অবশেষে মিললো খোঁজ: আব্দুল হামিদের বর্তমান অবস্থান কোথায়?

সত্য নিউজ: ৭ মে দিবাগত রাতে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ ত্যাগ করেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তার এই আকস্মিক সফর এবং সফরের সময় ব্যবহৃত কূটনৈতিক পাসপোর্ট ঘিরে দেশে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও নানা প্রশ্ন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি আবদুল হামিদের নামে ১০ বছর মেয়াদী একটি কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, যার মেয়াদ ২০৩০ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট পাসপোর্টটি "ডি০০" নম্বরধারী এবং ‘ডি’ কোড দ্বারা নির্দেশিত পাসপোর্টটি শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে।

চিকিৎসা না প্রটোকল: কীসের ভিত্তিতে এই সুবিধা?বর্তমানে সাবেক রাষ্ট্রপতি থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ড. হারিত সুয়ানরাসমির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার বায়োপসি ও অন্যান্য স্ক্যান পরীক্ষার পর চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করা হবে। যদিও তিনি এখনও হাসপাতালে ভর্তি হননি, অবস্থান করছেন ব্যাংককের সুকুম্ভিত এলাকায়। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং শ্যালক ডা. নওশাদ খান।

তবে এ সফরের উদ্দেশ্য, সময় ও ব্যবহৃত পাসপোর্টের ধরন নিয়ে জনমনে এবং প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, একজন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

কূটনৈতিক পাসপোর্টের বৈধতা ও নীতিগত বিতর্কবাংলাদেশে বর্তমানে চালু রয়েছে তিন ধরনের পাসপোর্ট:

সবুজ (সাধারণ) পাসপোর্ট: সাধারণ নাগরিকদের জন্য, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

নীল (অফিশিয়াল) পাসপোর্ট: সরকারি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য।

লাল (ডিপ্লোম্যাটিক) পাসপোর্ট: রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, উপাচার্য ও বিদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের জন্য সংরক্ষিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দায়িত্বে না থাকা অবস্থায় কূটনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করা রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও দৃষ্টান্তের ব্যত্যয় ঘটায়। এটি ‘প্রিভিলেজ অ্যাবিউজ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তোলে।

অবাক করা বিষয় হলো, বর্তমান সরকার অনেক সাবেক ও বর্তমান পদস্থ ব্যক্তির কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে নাগরিক সমাজে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ক্ষোভ ও সন্দেহ।

সরকার ও প্রশাসনের নিশ্চুপ অবস্থানএ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। আবদুল হামিদের সফরের সময়, ব্যবহৃত কাগজপত্র বা তার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও নেই কোনো সরকারি বিবৃতি।

সাবেক রাষ্ট্রপতির আকস্মিক এই সফর, কূটনৈতিক পাসপোর্টের ব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় স্তরে এ বিষয়ে নিরবতা—সব মিলিয়ে জন্ম দিয়েছে এক জটিল প্রশ্নপত্র, যার উত্তর এখনো অস্পষ্ট।

উপসংহারব্যক্তিগত চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ সফর করা একজন নাগরিকের অধিকার। তবে দায়িত্ব থেকে অবসরের পরও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল বজায় রেখে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ কতটা ন্যায্য ও নীতিগত, তা নিয়ে বিতর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। সাবেক রাষ্ট্রপতির এই সফর যদি নীতিগত সীমা লঙ্ঘন করে থাকে, তবে তার জবাবদিহি থাকা উচিত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। অন্যথায়, এটি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও পাসপোর্ট ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।