সিলেটে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগে ছাত্র সংগঠনের নেতারা মামলার মুখে

সত্য নিউজ:সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরেই তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। একই সংগঠনের নারী নেত্রী সুমাইয়া আক্তার মামলা করেছেন সংগঠনের চার নেতার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগে। ঘটনাটি ইতোমধ্যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে।
সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান আহমদ ওরফে খুরশেদ, যুগ্ম সদস্যসচিব ফখরুল হাসান এবং রেদোয়ার মুনসি এই চারজনের বিরুদ্ধে বুধবার (১৩ মে) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে মামলা করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমাইয়া আক্তার।
সুমাইয়ার দাবি, গত ৭ মে তিনি অপহরণ, খুন ও ধর্ষণের হুমকি পান ওই চারজনের কাছ থেকে। শুধু হুমকি নয়, ১০ মে তাঁর ওপর সরাসরি হামলার ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি। ঘটনার পর তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন এবং পরে আদালতের শরণাপন্ন হন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুর রহমান জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম দাবি করেন, “রেদোয়ার মুনসি আমাদের কমিটির কেউ নন। পুরো ঘটনাটি সাজানো। অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদের সামাজিকভাবে হেনস্তা করতেই এমনটা করা হয়েছে।”
মেঘনার বুকে ভেসে উঠল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের লাশ, স্তব্ধ পরিবার-সহকর্মীরা
বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার (৭১) নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্বজনেরা। শুক্রবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বলাকির চর এলাকার মেঘনা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। দীর্ঘদিনের অভ্যাস অনুযায়ী বিকেল পাঁচটার মধ্যে তিনি বাসায় ফেরেন। কিন্তু সেদিন আর ফেরেননি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল ফোনটিও তিনি বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। রাত নামার পরও তাঁর কোনো খোঁজ না মেলায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। রাত ৯টার দিকে ছেলে ঋত সরকার আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিশ্চিত হন যে তিনি অফিসেও যাননি। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি ব্যর্থ হলে পরিবার রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
মেঘনায় ভাসমান মরদেহ
নিখোঁজ হওয়ার পরদিন শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে স্থানীয়রা মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ ভাসতে দেখেন। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ খবর দিলে কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেন। উদ্ধারকৃত মরদেহটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ পাঠান বলেন, “মরদেহের ছবি রমনা থানায় পাঠানো হয়েছে। বিভুরঞ্জন সরকারের স্বজনেরা ছবিটি দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি তাঁরই মরদেহ।” একই কথা জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম। তাঁর ভাষায়, “পরিবারের দেওয়া ছবির সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মরদেহের মিল রয়েছে। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে ধরে নিচ্ছি এটি সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের লাশ।”
শোকাহত স্বজনদের প্রতিক্রিয়া
সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের শ্যালক দীপঙ্কর সাহা বলেন, “ছবিটি আমরা দেখেছি। এটি আমার ভগ্নিপতির সঙ্গেই মিলে গেছে।” তাঁর ছেলে ঋত সরকার জানান, “উদ্ধার হওয়া মরদেহটি বাবারই হতে পারে। আমরা মর্গের পথে রয়েছি।”
সাংবাদিক সমাজে শোকের ছায়া
বিভুরঞ্জন সরকারের আকস্মিক মৃত্যুতে সাংবাদিক মহলে নেমে এসেছে গভীর শোক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন পেশাদারিত্ব, সততা ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নবীন সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
আজকের পত্রিকার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বিভুরঞ্জন সরকার সব সময়ই সংবাদকে দেখতেন জনগণের আস্থার জায়গা হিসেবে। তাঁর অনুপস্থিতি কেবল একটি পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো গণমাধ্যম অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি কোনো অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে প্রাথমিকভাবে তদন্ত চলছে।
মানবিক দিক ও প্রেক্ষাপট
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু আবারও প্রশ্ন তুলেছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে। দেশে একের পর এক সাংবাদিক নিখোঁজ ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। পেশার কারণে তাঁরা অনেক সময় নানা ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েন। সহকর্মীরা মনে করছেন, বিভুরঞ্জনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সময়ের দাবি।
বাউফলে এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
পটুয়াখালীর বাউফলে সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) বাসায় প্রবেশ করে চাঁদা দাবি ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা কাবিল মৃধা (৩৮) নওমালা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি এবং বটকাজল গ্রামের মৃত রুস্তম আলী মৃধার ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় মদ্যপ অবস্থায় কাবিল মৃধা হাতে ছুরি নিয়ে বাউফল উপজেলার এএসপি মো. শফিকুল ইসলামের বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি এএসপির বাবা আব্দুল মোতালেবের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কাবিল বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করেন।
স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাবিল মৃধার তাণ্ডব থামান এবং তাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পরে রাত ৯টার দিকে বাউফল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করে।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, “চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরের অভিযোগে কাবিল মৃধাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
-রফিক
পাথর লুটে আমাদের কোনো কর্মীও জড়িত নয়, দুদককে ক্ষমা চাইতে হবে’: জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী সাদাপাথর লুটে তাদের নেতৃত্বকে জড়িয়ে করা দুদকের প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নগরীর দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াত এই দাবি জানায়।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, দুদকের প্রতিবেদনে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর নাম না থাকার পরও সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী দুদকে খোঁজ নিয়েও এ ধরনের কোনো তদন্ত প্রতিবেদনের হদিস পায়নি।
ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যমের রিপোর্টকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কাল্পনিক ও ফরমায়েশি’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, প্রমাণ ছাড়া দুদক এ ধরনের প্রতিবেদন করলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি আরও বলেন, পাথর লুটে জামায়াতের কোনো নেতা তো দূরের কথা, কোনো কর্মীও জড়িত নয়। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীন, মহানগর সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী এবং নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল।
/আশিক
আবারও খোলা হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬ গেট, পানিবন্দি ২০ হাজার
বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি ছেড়ে দিতে আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট। এর ফলে রাঙামাটি সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। হ্রদে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বুধবার রাত ৮টার পর বাঁধের সবগুলো গেট ৬ ইঞ্চি করে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর আবার ১০৮ ফুট (এমএসএল) অতিক্রম করেছে, যা বিপৎসীমার ওপরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বুধবার রাত ৮টা থেকে গেট খুলে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫টি ইউনিট চালু থাকায় আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হচ্ছে, যার ফলে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, পানি ছাড়ার কারণে ভাটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। বৃহস্পতিবার সকালে হ্রদের পানির স্তর ছিল ১০৮ দশমিক ৩৫ ফুট উচ্চতায়, যেখানে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট।
তিনি আরও জানান, হ্রদের পানির গতিপ্রবাহ এবং বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। এর আগে, ৫ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত হ্রদের পানির স্তর ১০৯ ফুটের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় বাঁধের গেটগুলো ৩ ফুট করে উঠিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, লাগাতার বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। পানির নিচে তলিয়ে গেছে রাঙামাটির বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, সদরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। জেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দি লোকজনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
/আশিক
পাথর লুটে জড়িত ৫২ জনের নাম প্রকাশ:তালিকায় রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের নাম
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর লুটপাটের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ও সুবিধাভোগী ৫২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত প্রতিবেদনে। এই তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ, এনসিপি-এর নেতাদের পাশাপাশি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর নামও রয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা থেকে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগী হিসেবে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিগত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করা চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বিজিবি-এর নাম উঠে এসেছে। সরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও পাথর লুটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ, এনসিপিসহ ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার এনফোর্সমেন্ট বিভাগের নির্দেশে গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল সাদাপাথরে অভিযানে যায়। বুধবার (২০ আগস্ট) সেই প্রতিবেদন জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়।
দুদকের দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু পর্যটন সেবা এবং নদীর তীরেই বিজিবি ক্যাম্প টহল চালু থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক মাসে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ এভাবে সরানো হয়েছে। পাথর আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশ ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না থাকলেও গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে, বিশেষ করে গত ৩ মাস ধরে পাথর উত্তোলন চলতে থাকে। পর্যটন এলাকাটি সংরক্ষিত পরিবেশ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ১৫ দিন আগে থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন ও আত্মসাৎ হয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ পাথর তুলে এলাকায় অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীকে দায়ী করে বলা হয়, ৮ জুলাই তিনি পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন?’ তার এই বক্তব্যটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলে সাদাপাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা ও ব্যর্থতা স্পষ্ট বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর লুটপাট ঠেকাতে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিলেও তিনি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বর্তমানে কর্মরত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চারজন ইউএনওকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাথরকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনিসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণ করে পাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত প্রতি ট্রাক পাথর থেকে ১০ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। যার মধ্যে পুলিশের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের জন্য ৫ হাজার টাকা বণ্টন হতো।
প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সাদাপাথর এলাকায় বিজিবির ৩টি পোস্ট থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছে। বিজিবি সদস্যরা প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দিত এবং পাথর উত্তোলনের সময় কোনো বাধা দিত না।
রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের নাম:
প্রতিবেদনে পাথর লুটে জড়িত হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন:
বিএনপি: সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি লাল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স।
আওয়ামী লীগ: কার্যক্রম নিষিদ্ধ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া এবং সাইদুর রহমান।
জামায়াত: সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফকরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।
এনসিপি: সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
অন্যান্য: আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম এবং মুকাররিম আহমেদ।
দুদকের প্রতিবেদনে নাম আসায় সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদী, মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন সাহান প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগগুলোকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তারা এর নিন্দা জানান।
/আশিক
গ্যাস পাম্পে বিস্ফোরণ: নবীগঞ্জে সিএনজি স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি সিএনজি ফুয়েল স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গ্যাস পাম্পে থাকা একটি বাস ও ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে উপজেলার আউশকান্দি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পাম্পের সহকারী ম্যানেজার শোয়েব আহমদ জানান, ভোর ৫টার দিকে একটি বাস গ্যাস স্টেশনে গ্যাস নিতে আসে। বাসটিতে গ্যাস ভরা হচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর মুহূর্তেই আগুন পুরো পাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে গ্যাস নিতে আসা ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
পাম্পের তিনতলায় ঘুমিয়ে থাকা কয়েকজন কর্মী প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে পাম্পের কর্মী রাসেল (২৫) এবং ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন (৪০)-সহ আরও ৪ জন সিএনজিচালক রয়েছেন।
নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তিনি জানান, আগুনে ১০টি সিএনজি ও একটি বাস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মালিকপক্ষ প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন।
কাঁচাবাজারে আগুন: কাঁচামরিচের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে
ফেনীতে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এক মাস আগেও যে কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বাজারগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে কাঁচামরিচ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে কিনে খুচরা বাজারে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় বিক্রেতাদের মতে, জুলাই মাসে বন্যার কারণে কাঁচামরিচসহ সবজির ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
দোকানদাররা জানান, মূলত বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া, বৃষ্টিকে অজুহাত করে আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারাও বাড়তি দাম নিচ্ছেন, যা সামগ্রিক দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
ছাগলনাইয়া বাজারের একজন দোকানদার জানান, বর্তমানে সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ৮০ টাকার ওপরে। এতে সাধারণ মানুষ কাঁচা তরকারি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ছাগলনাইয়া পৌর শহরে বাজার করতে আসা শেখ কামাল বলেন, শুধু কাঁচা পেঁপে ছাড়া প্রতিটি সবজির দামই আকাশছোঁয়া। এমনিতেই ফেনী একটি বন্যা-কবলিত এলাকা, তার ওপর কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এতে সাধারণ জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
/আশিক
লুটপাট শেষে লোক দেখানো অভিযান: উদ্ধার হয়নি ২ শতাংশ পাথরও
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রসহ কয়েকটি এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে লুটপাট চালিয়ে প্রায় ৪ কোটি ঘনফুট পাথর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে এই প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ স্থানগুলো এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং একাধিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এই লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরাসরি জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে।
দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই চক্র পাথর চুরি করে প্রথমে স্থানীয় স্টোন ক্রাশার কারখানাগুলোতে জমা করত, এরপর তা ভেঙে ছোট টুকরো করে অস্তিত্ব নষ্ট করে দিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লুট হওয়া পাথর প্রতি ট্রাকে ৫০০ ঘনফুট করে সরিয়ে নেওয়া হতো। প্রতি ঘনফুট ১৮২ টাকা দরে এক ট্রাক পাথরের দাম পড়তো ৯১ হাজার টাকা। অভিযোগ আছে, এর মধ্যে ট্রাকপ্রতি ১০ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে যেত জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ডিবি, ওসি এবং এসপি-সার্কেল এসপির পকেটে। এছাড়া নৌকাপ্রতি ১ হাজার টাকা তোলা হতো, যার মধ্যে ৫০০ টাকা করে ভাগ হতো জেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের মধ্যে। এই ঘুষের টাকা পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে এসপি, সার্কেল এসপি, ওসি, ডিবি ও থানার অন্যান্য কর্মকর্তারা ভাগ করে নিতেন। এমনকি পুলিশের অভ্যন্তরীণ নজরদারি সংস্থা পিআইও-এর দুই সদস্য এসআই রানাকান্ত ও কনস্টেবল দেলোয়ারও এই ভাগ নিতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী এবং সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের চারজন সাবেক ইউএনও— আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, ঊমী রায় এবং আবিদা সুলতানার বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার দায় পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কর্মকর্তা নামমাত্র ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, যা লুটপাট বন্ধে কার্যকর ছিল না।
পুলিশের দায়দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটের এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে পাথর লুটপাটে সহায়তা করেছেন। পুলিশের সোর্সরা নিজেরাই এই চাঁদা তুলত।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পাথর উত্তোলনে বিজিবি সদস্যদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ৪৮ বিজিবি সিলেট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে তবে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি একটি ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে জানান, নামধারী কিছু সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আটক নৌকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল, এতে ব্যর্থ হয়ে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর অন্তত ৩১ জন রাজনৈতিক নেতার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওদুদ আলফু এবং আরও অনেকে।
/আশিক
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে গণহত্যাকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম
আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এই নতুন পাঠ্যসূচিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম গণহত্যাকারী হিসেবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, গত চারটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের ইতিবৃত্তও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে স্থান পাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই অনুমোদনবিষয়ক এক সভায় এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের দ্বিতীয় পত্রে ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত পাতানো নির্বাচন, ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের ‘দিনের ভোট রাতে’ এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের প্রকৃত ইতিহাস যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর পাশাপাশি, শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ্যবইয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় ভাষণটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) তা নাকচ করে দেয়। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী সমকালকে নিশ্চিত করেছেন যে, অষ্টম এবং একাদশ শ্রেণির বইয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে ভাষণটি থাকবে।
একই বৈঠকে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা বই থেকে ‘রহমানের মা’ গল্পটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারণে এবং ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটি কটু ভাষার কারণে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়, যা অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া, জুলাই আন্দোলন নিয়ে লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরব গাথা’ প্রবন্ধে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ ওঠায় সেটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবকারীরা বলেছেন, প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে’ আন্দোলন হিসেবে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি, ‘শাসক’ ও ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’র মতো শব্দগুলো পরিবর্তন করে যথাক্রমে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’ ও ‘আওয়ামী লীগ’ যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন পাঠ্যক্রমে কোনো রাজনৈতিক দলের একক ব্যক্তির অতিরঞ্জিত বন্দনা বাদ দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ইতিহাস উপস্থাপন করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস, বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং পৌরনীতি বইয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গটি যুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন পায়। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও একাত্তর-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ উপস্থাপনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
/আশিক
পাঠকের মতামত:
- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, অতি ভারি বর্ষণেরও সম্ভাবনা
- দেশের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি: চরমোনাই পীর
- গাজায় ইসরাইলের হামলা বৃদ্ধি, গত একদিনে আরও ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত
- মেঘনার বুকে ভেসে উঠল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের লাশ, স্তব্ধ পরিবার-সহকর্মীরা
- শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে গণমাধ্যমকে সতর্ক করল অন্তর্বর্তী সরকার
- আওয়ামী লীগ থেকে একসঙ্গে ৮ নেতার পদত্যাগ
- সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য সুখবর!
- ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বে জয়ী মাহফুজ আলমের বাবা
- বিএসএফের হাতে বিজিবি সদস্য আটক
- বাউফলে এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
- রাজধানীর বাজারে সবজির আগুন, খালি হাতে ফিরছেন অনেকে
- জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সম্মেলনের উদ্যোগে ইউনূস
- গাজা শহর দখলের চূড়ান্ত নির্দেশ নেতানিয়াহুর
- আগে গণপরিষদ নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধন, তারপর জাতীয় নির্বাচন: আখতার হোসেন
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক ধারা: বাড়ল ৫০ মিলিয়ন ডলার
- আমার ছেলেকে ভালোবাসবেন: আরিয়ানের প্রথম কাজ নিয়ে শাহরুখ
- দলের টানা হারে অস্ট্রেলিয়া সফরে টাইগার যুবাদের স্বপ্নভঙ্গ
- ‘বাংলায় কথা বলার’ কারণে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মারধর, শিকার ভারতীয় নাগরিক!
- জামায়াতের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না’: হামিদুর রহমান আযাদ
- পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়: তারেক রহমান
- পাথর লুটে আমাদের কোনো কর্মীও জড়িত নয়, দুদককে ক্ষমা চাইতে হবে’: জামায়াত
- দুর্নীতির ফাঁদে ইমরান: সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেন, তবুও মুক্তি মিলছে না
- একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
- আবারও খোলা হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬ গেট, পানিবন্দি ২০ হাজার
- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, এরপর কোনো পদে থাকব না: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
- পাথর লুটে জড়িত ৫২ জনের নাম প্রকাশ:তালিকায় রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের নাম
- ক্ষুধার্ত দেশে উপদেষ্টাদের হাঁসের মাংস বিলাস কষ্ট দেয়: বিএনপি নেতা আলাল
- ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে উমামার প্রতিদ্বন্দ্বিতা
- ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হামলা
- বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা চুক্তির মাধ্যমে পেয়েছিল অবৈধ সুবিধা
- এবার ভিসা ছাড়াই যাবেন পাকিস্তানে
- মালয়েশিয়ায় অভিযানে ৯৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
- বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় পাকিস্তান
- দুদক মামলায় খালাস বিএনপি নেতা সেলিম ভূঁইয়া
- ২১ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারবাজারে সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণ
- ২১ আগস্ট ২০২৫ আজকের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ
- ২১ আগস্ট শেয়ারবাজারে দরপতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ২১ আগস্ট শেয়ারবাজারে শীর্ষ দশ গেইনার
- অর্ধেক ঋণই ঝুঁকিপূর্ণ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের নতুন রিপোর্টে ভয়াবহ চিত্র
- শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো ও ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ দর-বদলের চিত্র
- পিআর পদ্ধতি ভয়ংকর, ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ এর ফল: ড. বদিউল আলম মজুমদার
- মব হামলা ইতিহাসের ওপর আক্রমণ: আইনজীবী সারা হোসেন
- রহিমা ফুডসের শেয়ার মালিকানা বদল
- আধুনিক দাম্পত্যের জটিলতাকে মজাদার ভঙ্গিতে উপস্থাপন: ‘স্প্লিটসভিল’
- শেয়ারবাজারে আলোচনায় এনসিসি ব্যাংক
- গ্যাস পাম্পে বিস্ফোরণ: নবীগঞ্জে সিএনজি স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
- রূপালী ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং ফলাফল প্রকাশ
- নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি: টিসিবির লাইনে এখন মধ্যবিত্ত ও শিক্ষার্থীরা
- আক্রাসিয়া ইফেক্ট: কেন আমরা পরিকল্পনা করেও কাজ করি না
- জীবনে সফল হতে শিখুন কৃতজ্ঞতা: ৭টি পরিস্থিতিতে বলুন “ধন্যবাদ”
- ইরাকে আলেমের চমক: কোরআনের আয়াতেই মুহূর্তে সুস্থ হচ্ছেন রোগীরা
- ফেসবুক পোস্টে রনির বিরুদ্ধে জুলকারনাইন সায়েরের ক্ষোভ
- একাদশে ভর্তি: প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ হলো,যেভাবে দেখবেন
- ১৭ আগস্ট ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ শেয়ার
- বক্স অফিস রিপোর্ট: ‘কুলি’র বাজিমাত, পিছিয়ে ‘ওয়ার ২’, আর ‘ধূমকেতু’র রেকর্ড
- গ্রেটার চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন ইউকে (জিসিএ) এর বার্ষিক পিকনিক প্রাণের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
- আল্লাহ আমাকে পাকিস্তানের অভিভাবক বানিয়েছেন,প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই: মুনির
- গুজবের পর্দা ফাঁস: তারকাদের টাকার বিনিময়ে মুজিবকে নিয়ে পোস্ট? জানা গেল আসল সত্য
- আলবার্ট আইনস্টাইনের শেষ মুহূর্ত: এক ছবিতে ধরা পড়ল এক যুগের অবসান
- আখেরি চাহার শোম্বা: সফর মাসের শেষ বুধবারের ইতিহাস ও তাৎপর্য
- দেশের স্বর্ণের বাজার স্থিতিশীল, জানুন ভরি প্রতি দাম
- শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো ও ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ দর-বদলের চিত্র
- জিআইবি জানালো আইপিও অর্থ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতার কারণ
- খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
- রহিমা ফুডসের শেয়ার মালিকানা বদল