ফুলবাড়ীতে রোগাক্রান্ত মৃত গরুর মাংস বিক্রি অতঃপর...

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৮:১৭:৪২
ফুলবাড়ীতে রোগাক্রান্ত মৃত গরুর মাংস বিক্রি অতঃপর...

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় জনসচেতনতা ও তৎপরতার মাধ্যমে একটি ভয়াবহ খাদ্য-অপরাধ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত মরা গরুর মাংস গোপনে বাজারে বিক্রির চেষ্টাকালে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক কসাই। পরে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকায়।

আটককৃত কসাইয়ের নাম শাহানুর রহমান (৪২)। তিনি শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ভুরিয়ারকুটি গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত জোবেদ আলীর পুত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহানুর দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে রোগাক্রান্ত ও মৃত পশু জবাই করে বিভিন্ন বাজারে মাংস বিক্রি করতেন, তবে এতদিন তাকে হাতেনাতে ধরা সম্ভব হয়নি।

শুক্রবার রাতে শাহানুরের এক সহযোগী একটি অটোরিকশাযোগে বস্তাভর্তি মাংস নিয়ে নয়াবাজারে প্রবেশ করার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা অটোরিকশা থামাতে বললে সহযোগী ব্যক্তি পালিয়ে যান। পরে বস্তা খুলে দেখা যায়, ভেতরে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত মাংস রয়েছে, যা দেখে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর শাহানুর ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি স্বীকার করে নেন এবং মাংস পুঁতে রাখার প্রস্তাব দেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতা তার কথায় সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে।

পরদিন শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক ও উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মওদুদ হাসান ঘটনাস্থলে যান। তারা শাহানুরের দোকান তল্লাশি করে আরও পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত মাংস উদ্ধার করেন এবং ইউএনওর উপস্থিতিতে তা মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম জানান, “এ ধরনের অপরাধ শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও ভয়াবহ হুমকি। ওই কসাইয়ের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই এবং তিনি নিয়মিত নোংরা, পচা মাংস বিক্রি করে আসছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর নজরদারি বজায় থাকবে। শাহানুর রহমানকে সতর্ক করে দিয়ে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হবে এবং লাইসেন্স ছাড়া তার মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের এমন তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেন, শাহানুরের মতো কসাইয়ের কারণে শুধু ফুলবাড়ীর মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েনি, বরং গোটা অঞ্চলে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরুর মাংস মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনসচেতনতার এক সফল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এটি আরও একটি বার্তা দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনিক কঠোরতা দুটোই জরুরি। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, এমন নজিরবিহীন পদক্ষেপ অন্যান্য অসাধু ব্যবসায়ীদেরও সাবধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের জনস্বাস্থ্য হুমকি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ