তারেক-ফখরুলকে ট্যাগ করে চাঁদাবাজির বিস্ফোরক অভিযোগ সারজিসের

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৩ ১৪:৪৫:১৬
তারেক-ফখরুলকে ট্যাগ করে চাঁদাবাজির বিস্ফোরক অভিযোগ সারজিসের

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাথর ও বালুবাহী পরিবহন থেকে নিয়মিতভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ২ জুলাই রাত ১টা ১৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ করেন।

স্ট্যাটাসে সারজিস আলম সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ট্যাগ করে বলেন, “বিএনপির নাম ব্যবহার করে যারা মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কি অবস্থান নেবে বিএনপি?”

স্ট্যাটাস অনুযায়ী, সরকার অনুমোদিত পাথর ও বালুর সাইটগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া পরিবহনগুলো থেকে স্থানীয় একটি চক্র প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। নিয়মিত লক্ষাধিক টাকা ‘চাঁদাবাজির নামে’ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সারজিস লেখেন, “আজকে পাটগ্রামের ইউএনও সেই চাঁদাবাজদের মধ্য থেকে দুজনকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এরপরেই বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকশ নেতাকর্মী থানা ঘেরাও করে, ভাঙচুর চালায় এবং আটককৃতদের ছিনিয়ে নেয়।”

তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পাটগ্রাম থানা থেকে পাশের হাতীবান্ধা থানায় পুলিশের বাড়তি ফোর্স চাওয়া হলে, সেখানে গিয়েও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা থানা অবরুদ্ধ করে রাখে।

সারজিস আলমের অভিযোগ শুধু চাঁদাবাজি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “যদি বিএনপি এখনই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের লাগাম না টানে, তাহলে ভবিষ্যতে দল ক্ষমতায় এলে দেশ সংস্কার কিভাবে সম্ভব হবে?”

তিনি লিখেছেন, “স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, যিনি এমপি হতে আগ্রহী, তার মদদেই এই অপকর্ম চলছে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করা তো দূরের কথা, উল্টো থানা অবরুদ্ধ করে পুলিশের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কি গণতন্ত্র চর্চা না প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ?”

ফেসবুক স্ট্যাটাসের এক পর্যায়ে সারজিস বলেন, “আমরা বিএনপির দফা দেখতে চাই না, দেখতে চাই দলের ভেতরে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ও অ্যাকশন। সেটা নিজের দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও হতে হবে।”

তিনি সতর্ক করেন, “এভাবে দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও প্রশাসনের কাজে বাধা দিলে বিএনপির গণআন্দোলনের নৈতিক ভিত্তিই প্রশ্নের মুখে পড়বে। আগে দলের ভেতরের সুশৃঙ্খলতা নিশ্চিত না করে জনগণের কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছানো অসম্ভব।”

সারজিস আলমের এই অভিযোগের পর এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা দলটির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে এমন সময় যখন তারা “দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন” ও “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার” প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মাঠপর্যায়ের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং জনগণের আস্থার জায়গা দুর্বল করে তোলে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি দলীয় শৃঙ্খলা ও নৈতিক অবস্থান বজায় রাখতে এই বিষয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ