‘মার্চ টু এনবিআর’-এ অচল রাজস্ব ব্যবস্থা: শাটডাউনে স্থবির আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৬:০৩:২৫
‘মার্চ টু এনবিআর’-এ অচল রাজস্ব ব্যবস্থা: শাটডাউনে স্থবির আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম

দেশের প্রধান রাজস্ব সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ আজ শনিবার সকাল থেকেই চলছে এক নজিরবিহীন অচলাবস্থা। ঢাকা থেকে বুড়িমারী, বেনাপোল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস হাউস—সর্বত্রই শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব স্পষ্ট। কর্মকর্তা–কর্মচারীরা আজ সকাল থেকে এনবিআর কার্যালয়ের প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ভবনের কোনো অংশেই প্রবেশ বা প্রস্থান সম্ভব হচ্ছে না।

‘মার্চ টু এনবিআর’ শিরোনামে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি কেবল প্রতীকী নয়, বরং দেশের সম্পূর্ণ রাজস্ব প্রবাহ একদিনেই স্থবির করে দিয়েছে। বিশেষ করে জুন মাসে, যখন বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে—ঠিক সেই সময়ে এমন পরিস্থিতি সরকারের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ।

কেন এই আন্দোলন? দাবি কী এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীদের?

আন্দোলনকারীদের মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত সংস্কারের অনুপস্থিতি। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামের ব্যানারে সংগঠিত এই কর্মসূচির মূল দাবি দুটি—

  • সব অংশীজনের অংশগ্রহণে রাজস্ব খাতের কাঠামোগত সংস্কার।
  • বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ।

তাদের অভিযোগ, এনবিআরের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। পেশাগত দক্ষতা বিবেচনায় নয়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োগ, পদোন্নতি ও দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে এনবিআরের অভ্যন্তরে চরম হতাশা, বৈষম্য ও অকার্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

কীভাবে স্তব্ধ হলো পুরো দেশের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া?

সকাল ৯টা থেকেই এনবিআরের তিনটি প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে ফেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভবনের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি কর্মরত কর্মকর্তারাও বাইরে আটকে পড়েন।একইসাথে সারা দেশের কাস্টমস হাউস, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, কাস্টমস স্টেশন, এয়ার কার্গো ইউনিটসহ প্রতিটি শুল্ক আদায় কেন্দ্রও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফলে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রমে শুল্কায়ন কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্দরে আটকে যায় শত শত কন্টেইনার পণ্য। রপ্তানিকারকরা বিলম্বে ডেলিভারির ঝুঁকিতে পড়েন, আর আমদানিকারকরা একাধিক ব্যাংক ও শুল্ক ফরমালিটিজ ঝুলে যাওয়ার ক্ষতির মুখে পড়েন।

অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

এই শাটডাউন কেবল এক দিনের কর্মসূচি হলেও এর অর্থনৈতিক অভিঘাত বহুমাত্রিক।

প্রথমত, জুন মাসেই সরকারের বার্ষিক রাজস্বের একটি বড় অংশ আহরণ হয়। এনবিআর বন্ধ থাকলে লক্ষ্যমাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দ্বিতীয়ত, আমদানি–রপ্তানির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যাংক, লজিস্টিক, কন্টেইনার ট্রান্সপোর্টেশন ও পোর্ট সার্ভিস সেক্টরেও প্রভাব পড়বে।

তৃতীয়ত, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হলে সামগ্রিকভাবে বাজারে নেতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে পড়বে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি দ্রুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগ না নেয়, তবে রাজস্ব ঘাটতি এবং বাণিজ্য পরিবেশের অবনতি নিশ্চিতভাবে ঘটবে।

নিরাপত্তা ঘিরে সতর্ক প্রশাসন, ভবনের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

এনবিআরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে ভবনের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তবে আন্দোলন এখনো শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁদের দাবি মানা না হলে এই কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়তে পারে। তারা সরকারের সঙ্গে একটি ট্রান্সপারেন্ট ও ফলপ্রসূ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।

নেতৃত্বে আস্থার সংকট, অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে রাজস্ব ব্যবস্থায়

এনবিআর হলো দেশের সর্ববৃহৎ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থায় অসন্তোষ ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হলে তা পুরো অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

সরকারের এখনই প্রয়োজন একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ, গঠনমূলক ও দ্রুত সমাধানমুখী পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায়, এই সংকট শুধু এনবিআরে সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন, সরকারি ব্যয়ের সক্ষমতা এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মনোভাবেও।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত