শুভ জন্মদিন

৮৫-তে ড. ইউনূস: শান্তির নায়ক থেকে জাতীয় পথপ্রদর্শক

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ০৯:০৪:০৫
৮৫-তে ড. ইউনূস: শান্তির নায়ক থেকে জাতীয় পথপ্রদর্শক

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ (২৮ জুন, শনিবার) ৮৫ বছরে পদার্পণ করলেন। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪০ সালের এই দিনে, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশ-বিদেশ থেকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অনুরাগী, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষ।

শৈশব ও শিক্ষা: অঙ্কুরেই প্রজ্ঞার ছাপ

ড. ইউনূসের শিক্ষাজীবন ছিল মেধা ও নিষ্ঠার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশনে সারা পূর্ব পাকিস্তানে ১৬তম স্থান অর্জন করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অধ্যয়ন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৭১ সালে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান: যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গঠনে নিরলস প্রচেষ্টা

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে অবস্থানকালেই ড. ইউনূস গঠন করেন ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’। আমেরিকায় জনমত তৈরি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে তাঁর নাগরিক কূটনীতি ছিল অসামান্য। যুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় তার এই ভূমিকাকে আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

দারিদ্র্যবিরোধী লড়াই: গ্রামীণ ব্যাংক ও বৈপ্লবিক মাইক্রোক্রেডিট মডেল

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে তিনি হতবিহ্বল হয়ে ওঠেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন, দারিদ্র্য একটি কেবলমাত্র পরিসংখ্যান নয় এটি একটি সামাজিক কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তার প্রেক্ষিতে, ১৯৭৬ সালে জোবরা গ্রামে শুরু করেন ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’। এটি পরবর্তীতে, ১৯৮৩ সালে, রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ ‘গ্রামীণ ব্যাংকে’।

এই মডেল সারা বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে অনুসৃত হয় এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীকে পরিণত হয়। ছোট ঋণের মাধ্যমে ক্ষমতাবান হন গ্রামীণ নারীরা যাদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ক্রমেই সমাজে গভীর পরিবর্তন আনে।

পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: বৈশ্বিক মানবতার মুখপাত্র

২০০৬ সালে ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই সম্মান পেয়েছেন। তার অর্জনের ঝুলিতে আছে:

১. স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭)

২. বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার

৩. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম

৪. কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল

এই তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাওয়া বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে একজন হলেন ড. ইউনূস।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বে

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসন পতনের মুখে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগের পর, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আনা হয় ড. ইউনূসকে। তিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন এবং জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার নীতিনির্ধারণী মুখ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

জাতীয় পুনর্গঠনে ভূমিকা: শান্তি, সুশাসন ও অন্তর্ভুক্তির বার্তা

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সরকার দেশের রাজনৈতিক সুশাসন, নির্বাচনী সংস্কার, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বমঞ্চে তার গ্রহণযোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং নৈতিক অবস্থান বর্তমান সরকারের আস্থাভাজন শক্তি হয়ে উঠেছে।

জন্মদিনে বার্তা: দেশকে নিয়ে অঙ্গীকার

৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে ড. ইউনূসের কাছের মহল থেকে জানা গেছে, তিনি এদিন কোনও আনুষ্ঠানিক উদযাপন করছেন না। বরং, দেশের চলমান সংকটে সমাধানের পথনির্দেশে কাজ করাকেই তিনি জন্মদিনের ‘সত্যিকারের উদযাপন’ মনে করছেন। তার মতে, “শান্তি, সহনশীলতা ও দারিদ্র্যমুক্তি এই তিনটি স্তম্ভে একটি ন্যায্য সমাজ গঠিত হয়।”

ড. ইউনূস শুধু একজন নোবেলজয়ী নন, তিনি একাধারে অর্থনীতিবিদ, মানবতাবাদী, সংস্কারক ও জাতীয় নেতৃত্বের প্রতীক। ৮৫ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি জীবন কিভাবে জনসেবার পূর্ণতা পেতে পারে।

এই জন্মদিনে বাংলাদেশের জনগণ কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, বরং তার আদর্শ, চিন্তাধারা ও নেতৃত্বের দর্শনকে স্মরণ করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ