শেয়ারবাজারের মূলধন বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে 

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১১:১০:৫৫
শেয়ারবাজারের মূলধন বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে 

বিদায়ী সপ্তাহে (২২ জুন থেকে ২৬ জুন) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ লেনদেন ও সূচকের উত্থানের মাধ্যমে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ও আস্থার ইঙ্গিত দেখা গেছে। সপ্তাহজুড়ে সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ ও বাজার মূলধনে বড় অগ্রগতি হয়েছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পাঁচ কার্যদিবসে বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৮২২ কোটি টাকা, যা বাজারে দীর্ঘদিন পর এমন একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তনের দিক নির্দেশ করে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায়। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। ফলে বাজার মূলধনের দিক থেকে এক সপ্তাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের ঘোষণার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যবান কোম্পানিগুলোর ভালো পারফরম্যান্স এবং কিছু খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধিও বাজার চাঙ্গা হওয়ার অন্যতম কারণ।

সূচকগুলোর মধ্যে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদ তৈরি করেছে। এছাড়া ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তৈরি ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং শরীয়াহভিত্তিক কোম্পানির সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ২১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।

শুধু সূচকই নয়, লেনদেনেও দেখা গেছে সুস্পষ্ট অগ্রগতি। বিদায়ী সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ১ হাজার ৮১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহের ১ হাজার ৬২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার তুলনায় ১৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ, লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ৩৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৩২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার তুলনায় ৩৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা বেশি।

সপ্তাহজুড়ে ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে, ৮৯টির দর কমেছে এবং ৩৬টির দর অপরিবর্তিত থেকেছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে ইতিবাচক প্রবণতা ছিল, যা বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রানীতি সংশোধনের পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা কমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আর্থিক খাতে সংস্কার, যেমন রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা, নন-পারফর্মিং লোন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ এবং ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াও বাজারে আস্থার পুনর্গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

তবে তারা সতর্ক করে বলছেন, এই ইতিবাচক ধারাটি ধরে রাখতে হলে বাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন দ্রুত প্রকাশ, দরবৃদ্ধিতে অস্বাভাবিক প্রবণতার কারণ অনুসন্ধান, এবং দরপতনের ক্ষেত্রেও তদারকি জরুরি। সেইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সক্রিয় এবং দক্ষ ভূমিকা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

সব মিলিয়ে বিদায়ী সপ্তাহের শেয়ারবাজার ছিল বিনিয়োগবান্ধব এবং ইতিবাচক বার্তা বহনকারী। এই ধারা বজায় থাকলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ