সার্কের বিকল্প জোট গড়ছে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ একসাথে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৪:২২:৪৬
সার্কের বিকল্প জোট গড়ছে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ একসাথে

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সম্ভাব্য বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ১৯ জুন চীনের কুনমিং শহরে তিন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকদের অংশগ্রহণে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি এই তিন দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের আলোচনা, যা ভারতের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং দেশটির কূটনৈতিক মহলে কিছুটা উদ্বেগও তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) বহুদিন ধরেই কার্যত অচল হয়ে আছে। পাকিস্তান ও ভারতের দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক, একে অপরের ওপর আস্থাহীনতা এবং পরস্পরবিরোধী ভূরাজনৈতিক অবস্থান সার্ককে নিষ্ক্রিয় করে তুলেছে। ২০১৬ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলনে ভারতের অনুপস্থিতির কারণে সম্মেলনটি বাতিল হয়, যেখানে বাংলাদেশও ভারতের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। পরবর্তী সময়গুলোতে সার্ককে সক্রিয় করার লক্ষ্যে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এরই মধ্যে চীন ও পাকিস্তান সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে একটি কার্যকর আঞ্চলিক জোট গঠনের লক্ষ্যে একযোগে আলোচনা শুরু করে। এই জোটের মূল লক্ষ্য আঞ্চলিক বাণিজ্য, অবকাঠামোগত সংযুক্তি এবং কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করা। কুনমিং বৈঠকে তিন দেশ এমন একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছে, যেখানে ভবিষ্যতে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরও কিছু দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ভারত এই উদ্যোগে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-তেও সক্রিয়তা হারাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বশেষ দুটি এসসিও সম্মেলনে অংশ নেননি, যা ভারতের পশ্চিমঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত দেয়। চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ এসসিও-এর সদস্য হলেও ভারতের কৌশলগত অবস্থান এই সংস্থার উদ্দেশ্যের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশের এই নতুন ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণ কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে না, বরং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। গঠনমূলক ভূমিকা রাখলে এই প্ল্যাটফর্ম দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একক প্রভাব কমিয়ে আঞ্চলিক কূটনীতিতে একটি নতুন শক্তির জন্ম দিতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সার্ক যখন নিষ্ক্রিয়, তখন এই ধরনের বিকল্প উদ্যোগ আঞ্চলিক সংহতির জন্য একটি বাস্তবসম্মত পথ হতে পারে। তবে একে টেকসই করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা, স্বচ্ছ কৌশল ও আস্থার ভিত্তি তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে। এই জোট যদি সফলভাবে গড়ে ওঠে, তাহলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত