নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে একজন মুসলিম, কে এই মামদানি!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ০৭:৫৪:৪২
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে একজন মুসলিম, কে এই মামদানি!

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে এগিয়ে থেকে ইতিহাস গড়েছেন প্রগতিশীল তরুণ নেতা জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এই মুসলিম সমাজতন্ত্রী নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বৃত্তে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।

তিনি নিজেকে মঙ্গলবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন, যদিও চূড়ান্ত ফল আসতে এখনও র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ের দ্বিতীয় রাউন্ড গণনা বাকি রয়েছে।

মামদানি এই মুহূর্তে ৪৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন, যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৩৬.৪ শতাংশ। যেহেতু কেউই শতকরা ৫০ ভাগ ভোট অর্জন করতে পারেননি, তাই এখন দ্বিতীয় পছন্দের ভোট (Ranked-choice votes) পুনর্গণনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে চূড়ান্ত বিজয়ী।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানির ব্যাপক তরুণভিত্তিক সমর্থন এবং তার তৃণমূলসংলগ্ন রাজনীতি তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডেও সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক লুইস ম্যানিং বলেন, “মামদানির উত্থান শুধু একটি নির্বাচনী সাফল্য নয়, এটি নিউইয়র্কে বামমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতির শক্তিশালী পুনরাবির্ভাব।”

সাবেক মেয়র এবং একসময় ফ্রন্টরানার হিসেবে বিবেচিত অ্যান্ড্রু কুওমো পরাজয়ের সম্ভাবনা আঁচ করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং মামদানিকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান। কুওমো বলেন, “তিনি তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন এবং অত্যন্ত সংগঠিত ও উদ্দেশ্যপ্রসূ প্রচারণা চালিয়েছেন। এ বিজয় তাঁর প্রাপ্য।”

এদিকে, মামদানি তাঁর বিজয়-ঘোষণার বক্তৃতায় বলেন, “আজ রাতে আমরা শুধু একটি প্রচারণা নয়, একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি। আমি সব নিউইয়র্কবাসীর মেয়র হতে চাই আপনি যাকে ভোট দেন না কেন।”

জোহরান মামদানি আফ্রিকান অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান, যিনি নিজেকে ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট’ হিসেবে পরিচিত করেন। এর আগেও তিনি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে প্রগতিশীল এজেন্ডাগুলোর—যেমন সাশ্রয়ী বাসস্থান, পুলিশ সংস্কার, অভিবাসন নীতির উদারীকরণ পক্ষেই মূলত ভোটাররা ঝুঁকেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিল ক্লিনটনের মতো রাজনৈতিক হেভিওয়েটদের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও কুওমোর পরাজয় প্রমাণ করে, আধুনিক শহুরে ভোটাররা আর কেবল অভিজাত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় আস্থা রাখছে না।

সিটি ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. শার্লিন জ্যাকবস বলেন, “মামদানির বিজয় শুধু একটি নির্বাচনী ফল নয়, এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের দিকচিহ্ন। নিউইয়র্ক এখন আরও বৈচিত্র্যময়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আদর্শভিত্তিক নেতৃত্ব খুঁজছে।”

র‍্যাঙ্কড-চয়েস গণনার চূড়ান্ত ফল আসতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত ভোটের ধারা, নির্বাচনী জরিপ এবং কুওমোর প্রত্যাহার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, মামদানিই হবেন ডেমোক্র্যাটিক দলের চূড়ান্ত প্রার্থী। আর সেটি নিশ্চিত হলে তিনি নভেম্বরের নির্বাচনে রেপাবলিকান প্রার্থীর মুখোমুখি হবেন।

কিন্তু এর চেয়েও বড় প্রশ্ন এখন নিউইয়র্ক কি মামদানির মতো একজন আদর্শিক, প্রগতিশীল, অভিবাসীবংশোদ্ভূত নেতার নেতৃত্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত