্কর রহস্য নিয়ে বিস্তারিত জানাবো এই প্রতিবেদনে।

আমাজনের গভীরে ফুটন্ত নদী 'সানায় টিম্পি সখা': দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল আমাজন মহাবনের গভীরে অবস্থিত পেরুর অংশে এক আজব ও ভয়ঙ্কর ফুটন্ত জলের নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইনকা জাতির মানুষ এই নদীকে 'সানায় টিম্পি সখা' নামে ডাকে, যার অর্থ 'সূর্যদেবের জলস্রোত'। প্রাচীন ইনকাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যদেবের তাপেই এই নদীর জল সবসময় ফুটতে থাকে। স্প্যানিশ বাহিনী যখন ইনকা সভ্যতা জয়ের অভিযানে নেমেছিল, তাদের বিবরণেও এই নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

আন্দ্রে রুজোর ১২ বছরের অনুসন্ধান: অনেকের কাছে লোককথা বা রূপকথার গল্প মনে হলেও, পেরুর রাজধানী লিমার বাসিন্দা আন্দ্রে রুজু কিশোর বয়স থেকেই এই নদীর রহস্য উন্মোচনের স্বপ্ন দেখতেন। টানা ১২ বছর ধরে তিনি এই নদীর অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগছিলেন। অবশেষে, পেরুর তাপমাত্রার মানচিত্র বা থার্মাল ম্যাপ তৈরির সময় তিনি জানতে পারেন, ছোটবেলায় শোনা সেই ফুটন্ত নদীর অস্তিত্ব সত্যিই আছে। তবে সেই নদীর জল সূর্যদেবের তাপে নয়, বরং মাটির গভীরের প্রাকৃতিক তাপেই ফুটছে।

রহস্যময় নদীটির বৈশিষ্ট্য ও স্থানীয়দের বিশ্বাস: ২০১১ সালের নভেম্বরে আন্দ্রে রুজু পেরুর মধ্য অংশে অভিযান চালিয়ে সেই রহস্যময় ফুটন্ত জলের জলাশয়টি খুঁজে বের করেন। প্রায় ৬ মাইল লম্বা এই নদীটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ঘন সবুজ গাছের প্রাচীর। নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১৬ ফুট এবং এর পানির উষ্ণতা ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত হতে পারে। ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত জলের স্রোতে প্রায়শই বিভিন্ন প্রাণীর সেদ্ধ হয়ে যাওয়া মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।

নদীর কাছাকাছি অবস্থিত মায়ানটুয়াকু গ্রামের পুরোহিতরা এই নদীকে পবিত্র মনে করেন এবং বহিরাগতদের নদীর কাছে যেতে বাধা দেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই নদীর জল সংগ্রহ করে ঠান্ডা করার পর তা কেবলমাত্র ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আন্দ্রে বহু চেষ্টা ও আলোচনার পর একজন পুরোহিতের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে নদীর কাছে যাওয়ার অনুমতি পান।

ভূ-তাপীয় রহস্য উন্মোচন: আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই নদীর ধারে কাছে কোনো আগ্নেয়গিরি বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। তাহলে এই নদীর জল কীভাবে সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে? আন্দ্রে রুজুর ধারণা, মাটির নিচের তীব্র তাপমাত্রার কারণেই এমনটা ঘটে। তার মতে, পেরুর আমাজন জঙ্গলের গভীরে শিলাময় মাটিতে অসংখ্য ফাটল রয়েছে। বৃষ্টির জল সেই ফাটল দিয়ে মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং ভূগর্ভস্থ তাপের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত হয়। এরপর সেই উত্তপ্ত জল আবার মাটির ফাটল দিয়ে উপরে উঠে আসে, যার ফলে নদীর পানি কয়েকশ গুণ বেশি উষ্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, 'জিওথারমাল' বা 'হাইড্রোথারমাল' চক্রের বিক্রিয়াই এই ফুটন্ত নদীর মূল রহস্য।

আমাজনের গভীরে অবস্থিত এই ফুটন্ত জলের নদী 'সানায় টিম্পি সখা' প্রকৃতির এক অসাধারণ বিস্ময়। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের পৃথিবী এখনও অসংখ্য অজানা রহস্যে ভরা। আন্দ্রে রুজুর মতো গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এইসব রহস্যের জট খুলছে এবং আমাদের সামনে পৃথিবীর নতুন নতুন বিস্ময় উন্মোচিত হচ্ছে।


যে দেশে ঘর জামাই দত্তক নিয়ে বানানো হয় কোম্পানির সিইও

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১২:০২:২৫
যে দেশে ঘর জামাই দত্তক নিয়ে বানানো হয় কোম্পানির সিইও
ছবিঃ সংগৃহীত

'ঘর জামাই' শব্দটি বাংলাদেশে শুনলে অনেকে হাসি-ঠাট্টার বিষয় মনে করলেও, বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে এর রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থ ও মর্যাদা। সেখানে বিলিয়নিয়ার পরিবারগুলো রীতিমতো দত্তক নেয় ঘর জামাই, যারা কেবল পরিবারের সদস্যই নন, হয়ে ওঠেন বিশাল কর্পোরেশনের কর্ণধার। এই প্রথার নাম 'মুকোশি', যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাপানের ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

'মুকোশি' – দত্তক ঘর জামাইয়ের প্রথা: জাপানিজ প্রথা 'মুকোশি' (দত্তক ঘর জামাই) অনুযায়ী, কোনো পরিবারে যদি যোগ্য পুত্রসন্তান না থাকে, তাহলে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন উপযুক্ত পুরুষকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বিয়ের পর এই পুরুষ তার স্ত্রীর পদবী গ্রহণ করেন এবং সরাসরি পরিবারের ব্যবসার সিইও বা চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়। জাপানে এই প্রথাটি এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, গত শতাব্দী ধরে সুজুকি, টয়োটা কিংবা কিমান-এর মতো বড় বড় সাম্রাজ্যগুলোতে একের পর এক দত্তক পুত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সুজুকির টানা চারজন প্রধানই ছিলেন দত্তক জামাই। এমনকি গত বছর মারা যাওয়া সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের প্রধান ওসামু সুজুকি নিজেও ছিলেন একজন দত্তক ঘর জামাই।

করের বোঝা কমানো ও উত্তরাধিকার নির্ধারণ: এই প্রথার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। পালিত সন্তানকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে পরিবারগুলোর উপর করের বোঝা অনেকটাই কমে যায়। তাই জাপানের নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রায়ই এই প্রথার মাধ্যমে তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। শুধু জাপানিজ নয়, ভাগ্যের চাকা অনুকূলে থাকলে, আদালতের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করে বিদেশীরাও এই 'দত্তক ঘর জামাই' হওয়ার সুযোগ পেতে পারে, যদিও সেক্ষেত্রে তারা জাপানের নাগরিকত্ব পান না।

প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক জীবনব্যবস্থা: ১৩০০ শতক থেকে চলে আসা এই প্রাচীন প্রথাটি আজও জাপানে সচল রয়েছে, যা দেশটির উন্নত জীবনব্যবস্থা, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এক অসাধারণ প্যাকেজকে তুলে ধরে। জাপান এমন একটি দেশ, যেখানে 'ঘর জামাই' মানেই কেবল পরিবারের সদস্য নন, বরং অফিসের নতুন সিইও বা একজন সম্মানিত নেতা।

জাপানের 'মুকোশি' প্রথা আমাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রমাণ করে যে, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিন্নতা কীভাবে একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি কেবল একটি বৈবাহিক প্রথা নয়, এটি জাপানের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।


এল ডোরাডো থেকে ট্রয়: ইতিহাসের হারানো ৬ শহর, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১০:৩৯:৪৪
এল ডোরাডো থেকে ট্রয়: ইতিহাসের হারানো ৬ শহর, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত
ছবিঃ সংগৃহীত

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বহু নগর গড়ে উঠেছিল শিল্প, স্থাপত্য আর জ্ঞানের উৎকর্ষে। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই শহরগুলোর কিছু হারিয়ে গেছে, কিছু ভেঙে পড়েছে, আবার কিছু মাটির নিচে চাপা পড়েছে। আজও সেসব শহরের ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো। ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা চেষ্টা করছেন রহস্যের জট খোলার, তবুও অনেক প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত।

চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৬টি হারানো শহরের কথা, যেগুলো আজও রহস্যে ঘেরা:

১. আটলান্টিস (Atlantis)

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম আটলান্টিস নিয়ে লিখেছিলেন। তার মতে, এটি ছিল এক সমৃদ্ধশালী নগররাষ্ট্র, যেখানে প্রযুক্তি ও স্থাপত্য ছিল অতুলনীয়। কিন্তু হঠাৎ কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শহরটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।

রহস্য: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ আটলান্টিসের সন্ধান করছে। এটি কি সত্যিই ছিল, নাকি প্লেটোর কল্পনার অংশ—এই রহস্য আজও অমীমাংসিত।

২. মাচু পিচু (Machu Picchu)

পেরুর আন্দিজ পর্বতের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে ইনকা সাম্রাজ্যের বিস্ময়কর শহর মাচু পিচু। ১৫শ শতকে নির্মিত এই শহরটি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের নজরে আসে ২০শ শতকের শুরুতে। পাহাড়ের চূড়ায় পাথর কেটে এমন নিখুঁত স্থাপত্য নির্মাণই এর প্রথম বিস্ময়।

রহস্য: মাচু পিচুর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে—এটি কি রাজপ্রাসাদ ছিল, নাকি ধর্মীয় কেন্দ্র? এত উচ্চতায় পানি সরবরাহ ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

৩. মোহনজো-দারো (Mohenjo-daro)

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার এক কেন্দ্র। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত নগরায়ণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও স্নানাগার।

রহস্য: হঠাৎ কেন শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়? প্রত্নতত্ত্ববিদরা বন্যা, ভূমিকম্প বা আক্রমণের ধারণা করলেও, শহরজুড়ে পাওয়া মানব কঙ্কালগুলোর হঠাৎ মৃত্যুর কারণ আজও নির্দিষ্ট নয়।

৪. পম্পেই (Pompeii)

খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ সালে ইতালির পম্পেই শহর হঠাৎ করেই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে মুহূর্তের মধ্যে শহরটি ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে। আজও ছাইয়ে ঢাকা মানুষের দেহ ও ঘরবাড়ি প্রায় অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।

রহস্য: মানুষ কেন এতদিন ধরে এই বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বসবাস করছিল, যখন তারা বিপদের আভাস পাচ্ছিল—সেই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।

৫. অ্যাঙ্কর ওয়াট (Angkor Wat)

কম্বোডিয়ার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, বরং খেমার সাম্রাজ্যের এক বিশাল নগরকেন্দ্র। কিন্তু ১৫শ শতকের দিকে হঠাৎ করেই শহরটি পতনের পথে যায়।

রহস্য: জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার কারণে কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, নাকি আক্রমণকারীরা ধ্বংস করেছিল—এর পতনের আসল কারণ আজও রহস্যে ঢাকা।

৬. ট্রয় (Troy)

প্রাচীন গ্রিক মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’-এ হোমার ট্রয় নগর নিয়ে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘকাল এটি কল্পকাহিনি ভাবা হলেও, ১৯শ শতকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিখ শ্লিমান আধুনিক তুরস্কে ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।

রহস্য: ট্রোজান যুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল, নাকি তা কেবল কাহিনি? শহরের ধ্বংসের আসল কারণ কী ছিল—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি।


প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে

২০২৫ অক্টোবর ২১ ২০:৪৬:০১
প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে
ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে এই বিশাল মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণবন্ত সত্তার টিকে থাকার পেছনে রয়েছে এক অপরিহার্য উপাদান – পানি। 'পানির অপর নাম জীবন' – এই প্রবাদ বাক্যটি তাই কেবল কথার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে সুগভীর বৈজ্ঞানিক ও মহাজাগতিক সত্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে পানি আমাদের অস্তিত্বের মূল, সেই পানির জন্ম ঠিক কখন, কীভাবে হয়েছিল এই অনন্ত মহাবিশ্বে? সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের এক চমকপ্রদ উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

বিগ ব্যাং ও পানির প্রথম কণা: আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল ঘটনা 'বিগ ব্যাং' বা মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরেই প্রথম পানির কণা তৈরি হয়েছিল। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে একটি অতি ক্ষুদ্র, উত্তপ্ত এবং ঘন বিন্দু থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়। এরপর এই মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হতে হতে বিভিন্ন কণার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি।

কোরআনের অবাক করা ইঙ্গিত: বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারের বহু শতাব্দী আগেই পবিত্র কোরআনে পানির উৎপত্তির এক ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?"। এই আয়াতে 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল' (অর্থাৎ একীভূত অবস্থা) এবং 'অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম' (অর্থাৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং) – এই দুটি ধাপের পরপরই 'প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম' (অর্থাৎ পানির উৎপত্তি) – এই ধারাবাহিকতা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এটি নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে প্রথম দিকেই পানির অস্তিত্ব ছিল।

সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও পানির জন্ম প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে আরও গভীরের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের মতে, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রগুলো ধ্বংস হওয়ার পর যে 'সুপারনোভা' বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তারই ফলস্বরূপ পানির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন ঠান্ডা হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি তৈরি হয়। আমরা জানি, পানি রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত।

বিগ ব্যাংয়ের শুরুর দিকে যখন মহাবিশ্ব শীতল হতে শুরু করে, তখন হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মতো হালকা উপাদানগুলো তৈরি হয়। প্রায় ১০ কোটি বছর পর এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে একত্রিত হয়ে নক্ষত্রে পরিণত হয়। এই নক্ষত্রগুলো যখন তাদের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে বিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে যায়, তখন তাপমাত্রা প্রায় ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর অণু, অর্থাৎ পানির অণু তৈরি করে।

উপসংহার: পানির এই মহাজাগতিক সৃষ্টি প্রক্রিয়া, যা সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে শুরু হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিলনে শেষ হয়, তা অত্যন্ত দীর্ঘ ও জটিল একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এই বিশাল মহাজাগতিক ঘটনাপ্রবাহ কোনো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার নির্দেশ ছাড়া ঘটা কি সম্ভব? আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্যগুলো উন্মোচন করছে, তখন কোরআনের হাজার বছর আগের আয়াতগুলো যেন সেই রহস্যের চাবি হয়ে ধরা দিচ্ছে।


পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস

২০২৫ অক্টোবর ২১ ২০:৩৫:৫৯
পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস
ছবিঃ সংগৃহীত

নীল নদের দেশ মিশর, যেখানে যুগে যুগে রাজত্ব করেছেন ফারাওরা। তাদের গৌরবময় সাম্রাজ্য, বিশাল পিরামিড আর রহস্যময় মমিগুলো আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের বিস্ময় কেড়ে নেয়। কিন্তু এই ৫০০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে আছে এক অপ্রত্যাশিত সংযোগ, যা ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী আর ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলে। এটি শুধু ফারাওদের উত্থান-পতনের গল্প নয়, এটি এক মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের দম্ভ, পতন এবং মুসলিমদের বিজয়ের এক অসাধারণ আখ্যান।

নীল নদের দান ও ফারাওদের উত্থান: প্রায় ৫০০০ বছর আগে, যখন পৃথিবীতে জলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, তখন নীল নদের অফুরন্ত জলরাশি মিশরকে দিয়েছিল এক অতুলনীয় শক্তি। এই নদের আশীর্বাদে মিশর হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে কিং নরমালের মতো নেতার নেতৃত্বে মিশরে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম সুসংগঠিত রাজতন্ত্র। হাজার বছর ধরে মিশর ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি। এই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে ফারাওরা নিজেদেরকে কেবল রাজা নয়, বরং 'খোদা' হিসেবে দাবি করতে শুরু করে। তারা এমন এক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে প্রজারা বিশ্বাস করত যে ফারাওদের দাসত্ব করলেই কেবল পরকালে মুক্তি মিলবে।

মমি আর পিরামিডের রহস্য: ফারাওদের এই খোদা হওয়ার ধারণার একটি অদ্ভুত পরিণতি ছিল মমি তৈরির প্রচলন। তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও যদি শরীর অক্ষত থাকে, তবে তাদের 'খোদা' সত্তা টিকে থাকবে। তাই ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ থেকে অত্যন্ত নিপুণভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে (কেবল হৃদপিণ্ড বাদে) বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত করা হতো। এরপর সেই মমির ওপর তৈরি হতো বিশাল সব পিরামিড। খুফুর মতো ফারাওদের পিরামিডগুলো এত বিশাল ছিল যে, প্রায় ৩৫০০ বছর ধরে এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম স্থাপনা। কিন্তু এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ মিশরের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়।

হযরত ইউসুফ (আঃ) ও বনি ইসরাইলের আগমন: মিশরের অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে এক দাস হিসেবে আগমন ঘটে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর। তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করে তোলেন। এরপর তার বংশধর, অর্থাৎ বনি ইসরাইলরা মিশরে বসবাস শুরু করে এবং এক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

এক নতুন ফারাওয়ের অত্যাচার ও হযরত মূসা (আঃ)-এর আবির্ভাব: কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! এক নতুন ফারাওয়ের আগমনের সাথে সাথে বনি ইসরাইলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এই ফারাও তাদের দাস বানিয়ে নেয় এবং জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, তার সাম্রাজ্য বিনাশকারী এক বনি ইসরাইলী শিশুর জন্ম ঠেকানোর জন্য সমস্ত নবজাতক পুত্রসন্তানকে হত্যার নির্দেশ দেয়। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেই জন্ম নেন হযরত মূসা (আঃ), যিনি অলৌকিকভাবে ফারাওয়ের ঘরেই পালিত হন।

ফারাও রামসেসের পতন ও মিশরের অন্ধকার যুগ: নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে হযরত মূসা (আঃ) ফারাও রামসেসের কাছে বনি ইসরাইলকে মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফারাও রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বনি ইসরাইলের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় লোহিত সাগরে ফারাও রামসেস ও তার বিশাল বাহিনী ডুবে যায়, যা ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনার পর মিশর আর কখনও তার পুরনো শক্তি ফিরে পায়নি এবং প্রবেশ করে এক দীর্ঘ অন্ধকার যুগে।

রাসূল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও মুসলিমদের বিজয়: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুসলিমরা একদিন মিশর জয় করবে এবং তিনি সেখানকার মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। রোমানদের ৬০০ বছরের শাসনের পর, হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের সময় সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত হয়। মুসলিমরা মিশর জয় করে এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

উপসংহার: ফারাওদের মিশর, তার সমৃদ্ধি, ধর্মীয় উন্মাদনা, এবং পতনের গল্প আজও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মের এই সমন্বিত আখ্যান প্রমাণ করে, মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার পেছনে রয়েছে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যা কখনো কখনো হাজার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।


জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?

২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৯:০২:১৯
জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?
ছবিঃ সংগৃহীত

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। আমাদের জানার বাইরেও রয়েছে এক বিশাল ও অদৃশ্য জগৎ। যুগ যুগ ধরে ধর্মগ্রন্থগুলো, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন, জ্বীন নামক এক অদৃশ্য জাতির কথা বলে আসছে, যারা আগুন থেকে তৈরি এবং যাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনব্যবস্থা। এতদিন এই বিশ্বাসটি মূলত আধ্যাত্মিক জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু যুগান্তকারী তত্ত্ব এই অদৃশ্য জগতের রহস্যের দিকে নতুন করে আঙুল তুলেছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স, প্যারালাল ইউনিভার্স এবং অ্যান্টিম্যাটারের মতো জটিল ধারণাগুলো কি তবে জ্বীনের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হতে চলেছে?

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্বীন হলো এক বিশেষ সৃষ্টি, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের মতোই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" এই অদৃশ্য সৃষ্টিকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মনে অবিশ্বাস থাকলেও বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক কিছু তত্ত্ব নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

অ্যান্টিম্যাটার ও অদৃশ্য জগৎ: পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বে প্রতিটি কণার (Particle) বিপরীতে একটি প্রতিকণা (Anti-particle) রয়েছে। যেমন, ইলেকট্রনের বিপরীতে রয়েছে পজিট্রন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের দৃশ্যমান জগৎ যদি পদার্থ (Matter) দিয়ে তৈরি হয়, তবে এর সমান্তরালে প্রতিপদার্থ (Anti-matter) দিয়ে তৈরি একটি জগৎ থাকাও সম্ভব। এই প্রতিপদার্থের জগৎ আমাদের কাছে অদৃশ্য। পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বিপরীতে যদি সমসংখ্যক 'প্রতি-মানুষ' থাকে, যারা অদৃশ্য, তবে সেই ধারণাকে কি জ্বীনের অস্তিত্বের সাথে তুলনা করা চলে?

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অদ্ভুত জগৎ: কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগৎ আরও রহস্যময়। এর 'সুপারপোজিশন' তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে এবং একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। আবার 'কোয়ান্টাম টানেলিং' তত্ত্ব বলছে, একটি কণা যেকোনো বাধা ভেদ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। এই ধারণাগুলো যদি সত্যি হয়, তবে এমন এক সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব, যারা আমাদের মাত্রার সীমাবদ্ধতা মানে না এবং যেকোনো বাধা অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে। কোরআনে বর্ণিত জ্বীনদের অদৃশ্য থাকার এবং বিভিন্ন রূপ ধারণ করার ক্ষমতার সঙ্গে এই ধারণাগুলোর অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব: আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো 'প্যারালাল ইউনিভার্স' বা সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা। আমাদের মহাবিশ্বের মতোই আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব একইসাথে বিদ্যমান, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। পবিত্র কোরআনে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানের 'মাল্টিভার্স' তত্ত্ব যেন কোরআনের এই ধারণারই প্রতিধ্বনি। যদি সত্যিই সমান্তরাল কোনো জগৎ থেকে থাকে, তবে সেখানে জ্বীনের মতো বুদ্ধিমান مخلوق বসবাস করতেই পারে।

শেষ কথা: যদিও বিজ্ঞানীরা জ্বীনের অস্তিত্ব নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে পদার্থবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী তত্ত্বগুলো আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা এতদিন কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল, তা এখন বিজ্ঞানের আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে। ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই মেলবন্ধন হয়তো একদিন অদৃশ্য জগতের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করবে।


ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ছিনতাই: ২ লক্ষ ডলার নিয়ে আকাশেই উধাও সেই রহস্যমানব!

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৮:৫৯:৪৭
ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ছিনতাই: ২ লক্ষ ডলার নিয়ে আকাশেই উধাও সেই রহস্যমানব!
ছবিঃ সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর, থ্যাংকসগিভিং উৎসবের ঠিক আগের সন্ধ্যায় আমেরিকার পোর্টল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩০৫ সিয়াটলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। যাত্রীরা জানতেন না, তারা আমেরিকার বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে কিংবদন্তী তুল্য এক অপরাধের সাক্ষী হতে চলেছেন। বিমানে আরোহণকারী যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৪০ ঊর্ধ্ব এক শান্ত চেহারার ভদ্রলোক, যিনি নিজের টিকিট কিনেছিলেন 'ড্যান কুপার' নামে। বিমান আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণ পর কুপার একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টকে একটি নোট দিয়ে জানান যে, তার কাছে বোমা আছে। এরপরের কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে আমেরিকার বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক এবং রহস্যময় ছিনতাইয়ের ঘটনা।

ডিবি কুপার: এক রহস্যময় ছিনতাইকারী ড্যান কুপারকে দেখে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে তিনি একটি বিমান ছিনতাই করতে চলেছেন। তার পরনে ছিল একটি কালো বিজনেস সুট, সাদা শার্ট এবং একটি কালো ক্লিপ-অন টাই। তার আচরণ ছিল অবিশ্বাস্য রকম শান্ত এবং পেশাদার, যা তাকে সেই সময়ের অন্যান্য ছিনতাইকারীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তুলেছিল।

কুপারের দাবি ও কৌশল ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট ফ্লোরেন্স শ্যাপনার যখন কুপারের নোটটি পড়েন, তখন তিনি ভয়ে জমে যান। নোটে লেখা ছিল যে তার ব্রিফকেসে একটি বোমা আছে এবং তিনি চান ফ্লোরেন্স তার পাশে এসে বসুক। ফ্লোরেন্স তার পাশে বসার পর কুপার তার ব্রিফকেসটি সামান্য খুলে ভেতরে থাকা আটটি লাল রঙের সিলিন্ডার (যা দেখতে ডিনামাইট-এর মতো), একটি বড় ব্যাটারি এবং কিছু তারের একটি জট দেখান।

কুপার তার দাবিগুলো পরিষ্কারভাবে জানান:

মুক্তিপন হিসেবে ২ লক্ষ আমেরিকান ডলার, যা হবে ২০ ডলারের অচিহ্নিত (unmarked) সিরিয়াল নম্বরের নোটে।

চারটি প্যারাসুট: দুটি প্রধান ব্যাকপ্যাক স্টাইলের এবং দুটি রিজার্ভ (বুকের উপর বাঁধার মতো)।

সিয়াটল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বিমানটিতে পুনরায় জ্বালানি ভরার জন্য একটি ফুয়েল ট্রাক প্রস্তুত রাখতে হবে।

কুপারের আচরণ এবং তার দাবিগুলো এফবিআই এবং এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে হতবাক করে দেয়। তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে কথা বলছিলেন এবং তার নির্দেশের পেছনে একটি অসাধারণ মনস্তাত্ত্বিক চাল ছিল। তিনি চারটি প্যারাসুট চেয়েছিলেন কারণ তিনি এটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে কর্তৃপক্ষ তাকে ত্রুটিপূর্ণ প্যারাসুট দেবে না, কারণ তারা ভাববে যে কুপার হয়তো একজন ক্রুকে জিম্মি হিসেবে সাথে নিয়ে ঝাঁপ দিতে পারে।

ঘটনার বিবরণ কুপারের নির্দেশ অনুযায়ী বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন উইলিয়াম স্কট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানান। নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড নায়রব তৎক্ষণাৎ মুক্তিপন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এফবিআই দ্রুত ১০,০০০টি ২০ ডলারের নোট যোগাড় করে, যার প্রতিটি নোটের সিরিয়াল নম্বর মাইক্রোফিল্ম ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় যাতে পরবর্তীতে টাকাগুলো ট্র্যাক করা যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলার সময় ফ্লাইট ৩০৫ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সিয়াটলের পিউজেট সাউন্ডের আকাশে চক্কর কাটতে থাকে। যাত্রীরা তখনও জানত না যে তাদের বিমানটি ছিনতাই হয়েছে; তাদের বলা হয়েছিল যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণে দেরি হচ্ছে।

বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি সিয়াটল টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুপার নির্দেশ দেন বিমানটিকে রানওয়ের একটি নির্জন এবং উজ্জ্বলভাবে আলোকিত স্থানে নিয়ে যেতে। সেখানে নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্টের একজন কর্মচারী টাকা ভর্তি একটি নাইলনের ব্যাগ এবং প্যারাসুটগুলো নিয়ে বিমানে ওঠান। টাকা এবং প্যারাসুট হাতে পাওয়ার পর কুপার তার কথা রাখেন এবং বিমানের ৩৬ জন যাত্রী ও দুজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টকে মুক্তি দেন। বিমানে তখন থেকে যায় শুধু পাইলট, কো-পাইলট, একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট টিনা ম্যাকলো এবং ড্যান কুপার।

পলায়ন সিয়াটলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে জ্বালানি ভরার পর কুপার পাইলটকে তার নতুন এবং চূড়ান্ত পরিকল্পনা জানান। তার নির্দেশগুলো আরো বেশি অবাক করার মতো ছিল এবং এটি প্রমাণ করে যে তিনি কোনো সাধারণ অপরাধী নন, তার বিমান এবং এরোডাইনামিক্স সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল। তার ফ্লাইট প্ল্যান ছিল বিমানটিকে মেক্সিকো সিটির দিকে উড়ে যেতে হবে, তবে রেনো, নেভাদায় জ্বালানি ভরার জন্য একটি স্টপ থাকবে। তিনি নির্দেশ দেন, বিমান থেকে ১০,০০০ ফুটের নিচে এবং প্রতি ঘণ্টায় ২০০ নট (প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার) এর কম গতিতে উড়তে হবে। সেই সাথে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো থাকতে হবে, ট্রেইলিং ফ্ল্যাপ ১৫ ডিগ্রিতে বাঁকানো থাকতে হবে এবং কেবিনের ভেতরের বায়ুচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এই সবগুলোই ছিল একটি বোয়িং ৭২৭ এর মতো বাণিজ্যিক জেটলাইনার থেকে প্যারাসুট দিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য আদর্শ এবং নিরাপদ পরিস্থিতি।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি ছিল বিমানের পেছনের দিকের সিঁড়ি বা আফটার স্টার সম্পর্কিত। বোয়িং ৭২৭ এর পেছনে একটি সিঁড়ি ছিল যা মাটি থেকে যাত্রী উঠানামার জন্য ব্যবহৃত হতো। কুপার নির্দেশ দেন উড্ডয়নের পর এই সিঁড়িটি নামিয়ে রাখতে হবে। এটি ছিল তার পালিয়ে যাওয়ার মূল পরিকল্পনা। এর আগে কোনো ছিনতাইকারী এই দুর্বলতাটি ব্যবহার করেনি।

রাত প্রায় ৭টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইট ৩০৫ সিয়াটল থেকে আবারও আকাশে ওড়ে। মার্কিন বিমান বাহিনী দুটি এফ-১০৬ ফাইটার জেটকে বিমানটিকে অনুসরণ করার জন্য পাঠায়, কিন্তু কুপারের নির্দেশ অনুযায়ী বিমানটি এত নিচ দিয়ে এবং ধীরগতিতে উড়ছিল যে রাতের অন্ধকারে ফাইটার জেটগুলো নিরাপদে খুব কাছাকাছি আসতে পারছিল না। তারা এমনকি কুপারকে ঝাঁপ দিতেও দেখেনি।

বিমানটি সিয়াটল এবং রেনোর মাঝপথে থাকাকালীন কুপার কেবিনে থাকা শেষ ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট টিনা ম্যাকলোকে ককপিটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। রাত ৮টার ঠিক পরে ককপিটের একটি সতর্কীকরণ বাতি জ্বলে ওঠে, যা নির্দেশ করে যে পেছনের সিঁড়িটি নামানো হয়েছে। এরপর রাত ৮টা ১৩ মিনিটে দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়াশিংটনের ঘন অন্ধকার জঙ্গলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিমানের লেজের অংশটি হঠাৎ সামান্য উপরের দিকে উঠে যায়। পাইলটরা বুঝতে পারেন কোনো ভারী বস্তু বিমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ড্যান কুপার ২ লক্ষ ডলারের ব্যাগ এবং দুটি প্যারাসুট সহ মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঠান্ডা এবং ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে ১০,০০০ ফুট উপর থেকে নিকষ কালো রাতের গভীরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

তদন্ত ও রহস্য এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিমানটি উড়তে থাকে। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে বিমানটি নেভাদার রেনো বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। এফবিআই এজেন্টরা বন্দুক হাতে বিমানটিকে ঘিরে ফেলে এবং ভেতরে প্রবেশ করে, কিন্তু তারা যা খুঁজে পায় তা হলো একটি খালি কেবিন, কুপারের ফেলে যাওয়া কালো ক্লিপ-অন টাই এবং দুটি প্যারাসুট। ডিবি কুপার উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।

এরপর শুরু হয় এফবিআই-এর ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল তদন্ত, যার সাংকেতিক নাম ছিল 'নোরজ্যাক' (NORJAK)। এফবিআই এজেন্ট, মার্কিন সৈন্য এবং শত শত স্বেচ্ছাসেবক মিলে ওয়াশিংটন এবং ওরেগনের সেই বিস্তীর্ণ এবং দুর্গম জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি চালায়। কিন্তু তারা কুপারের কোনো চিহ্ন, তার প্যারাসুট বা টাকার ব্যাগের কোনো অংশই খুঁজে পায়নি। এফবিআই প্রথম পাঁচ বছরেই ৮০০-এর বেশি সন্দেহভাজনকে জেরা করে, কিন্তু কারো বিরুদ্ধেই কোনো শক্ত প্রমাণ মেলেনি। 'ডিবি কুপার' নামটি আসলে একটি মিডিয়ার ভুল ছিল; ছিনতাইকারী নিজের নাম বলেছিল 'ড্যান কুপার', কিন্তু পুলিশ ঘটনার পরপরই পোর্টল্যান্ডের 'ডিবি কুপার' নামে এক ব্যক্তিকে জেরা করে এবং একজন রিপোর্টার ভুল করে সেই নামটি প্রকাশ করে দেন। এরপর থেকে ডিবি কুপার নামটি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়।

কুপার বিমানে যা কিছু ফেলে গিয়েছিলেন তা নিয়ে গবেষকরা দশকের পর দশক ধরে গবেষণা চালিয়েছেন। তার ফেলে যাওয়া টাই থেকে পরবর্তীতে ডিএনএর আংশিক প্রোফাইল পাওয়া গেলেও তা কোনো সন্দেহভাজনের সাথে মেলেনি। তবে টাই থেকে কিছু বিরল টাইটেনিয়ামের কণা পাওয়া গিয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা হয় যে কুপার হয়তো সে সময়ে বোয়িং এর মতো কোনো এরোস্পেস বা রাসায়নিক কারখানায় কাজ করতেন। তার এই একটি অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সমস্ত বোয়িং ৭২৭ বিমানে একটি বিশেষ যন্ত্র বা 'কুপার ভেন' (Cooper Vane) লাগানোর নির্দেশ দেয়, যা ছিল বিমান চলাকালীন পেছনের সিঁড়ি নামানো আটকানোর জন্য।

টাকার সন্ধান ও নতুন প্রশ্ন ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। ওয়াশিংটনের টিনাব নামক স্থানে আট বছর বয়সী এক বালক ব্রায়ান ইঙ্গলম্যান কলম্বিয়া নদীর তীরে বালিতে খেলার সময় মাটির নিচে পুঁতে রাখা তিনটি টাকার বান্ডেল খুঁজে পায়। সেগুলো ছিল ২০ ডলারের নোট, এবং এফবিআই নিশ্চিত হয় যে এগুলো সেই টাকা যা নয় বছর আগে ডিবি কুপারকে মুক্তিপন হিসেবে দেয়া হয়েছিল। সেখানে ছিল মোট ৫৮০০ ডলার, যা কুপার কেসের একমাত্র বাস্তব প্রমাণ। কিন্তু এই আবিষ্কার রহস্যের কোনো সমাধান করার পরিবর্তে আরও নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়। টাকাগুলো কুপারের ঝাঁপ দেওয়ার সম্ভাব্য স্থান থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে ছিল। কীভাবে এগুলো এখানে এলো? কুপার কি ঝাঁপ দেওয়ার সময় টাকার একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছিল, নাকি সে বেঁচে ছিল এবং পরে টাকাগুলো এখানে পুঁতে রেখেছিল? অথবা নদীর স্রোতে কি কয়েক বছর ধরে বান্ডেলগুলোকে এখানে ভাসিয়ে এনেছিল? টাকায় লেগে থাকা 'ডায়াটম' নামক এক ধরনের শৈবালের উপর গবেষণা করে গবেষকরা ধারণা করেন যে, টাকাগুলো সম্ভবত নদীতে ভেসে এসেছিল, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। সবচেয়ে বড় রহস্য হলো, বাকি ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২০০ ডলারের একটি নোটও আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কুপারের পরিণতি বিগত ৫০ বছরে অসংখ্য তত্ত্ব এবং সন্দেহভাজনের নাম উঠে এসেছে। তবে এফবিআই এবং অনেক বিশেষজ্ঞই বিশ্বাস করেন যে কুপারের সেদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। তিনি একটি প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে রাতের অন্ধকারে অপরিচিত এক দুর্গম জঙ্গলের উপর ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তার পরনে ছিল সাধারণ বিজনেস সুট এবং লোফার জুতো, যা সেই ঠান্ডার জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। অনেকেই মনে করেন তিনি হয়তো ঝাঁপ দেওয়ার সময়ই মারা গিয়েছিলেন অথবা মাটিতে নামার পর প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।

২০১৬ সালে প্রায় ৪৫ বছর ধরে তদন্ত চালানোর পর এফবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবি কুপার কেসটি ক্লোজ করে দেয়। তারা জানায় যে এই মামলার পেছনে আর অর্থ এবং সময় ব্যয় করা সম্ভব নয়। তবে যদি ভবিষ্যতে প্যারাশুট বা টাকার মতো কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তারা পুনরায় তদন্ত শুরু করবে।

ডিবি কুপারের গল্পটি শুধু একটি অমীমাংসিত অপরাধের কাহিনী নয়, এটি হলো সাহস, ধৃষ্টতা এবং রহস্যের এমন এক মিশ্রণ যা তাকে আমেরিকান লোককথার এক কিংবদন্তী চরিত্রে পরিণত করেছে।


মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৭:১২:৩৯
মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান
ছবিঃ সংগৃহীত

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা যে স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। কোরআনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুপ্রেরণায় মুসলমানরা বিজ্ঞানের সব শাখায় জ্ঞানচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন এবং এক অনন্য স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। পবিত্র কোরআনে মানুষের চিন্তা ও সৃষ্টিকে অন্বেষণের যে আহ্বান করা হয়েছে, তার ফলেই মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেয়। ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি তার বিখ্যাত গ্রন্থে বলেছেন, “কোরআনে এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা খণ্ডনযোগ্য।”

৫টি প্রধান ক্ষেত্রে মুসলিম অবদান

১. রসায়ন (Chemistry): রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান

প্রাচীন মিশরে রসায়ন চর্চা শুরু হলেও, তা প্রকৃত বৈজ্ঞানিক শাখায় রূপ নেয় মুসলমানদের হাতে। জাবির ইবনে হাইয়ানকে বলা হয় ‘রসায়নের জনক’। তিনি হারুনুর রশিদের শাসনামলে কুফায় তার গবেষণাগারে গন্ধক ও পারদের সংমিশ্রণে সোনা উৎপাদনের ফরমূলা আবিষ্কার করে পৃথিবীকে বিস্মিত করেছিলেন। তিনি প্রথমবার রাসায়নিক বিক্রিয়ার নীতি, গলন, স্ফুটন, পাতন ও স্ফটিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন। ঐতিহাসিক আমির আলি যথার্থই বলেছেন, “রসায়ন একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রশ্নাতীতভাবে মুসলমানদের আবিষ্কার।”

২. পদার্থবিজ্ঞান (Physics): আলোকবিজ্ঞানের সূচনা

পবিত্র কোরআনের সুরা নূর-এর অনুপ্রেরণায় মুসলমান বিজ্ঞানীরা আলোর রহস্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইবনে হাইসাম (আলহাজেন) আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত। তার লেখা ‘কিতাব আল-মানাজির’ গ্রন্থে তিনি আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সঠিক ব্যাখ্যা দেন। তিনিই প্রথম ক্যামেরা অবস্কিউরা-এর ধারণা দেন, যা আধুনিক ক্যামেরার ভিত্তি।

৩. চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science): ইবনে সিনা ও আল-জাহরাবি

ইসলাম চিকিৎসাকে ধর্মীয় দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইসলামী চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্থান ঘটে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে।

ইবনে সিনা: তিনি চিকিৎসাবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তার বিখ্যাত ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ গ্রন্থটি কয়েক শতাব্দী ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।

আবুল কাসেম আজ-জাহরাবি: তিনি সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের জনক। তিনি প্রথম সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন।

ইবনে নাফিস: তিনিই প্রথম রক্ত সঞ্চালনের ধারণা দেন, যা আধুনিক শারীরবিদ্যার এক মৌলিক আবিষ্কার।

৪. গণিত ও বীজগণিত (Mathematics and Algebra): অ্যালগরিদমের জন্ম

সংখ্যা ও পরিমাপ ছাড়া বিজ্ঞান কল্পনাই করা যায় না। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি-এর নাম থেকেই অ্যালগরিদম শব্দের উৎপত্তি। তার ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ গ্রন্থ থেকেই অ্যালজেবরা শব্দের জন্ম। তিনি প্রথম ‘শূন্য’ ধারণা প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টির মতে, “ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত ও জ্যামিতি প্রধানত মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”

৫. সমর বিজ্ঞান (Military Science) ও জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)

সামরিক: ওমর (রা.) সৈন্যদের বেতন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ‘দিওয়ান’ পদ্ধতি চালু করেন। উমাইয়া যুগে মুসলমানরা প্রথম ‘মিনজানিক’ নামক কামান বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। মুআবিয়া (রা.)-এর সময় গঠিত হয় মুসলমানদের প্রথম নৌবাহিনী।

জ্যোতির্বিজ্ঞান: কোরআনের অনুপ্রেরণায় আল-ফারাবি প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্র আবিষ্কার করেন। মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহারিক পরিমাপ প্রবর্তন করেন।

ইসলামী বিজ্ঞানের প্রভাব

মুসলিম বিজ্ঞানীরা ইউরোপে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেন। বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমা’ বা হাউস অফ উইজডমে অনুবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রীক, পারস্য ও ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে ইসলামী চিন্তার সঙ্গে একীভূত করা হয়, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় রেনেসাঁঁর জন্ম দেয়। ইসলামী সভ্যতার সেই অর্জন আজও মানবজাতির অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক।

লেখক: শিক্ষার্থী ও দপ্তর সম্পাদক, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার কলাম এন্ড কনটেন্ট রাইটার্স


১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৬:৩২:২১
১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই
ছবিঃ সংগৃহীত

এক শতাব্দী আগে, ১৯২৯ সালে, স্কটিশ উদ্ভাবক এডউইন হাবল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার এক পর্যবেক্ষণাগার থেকে এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে আসেন।

তিনি ঘোষণা করেন যে, কোনো ছায়াপথ (Galaxy) আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে মহাকাশে সরে যাচ্ছে। হাবলের এই কাজ প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

গ্রেট ডিবেট এবং মিল্কি ওয়ের বাইরে জগৎ

১৯১৯ সালে হাবল মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি বড় বিতর্ক চলছিল, যা 'দ্য গ্রেট ডিবেট অফ ১৯২০' নামে পরিচিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হার্লো শেপলি জোর দিচ্ছিলেন যে আমাদের পরিচিত স্থানীয় ছায়াপথ (Milky Way) এতই বিশাল যে এর বাইরে আর কোনো মহাজাগতিক বস্তু নেই। অন্যদিকে, হেবার কার্টিস যুক্তি দেন যে আমাদের ছায়াপথের বাইরেও অন্য ছায়াপথ বিদ্যমান।

এই বিতর্কে প্রবেশ করে হাবল মাউন্ট উইলসনের ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অ্যান্ড্রোমিডা ‘নেবুলা’-র দিকে নজর দেন। নেবুলা ছিল সে সময় আকাশের অনির্দিষ্ট আলোর মেঘকে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ।

হেনরিটার কাজ ও হাবলের গণনা

অন্যান্য ছায়াপথের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হার্ভার্ড কলেজ অবজারভেটরির হেনরিয়েটা সোয়ান লেভিট-এর কাজ হাবলের জন্য ভিত্তি তৈরি করে দেয়। লেভিট সেফেইড ভ্যারিয়েবল নামের এক শ্রেণির তারার উজ্জ্বলতা এবং তাদের পালসেশন পিরিয়ডের (আলোর বাড়া-কমার সময়কাল) মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আবিষ্কার করেন, যা এখন লেভিট’স ল (Leavitt's Law) নামে পরিচিত।

১৯২৩ সালের শরতে হাবল অ্যান্ড্রোমিডা নেবুলাতে প্রথম সেফেইড শনাক্ত করেন। এই স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেলগুলোর সাহায্যে তিনি হিসাব করে দেখেন, অ্যান্ড্রোমিডা প্রায় ১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত—যা আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে উদার অনুমান থেকেও অনেক বেশি।

এই আবিষ্কারের খবর পেয়ে শেপলি তার এক সহকর্মীকে বলেছিলেন, "এই সেই চিঠি যা আমার মহাবিশ্বকে ধ্বংস করে দিল।" এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অন্যান্য ছায়াপথের অস্তিত্বের বিতর্ক চিরতরে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

প্রসারিত মহাবিশ্ব ও রেডশিফ্টিং

কয়েক বছর পর হাবল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেন। এর আগে ১৯১২ সালের দিকে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেস্টো স্লাইফার অ্যান্ড্রোমিডার মতো নেবুলাগুলোর ‘রেডশিফ্টিং’ আবিষ্কার করেন। সহজ কথায়, কোনো বস্তু যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তার আলো বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে সরে যায়। স্লাইফার দেখলেন, অধিকাংশ নেবুলাই দ্রুত গতিতে সরে যাচ্ছে।

১৯২৮ সালে হাবল তার সহকারী মিলটন হিউম্যাসনকে নিয়ে এই রেডশিফ্টিংয়ের তথ্য এবং ছায়াপথগুলোর দূরত্ব গণনা করেন। পরের বছর ১৯২৯ সালে হাবল তার গবেষণাপত্র "A Relation Between Distance and Radial Velocity Among Extra-Galactic Nebulae" প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রটি ঘোষণা করে যে:

মহাকাশের কোনো বস্তুর বাইরের দিকে যাওয়ার গতি (velocity) তার পৃথিবী থেকে দূরত্বের সমানুপাতিক (Hubble constant)।

অর্থাৎ, একটি ছায়াপথ আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে সরে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তই মহাবিশ্বের প্রসারণের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করে।

হাবলের উত্তরাধিকার

হাবল তার আবিষ্কারের চূড়ান্ত কারণ ব্যাখ্যা না করলেও, পরবর্তী বিজ্ঞানীরা তার পর্যবেক্ষণকেই মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন। তার গণনা করা কিছু সংখ্যায় সামান্য ত্রুটি ছিল (যেমন অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব এখন ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ এবং হাবল কনস্ট্যান্টের মান বর্তমানে ৭০ কিমি/সে/এমপিসি), তবুও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার প্রভাব ছিল বিশাল।

অধ্যাপক এড বুই বলেন, “তিনি প্রায় একটি নতুন শাখার জন্ম দিয়েছেন—এক্সট্রাগ্যালাকটিক অ্যাস্ট্রোনমি।” হাবলের এই উত্তরাধিকারই ১৯৯০ সালে উৎক্ষেপিত শক্তিশালী হাবল স্পেস টেলিস্কোপ-এর নামকরণের অনুপ্রেরণা।

পাঠকের মতামত: