ইরান-ইসরাইল সংঘাত

মাত্র এক ক্ষেপণাস্ত্রে বিয়ার শেভায় ধ্বংসযজ্ঞ: ব্যর্থ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ২১:২৪:১২
মাত্র এক ক্ষেপণাস্ত্রে বিয়ার শেভায় ধ্বংসযজ্ঞ: ব্যর্থ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা

মাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চল বিয়ার শেভাতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে ইরান। হামলাটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যা শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে না, বরং ইরানের কৌশলগত সক্ষমতাকেও সামনে নিয়ে আসে।

হিব্রু ভাষার একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিয়ার শেভার আকাশে ধোঁয়ার বিশাল কুন্ডলি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের দৃশ্য। হামলার প্রকৃত লক্ষ্যবস্তু এখনও নিশ্চিত না হলেও, এলাকার বহু ভবনে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ধরা পড়েছে।

ভিডিও দেখুন

বিশ্লেষকদের মতে, এই একক হামলা ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অতীতের মতো এবার আর 'আয়রন ডোম' বা 'ডেভিড স্লিং' যথাযথভাবে কাজ করেনি। বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, ইরানের টার্গেটিং এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এখন আরও নিখুঁত ও দূরপ্রসারী, এবং প্রতিবারের মতো এবারও ইসরায়েলের প্রস্তুতির ঘাটতি চোখে পড়ার মতো।

এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটেছে, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা এক সপ্তাহ ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইসরায়েল প্রথমে ইরানি ভূখণ্ডে একাধিক বিমান হামলা চালানোর পর থেকেই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এর জবাবে ইরান ধারাবাহিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, যার অনেকগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই হামলা শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ বাড়িয়ে তুলছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির দুর্বলতা স্পষ্ট করছে।


বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে সতর্ক থাকার বার্তা রাজনাথ সিংয়ের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১২:৪৭:২২
বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে সতর্ক থাকার বার্তা রাজনাথ সিংয়ের

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের উত্তেজনা চায় না। তবে একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর বিবৃতির শব্দ চয়ন নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

শুক্রবার ভারতীয় সাংবাদিক এবং নেটওয়ার্ক ১৮ গ্রুপের শীর্ষ সম্পাদক রাহুল জোশিকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে ভারত ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সতর্কবার্তা

সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, "আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না। তবে ইউনূসের উচিত হবে নিজের বিবৃতির শব্দ চয়ন নিয়ে সতর্ক থাকা।"

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ভারত যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। তবে এরপরও ভারতের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুরু থেকেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই টানাপোড়েনকে আরও দীর্ঘায়িত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফস কমিটি (সিজিসিএসসি)-এর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা এবং তুরস্কের পার্লামেন্টের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক। উভয় দেশের সঙ্গেই ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে শীতল।

তুর্কি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন তুরস্কের এমপি মেহমেত আকিফ ইলমাজ। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। সাক্ষাৎ শেষে তিনি তুর্কি প্রতিনিধিদলের সব সদস্যকে এক কপি করে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামের একটি বই উপহার দিয়েছেন। ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি মূলত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন ছবি ও গ্রাফিতির সংকলন।

সূত্র: ফার্স্টপোস্ট


ব্লাড ব্যাংকের রক্তে এইচআইভি: সরকারি হাসপাতালের রক্ত নিয়ে আক্রান্ত হলো ৫ শিশু

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১১:৪১:৫৯
ব্লাড ব্যাংকের রক্তে এইচআইভি: সরকারি হাসপাতালের রক্ত নিয়ে আক্রান্ত হলো ৫ শিশু
হতাশায় পরিবার। প্রতীকী ছবি

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার পর পাঁচজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর দেহে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই পাঁচ শিশুর সকলের বয়স আট বছরের নিচে। নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের জন্য তাদের হাসপাতালে যেতে হতো, কিন্তু এই মারাত্মক ভুলের কারণে ভুক্তভোগী শিশু ও তাদের পরিবারগুলো এখন গভীর দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ভুগছে।

শনিবার (০৮ নভেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।

ভুল শনাক্ত ও বরখাস্তের নির্দেশ

পশ্চিম সিংভূম জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার পরই এই শিশুরা সংক্রমিত হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর চাইবাসার সিভিল সার্জন, এইচআইভি ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ইতোমধ্যে প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, রক্ত পরীক্ষার সময় পুরনো 'প্রি-কিট' ব্যবহারের কারণেই সংক্রমণটি শনাক্ত করা যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ সচিব ডা. নেহা অরোরা জানিয়েছেন, এখন থেকে এই ধরনের কিট ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরিবারগুলোর দুর্ভোগ ও ক্ষোভ

পশ্চিম সিংভূমের মঞ্ঝরি ব্লকের সাত বছর বয়সী শশাঙ্ক (ছদ্মনাম) সংক্রমিত রক্ত পাওয়ার পর এইচআইভি আক্রান্ত হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই তাদের বাড়িওয়ালা পরিবারটিকে বাসা খালি করার নির্দেশ দেন। শশাঙ্কের বাবা দশরথ (ছদ্মনাম) বলেন, "আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বাড়িওয়ালা রাজি হননি। শেষে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি।" বর্তমানে এই পরিবারটিকে মাসে দুইবার চিকিৎসার জন্য ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। দশরথের অভিযোগ, সরকারি ভুলের কারণে এখন তাঁর ছেলেকে থ্যালাসেমিয়া আর এইচআইভি—দুই রোগের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে।

একইভাবে হাটগামহারিয়া ব্লকের সাত বছরের দিব্যা (ছদ্মনাম) সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে। তার মা সুনীতা (ছদ্মনাম) বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালের নার্সরা দিব্যাকে ছোঁয়া এড়িয়ে চলছিলেন এবং ডাক্তাররা গ্লাভস পরে দূর থেকে পরীক্ষা করছিলেন। তখনই তাঁর সন্দেহ হয়। অক্টোবরে হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়, ভুলবশত সংক্রমিত রক্ত দেওয়া হয়েছিল।

সুনীতা বলেন, "শুরুতে আমি বুঝিনি, পরে বুঝেছি এই রোগ কত ভয়ঙ্কর। এখন আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আতঙ্কে আছি।" ঝিকপানি ব্লকের শ্রেয়া (ছদ্মনাম) নামের এক শিশু ও তার মা শ্রদ্ধাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শ্রদ্ধা বলেন, "হাসপাতালের ভুলে আমার মেয়ে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। এর জন্য আমি দুই লাখ টাকার চেক পেয়েছি, কিন্তু একটা শিশুর জীবনের মূল্য কি এতটুকু?"

দশরথ আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "মন্ত্রীদের ছেলেদের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, আর আমাদের বাচ্চাদের জন্য দুই লাখ! একটা শিশুর জীবনের মূল্য কি এতটুকু?"

মাননিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও আদালতের উদ্বেগ

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ওই জেলায় মোট ২৫৯ জন রক্তদাতা রক্ত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন এইচআইভি পজিটিভ ছিলেন।

বিবিসি জানিয়েছে, রাজ্যের নয়টি ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও সেগুলোতে কার্যক্রম চালু ছিল। এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রাজ্য সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। মানবাধিকারকর্মী অতুল গেরা বলেন, লাইসেন্স নবায়ন ও মান নিয়ন্ত্রণের অভাবই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। তিনি জানান, ঝাড়খণ্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে, কিন্তু চিকিৎসার জন্য পুরো রাজ্যে মাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট রয়েছেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, আবাসন, রেশন, শৌচালয়সহ সব সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে।


পাকিস্তান-আফগানিস্তান আলোচনা স্থগিত: চুক্তি না হওয়ায় যুদ্ধবিরতি অনির্দিষ্ট ধাপে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১১:৩১:২৫
পাকিস্তান-আফগানিস্তান আলোচনা স্থগিত: চুক্তি না হওয়ায় যুদ্ধবিরতি অনির্দিষ্ট ধাপে
ছবিঃ সংগৃহীত

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়েছে এবং নতুন করে আলোচনার জন্য কোনো তারিখ বা কর্মসূচি এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, দুই দেশের আলোচনা বর্তমানে পুরোপুরি অচলাবস্থা বা অনির্দিষ্ট ধাপে প্রবেশ করেছে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জিও নিউজ এবং ডন-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে খাজা আসিফ এই আলোচনার অচলাবস্থার কথা জানান।

লিখিত চুক্তিতে অনীহা

গত মাসে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি প্রাণঘাতী হামলার পর উত্তেজনা নিরসনে কয়েক দফায় আলোচনা চলছিল। বৃহস্পতিবার ইস্তান্বুলে ছিল দুই দেশের প্রতিনিধির মধ্যে তৃতীয় দফার আলোচনা। তবে শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই কোনো ধরনের চুক্তিতে সম্মত হতে পারেনি।

খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান কেবল একটি আনুষ্ঠানিক, লিখিত চুক্তি গ্রহণ করবে। কিন্তু আফগানিস্তানের প্রতিনিধিরা মৌখিক আশ্বাস গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিক আলোচনায় সম্ভব নয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, "মধ্যস্থতাকারীরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত তারাও আশা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের যদি সামান্য আশাবাদ থাকত, তাহলে তারা আমাদের থাকতে বলতো।" তিনি মনে করেন, এভাবে পাকিস্তানের খালি হাতে ফিরে আসা দেখে মধ্যস্থতাকারীরাও কাবুলের উপর হাল ছেড়ে দিয়েছে।

একমাত্র দাবি পাকিস্তানের

খাজা আসিফ জানান, পাকিস্তানের অবস্থান দৃঢ় এবং স্পষ্ট। "আমাদের একমাত্র দাবি হলো আফগানিস্তানকে নিশ্চিত করতে হবে—তার মাটি পাকিস্তানে হামলার জন্য ব্যবহার করা হবে না।"

তিনি এই আলোচনার মধ্যস্থতা করে দেওয়ার জন্য তুরস্ক ও কাতারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, এই দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন, এমনকি আফগানিস্তানের প্রতিনিধিরাও এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে একমত ছিলেন, তবে তারা লিখিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত ছিলেন না।

আলোচনা স্থগিত হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


জম্মু হত্যাকাণ্ড ১৯৪৭: নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যার ভয়াবহ চিত্র, যা তুলে ধরল গবেষণা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১০:৫১:৫৫
জম্মু হত্যাকাণ্ড ১৯৪৭: নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যার ভয়াবহ চিত্র, যা তুলে ধরল গবেষণা
মাউন্টব্যাটেনের দেশভাগের সিদ্ধান্তের পর জম্মুতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল।

ভারত বিভাজনের সময় ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর উপত্যকার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জম্মু প্রদেশে পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকার বিপরীতে, জম্মুতে দেখা গিয়েছিল এক নজিরবিহীন সহিংসতা ও গণহত্যা। জম্মুর রাজনৈতিক কর্মী এবং দৈনিক কাশ্মীর টাইমসের প্রতিষ্ঠাতা বেদ ভাসিনের লেখা গবেষণা পত্রে সেই সময়কালের জম্মুর ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রয়াত বেদ ভাসিন ২০০৩ সালে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘বিভাজনের অভিজ্ঞতা: জম্মু ১৯৪৭’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মাউন্টব্যাটেনের ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণার পরপরই জম্মুতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে।

পুঞ্চের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িক রূপ

পুঞ্চে মহারাজা হরি সিংয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু কর আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে initially এক ধরনের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তবে মহারাজার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নির্মম বল প্রয়োগ মানুষের আবেগকে উস্কে দেয় এবং এই আন্দোলন দ্রুতই অসাম্প্রদায়িক থেকে সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়।

বেদ ভাসিন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন, মহারাজার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন শুধু মুসলিমদের আত্মসমর্পণ করতে বলেনি, ডোগরা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক মুসলিম সৈন্য এবং মুসলিম পুলিশ অফিসারদেরও ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, যাদের আনুগত্য সম্পর্কে প্রশাসনের সন্দেহ ছিল।

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও হত্যাকাণ্ডের চিত্র

জম্মুতে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে ভাসিন লিখেছেন, গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞকে ন্যায্য প্রমাণ করতে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে এবং তারা হিন্দুদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিসনা, আরএসপুরা, আখনুরের মতো সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পাকিস্তানের শিয়ালকোট অঞ্চলে চলে গিয়েছিলেন।

উধমপুর জেলায়, বিশেষত উধমপুর, চেনানি, রামনগর এবং রিয়াসি অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক মুসলিমকে হত্যা করা হয়। এমনকি উধমপুর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভাদেরওয়াহতেও বহু মুসলিম ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার শিকার হন। ভাসিনের মতে, এই হত্যাকাণ্ডে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের সাহায্য করেছিল সশস্ত্র শিখ শরণার্থীরা, যারা হাতে তলোয়ার নিয়ে জম্মুর রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

ছাম্ব, দেবা বাটালা, মানুসার এবং আখনুরের অন্যান্য অংশে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের হত্যার খবর পাওয়া গিয়েছিল, যাদের অনেকেই জম্মুর বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কাঠুয়া জেলায় মুসলিমদের গণহত্যা এবং নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

প্রশাসনের ভূমিকা ও গণহত্যার প্রমাণ

বেদ ভাসিনের মতে, সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার পরিবর্তে মহারাজার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সাম্প্রদায়িক গুন্ডাদের সাহায্য করেছে এবং তাদের অস্ত্র দিয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার বাইরে বসবাসরত বহু মুসলিম ব্যক্তিকে দাঙ্গাকারীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। শহরে সরকারিভাবে কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও দাঙ্গায় সামিল এই লোকজন অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অবাধে গাড়িতে চলাচল করছিল। ভাসিনের দাবি, মুসলিমদের চলাচলে বাধা দেওয়ার জন্যই এই কারফিউ জারি করা হয়েছিল।

এরপর তালাব খাতিকান এলাকায় মুসলিমদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। তাদের প্রথমে যোগী গেট পুলিশ লাইনে স্থানান্তরিত করা হয়। নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে প্রশাসন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানে চলে যেতে বলে। প্রথম ব্যাচে প্রায় ৬০টা লরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে বোঝাই করে শিয়ালকোটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। জম্মু শিয়ালকোট রোডের চাট্টায় পৌঁছানোর পর বিপুল সংখ্যক আরএসএস-এর লোক এবং শিখ উদ্বাস্তুরা গাড়িগুলো নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। সেখানে গাড়িতে সওয়ার ব্যক্তিদের টেনে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই সময় সৈন্যরা হয় হত্যাকাণ্ডে যোগ দিয়েছিল বা দর্শকের ভূমিকায় ছিল। একইভাবে পরের দিন অন্যান্য পরিবারগুলোও একই পরিণতি বরণ করে।

এই হত্যাকাণ্ডে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা নেই, তবে বিভিন্ন অনুমান অনুযায়ী এই সংখ্যা ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩৭ হাজার। এই সময়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের কিছু অংশে চলে যান।

জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ও ষড়যন্ত্র

১৯৪১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জম্মু প্রদেশের মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি, যা প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ছিল। রাজধানী জম্মুর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ হাজার, যার মধ্যে মুসলিম ছিলেন ১৬ হাজার। জম্মু জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৫ লাখ, যার মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৭ লাখ।

কাশ্মীর টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা জামওয়াল বলেন, জম্মু প্রদেশের ঘটনাবলী থেকে বোঝা যায় যে দেশভাগের সময় জনতাত্ত্বিক গঠন পরিবর্তনের সমন্বিত চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৪১ সালে মোট জনসংখ্যা চার লাখ ২৮ হাজার ৭১৯ জনের ৩৭ শতাংশ ছিল মুসলিম সম্প্রদায়। কিন্তু ১৯৬১ সালে মোট জনসংখ্যা পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৯৩২-এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৬৯৩ জন, অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ।

'ক্যালকাটা স্টেটসম্যান’-এর সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স তার বই ‘পাকিস্তান’-এ লিখেছেন, আগস্ট থেকে ১১ সপ্তাহ ধরে পূর্ব পাঞ্জাব, পাতিয়ালা এবং কাপুরথালায় শুরু হওয়া পদ্ধতিগত নৃশংসতা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।

তৎকালীন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ভাসিনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, "এখন শান্তি কমিটি গঠন করে শান্তির প্রতিষ্ঠার কাজ করার সময় নয়... আমরা ইতিমধ্যে এক হিন্দু-শিখ ডিফেন্স কমিটি গঠন করেছি।" ওই কর্মকর্তা ভাসিন ও তার সঙ্গীদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। ওই কর্মকর্তা ভাসিনের সঙ্গীকে বলেছিলেন, তারা রেহারি এলাকায় হিন্দু ও শিখ ছেলেদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং আরএসএস-এর যুবা সদস্যরা ৩০৩ রাইফেল ব্যবহারের জন্য সৈন্যদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

‘দ্য হিস্টোরিক্যাল রিয়েলিটি অফ দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট’ বইয়ের লেখক পিজি রসুলের মতে, জওহরলাল নেহরু ও শেখ আবদুল্লাহ যখন জম্মুতে মুসলিমদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তাদের এই 'মর্মান্তিক ঘটনা' সম্পর্কে জানানো হলেও তারা নীরব ছিলেন। রসুল বলেছেন, তারা হয়তো ভেবেছিলেন কাশ্মীর হারালেও জম্মু তাদের হাতে থাকা উচিত এবং এর একমাত্র উপায় হলো সেখানে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করা।

জম্মু হত্যাকাণ্ডের পরিণতি

জম্মু হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পরে, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (বর্তমানে খাইবার পাখতুনখোয়া) থেকে উপজাতি মিলিশিয়ারা কাশ্মীর আক্রমণ করে। এই সংঘাত প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূত্রপাত করে। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে দিল্লি এবং ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুই দিকের কাশ্মীরিরাই ছয়ই নভেম্বর এই হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে থাকেন।


গণহত্যার অভিযোগে নেতানিয়াহুসহ ৩৭ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১০:৪৩:০৫
গণহত্যার অভিযোগে নেতানিয়াহুসহ ৩৭ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানের নামে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ তাঁর সরকারের মোট ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।

শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ছাড়াও যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তার নামে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া’আল জামির।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিতরণকারী জোট ফ্লোটিলার ত্রাণের বহরকে আটকে দেওয়াকে মূল অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিক্রিয়া

পরোয়ানা জারির কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’র এক প্রতিক্রিয়ায় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের 'পিআর কৌশল' বা জনসংযোগ কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, এরদোয়ান তুরস্কের বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মুখ বন্ধ রাখতে এবং ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, বিচারক ও মেয়রদের বন্দি করার কাজে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।

অন্যদিকে, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস তুরস্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। শুক্রবার এক বার্তায় গোষ্ঠীটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জনগণ ও তাদের নেতৃত্বের আদর্শগত অবস্থান এই পরোয়ানা আরও একবার নিশ্চিত করল।


গাজায় শান্তি ফেরাতে  আন্তর্জাতিক বাহিন মোতায়েনের ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৮ ০৯:৫৮:২৪
গাজায় শান্তি ফেরাতে  আন্তর্জাতিক বাহিন মোতায়েনের ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে খুব শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, "এটা খুব শিগগিরই ঘটতে যাচ্ছে। গাজা এখন খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে।"

শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ভালোভাবে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক দেশ ও মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। একইসঙ্গে তিনি বর্তমানে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতির প্রশংসা করেছেন।

আব্রাহাম চুক্তি ও সিরিয়া প্রসঙ্গ

ট্রাম্প জানান, মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান ইসরায়েল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্যান্য মধ্য এশীয় দেশও এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়ে শান্তি উদ্যোগে নতুন গতি আনবে।

সোমবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারার আসন্ন ওয়াশিংটন সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, "আমি মনে করি তিনি খুব ভালো কাজ করছেন। অঞ্চলটি কঠিন, আর তিনিও কঠিন মানুষ, কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ভালো এবং সিরিয়া বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।" সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে ট্রাম্প এটিকে জটিল বিষয় উল্লেখ করে বলেন, "আমরা তুরস্ক, ইসরায়েল এবং আরও কয়েকটি দেশের অনুরোধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছি—তাদের একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য।"

জাতিসংঘের প্রস্তাব ও বাহিনীর উদ্দেশ্য

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্তর্জাতিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য হবে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সীমান্ত অঞ্চল সুরক্ষিত রাখা এবং ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় এই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে গাজায় দুই বছর মেয়াদে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়োগ এবং প্রায় ২০ হাজার সেনার একটি স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি অনুমোদনের প্রস্তাব রয়েছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রস্তাবের খসড়াটি মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বাহিনীর সৈন্যদের প্রয়োজনে 'সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে', অর্থাৎ বল প্রয়োগের অনুমতিও তাদের থাকবে। তবে এই পরিকল্পনার একটি প্রধান শর্ত হলো, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। এই আন্তর্জাতিক বাহিনী হামাসের সামরিক সক্ষমতা এবং আক্রমণাত্মক অবকাঠামো ধ্বংস করারও দায়িত্ব পাবে। যদিও হামাস এখনো এই বিষয়ে কোনো নিশ্চিত ঘোষণা দেয়নি।


কালো মুরগি কেন এত দামি: জেনেটিক বিস্ময়, ঐতিহ্য ও বিলাসিতার এক অনন্য সংমিশ্রণ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১৯:১২:২৭
কালো মুরগি কেন এত দামি: জেনেটিক বিস্ময়, ঐতিহ্য ও বিলাসিতার এক অনন্য সংমিশ্রণ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে এখন এক ধরনের মুরগি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ও আলোচনা চলছে- কালো মুরগি। এই মুরগির শুধু পালক নয়, এর চামড়া, মাংস, হাড় এমনকি অন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যন্ত কালো। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যই একে অন্য সব সাধারণ মুরগি থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু বিষয়টি কেবল বাহ্যিক নয়, বরং গভীর বৈজ্ঞানিক, পুষ্টিগত ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। আর এসব কারণেই কালো মুরগির দাম সাধারণ মুরগির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

জেনেটিক রহস্য: ‘ফাইব্রোমেলানোসিস’ নামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

কালো মুরগির অনন্যতা শুরু হয় এর জিন থেকে। বিজ্ঞানীরা এই জিনগত বৈশিষ্ট্যকে বলেন “Fibromelanosis”। এটি এমন একটি জিন মিউটেশন, যার কারণে মুরগির শরীরে অতিরিক্ত মেলানিন জমা হয়। মেলানিন হলো সেই উপাদান যা মানুষের ও প্রাণীর ত্বক ও চুলের রঙ নির্ধারণ করে।

কিন্তু এই বিশেষ জিন মুরগির শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেই কালো করে দেয় পালক থেকে শুরু করে হাড়, মাংস, এমনকি অন্ত্র পর্যন্ত। এই বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি মুরগির প্রজাতিতে পাওয়া যায়, যা একে করে তুলেছে অত্যন্ত বিরল ও মূল্যবান।

বিরলতা ও সীমিত প্রজাতি

বিশ্বজুড়ে কালো মুরগির প্রজাতি গোনা যায় হাতে গোনা কয়েকটি-

সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভারতের কড়কনাথ (Kadaknath), ইন্দোনেশিয়ার আয়াম সেমানি (Ayam Cemani), এবং চীনের সিল্কি (Silkie) মুরগি। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ঝাবুয়া অঞ্চলে পাওয়া যায় কड़कনাথ, যা ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতি (GI Tag) পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার আয়াম সেমানি একেবারেই সম্পূর্ণ কালো পালক থেকে মাংস পর্যন্ত। এটি স্থানীয়ভাবে ‘অলৌকিক পাখি’ হিসেবে পরিচিত। চীনের সিল্কি মুরগি আবার মসৃণ পালক ও হালকা গঠনবিশিষ্ট, যা ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই প্রজাতিগুলোর সরবরাহ সীমিত এবং প্রজনন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় এদের বাজারমূল্য সাধারণ মুরগির তুলনায় বহুগুণ বেশি।

অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কালো মুরগির মাংস শুধু রঙে নয়, গুণেও অনন্য। এতে সাধারণ মুরগির তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম, এবং লোহা, জিঙ্ক, অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় কালো মুরগির স্যুপকে বলা হয় “ঔষধি খাদ্য”। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্তাল্পতা কমানো, ক্লান্তি দূর করা ও প্রসূতি নারীর পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। ভারতের কড়কনাথ মাংসকে বলা হয় “ডায়াবেটিস ও হার্ট রোগ প্রতিরোধী খাবার”, কারণ এতে কোলেস্টেরল অত্যন্ত কম।

সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

কালো মুরগির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সাংস্কৃতিক মূল্য। দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই কালো মুরগিকে পবিত্র বা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

ইন্দোনেশিয়ায় আয়াম সেমানি ব্যবহৃত হয় ধর্মীয় পূজায় ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে, এই মুরগি অশুভ শক্তি দূর করে এবং সৌভাগ্য বয়ে আনে। ভারতের কিছু উপজাতীয় সম্প্রদায় মনে করে, কড়কনাথ মুরগি আত্মিক শক্তির প্রতীক। চীনে সিল্কি মুরগি ব্যবহৃত হয় ইয়িন ও ইয়াং ভারসাম্য রক্ষায়, যা শরীর ও মনের শান্তি বজায় রাখে বলে ধারণা করা হয়।

ব্যয়বহুল প্রজনন প্রক্রিয়া ও যত্ন

কালো মুরগির দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এর প্রজনন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এদের বৃদ্ধি হার ধীর, ডিম পাড়ার হার কম, এবং এদের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। বিশুদ্ধ জাত (pure breed) বজায় রাখতে বিশেষ যত্ন নিতে হয়, কারণ হাইব্রিড মুরগির সঙ্গে মিশে গেলে এদের অনন্য কালো বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যেতে পারে।

এই সব কারণেই একেকটি মুরগি উৎপাদনে সময় ও খরচ দুটোই বেশি, ফলে বাজারে এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়।

বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল খাদ্য হিসেবে কালো মুরগি

কালো মুরগি এখন শুধু গবেষণা বা ঐতিহ্যের বিষয় নয়, এটি রন্ধনশিল্পের বিলাসবহুল উপকরণ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ইন্দোনেশিয়ার আয়াম সেমানি ও ভারতের কड़कনাথ মাংস উচ্চমানের রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয়। এক কেজি মাংসের দামই অনেক সময় ৩,০০০–৫,০০০ টাকার বেশি, আর একটি পুরো মুরগির দাম হতে পারে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত। পশ্চিমা দেশগুলোতে কালো মুরগি একটি “Luxury Meat” হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ উৎসব, রাজকীয় অনুষ্ঠান কিংবা আন্তর্জাতিক ফুড ফেস্টিভ্যালে এই মাংসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

পোষা প্রাণী হিসেবেও জনপ্রিয়তা

বিশ্বের অনেক দেশে ধনী ব্যক্তিরা কালো মুরগিকে Exotic Pet বা বিলাসবহুল পোষা প্রাণী হিসেবে পালন করেন। আয়াম সেমানি তার রহস্যময় কালো রঙ, ঝকঝকে পালক ও অনন্য সৌন্দর্যের জন্য “The Lamborghini of Poultry” নামেও পরিচিত।

বাজারমূল্য ও অর্থনৈতিক দিক

কালো মুরগির দাম অঞ্চলভেদে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। ভারতের কड़कনাথের প্রতি কেজি মাংসের দাম ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশে চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কম হওয়ায় দাম আরও বেশি। ইন্দোনেশিয়ায় আয়াম সেমানির একটি বাচ্চা মুরগির দাম ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, আর পূর্ণবয়স্ক একটি মুরগি বিক্রি হয় কয়েক লক্ষ টাকায়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসায় সম্ভাবনা

কালো মুরগির মাংসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড ও পলিফেনল যৌগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। এই উপাদানগুলো হৃদরোগ প্রতিরোধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও কোষ পুনর্গঠনে কার্যকর হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। বায়োটেকনোলজিতে এখন কালো মুরগির জিন নিয়ে নতুন ওষুধ তৈরির সম্ভাবনাও খোঁজা হচ্ছে।

কালো মুরগি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি যেখানে বিজ্ঞান, ঐতিহ্য, পুষ্টি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে মিলিত হয়েছে। এটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক, যার প্রতিটি দিকেই আছে সৌন্দর্য, রহস্য ও মূল্য। এই বিরলতা, পুষ্টিগুণ, আধ্যাত্মিকতা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সব মিলিয়ে কালো মুরগিকে করেছে পৃথিবীর অন্যতম দামি ও কাঙ্ক্ষিত প্রাণী।


আফগান–পাক উত্তেজনা ফের চরমে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১৪:১০:৪০
আফগান–পাক উত্তেজনা ফের চরমে
ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি জোরদারের আলোচনার মধ্যেই আফগানিস্তানের ভেতরে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে পাকিস্তান এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে কাবুল সরকার। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আফগান সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে।

আফগান সামরিক সূত্রের দাবি, পাকিস্তানি সেনারা সীমান্তবর্তী বেসামরিক এলাকায় হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে গোলাবর্ষণ চালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোলার শব্দে সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এলাকা ত্যাগ করে।

এক আফগান কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইস্তাম্বুলে চলমান শান্তি আলোচনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা এখনো পাল্টা আঘাত করিনি। কিন্তু হামলা অব্যাহত থাকলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইসলামাবাদ এখনো সরকারি বিবৃতি দেয়নি, যদিও অতীতে এমন অভিযোগ তারা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে এসেছে।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত নতুন নয়। গত মাসের শুরুতে কাবুলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর সংঘর্ষে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয় বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। নিহতদের মধ্যে ৫০ জনই ছিলেন আফগান বেসামরিক নাগরিক। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা, পাল্টা অভিযানে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এবং উভয় দেশের সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উত্তেজনা প্রশমনে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় গত ১৯ অক্টোবর দোহায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসলামাবাদ ও কাবুল। তবে বিশ্লেষকরা তখনই সতর্ক করেছিলেন যে, উভয় দেশের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস ও নিরাপত্তা উদ্বেগ এই চুক্তিকে টিকিয়ে রাখতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে সেই চুক্তির পর্যালোচনা বৈঠক অচলাবস্থায় পড়ে যায়। কাবুল ও ইসলামাবাদ উভয় পক্ষই পরস্পরকে “চুক্তিভঙ্গ” ও “অবিশ্বাসী আচরণের” অভিযোগে অভিযুক্ত করে। বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত বৈঠকটি আদৌ অনুষ্ঠিত হয়েছে কি না, রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

-রাফসান


১২ দিনের যুদ্ধের পর বরফ গলছে কি ইরান–মার্কিন সম্পর্কে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১৪:০৩:৩৬
১২ দিনের যুদ্ধের পর বরফ গলছে কি ইরান–মার্কিন সম্পর্কে?
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ টানাপোড়েন ও পারমাণবিক অচলাবস্থার মধ্যেই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “ইরান বারবার জানতে চেয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না। আমি আলোচনায় রাজি এবং তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। বহু বছর ধরে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা দেখব কী হয়, তবে আমি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।” তবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

অন্যদিকে, সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “যতক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সমর্থন, সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের সহযোগিতা সম্ভব নয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির বক্তব্য ইরানের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও কঠোর করেছে। ট্রাম্পের আলোচনার আহ্বানকে অনেকেই একটি কৌশলগত পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে নতুন কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে চায়।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা প্রত্যাহার এবং এর পর ট্রাম্প প্রশাসনের পুনঃনিষেধাজ্ঞা আরোপ ইরান–মার্কিন সম্পর্ককে শীতল করে দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প তেহরানের ওপর আরও কঠোর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ান।

দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ পাঁচ দফা পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হয়, বিশেষ করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম নিয়ে মতবিরোধের কারণে। জুন মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এরপর থেকেই কূটনৈতিক সংলাপ কার্যত স্থগিত।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করে হয়তো অর্থনৈতিক চাপ কমানোর চেষ্টা করছে, কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তেহরানের তেল রপ্তানি প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি, এবং বিদেশি মুদ্রা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় আগ্রহী হলেও সেটি হবে “শর্তসাপেক্ষে”। তিনি বলেন, “ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ফিরে আসতে হবে এবং আঞ্চলিক আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে তবেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আলোচনা সম্ভব।”

ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তারা মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত এড়াতে ইরান–মার্কিন সংলাপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠদান, দীর্ঘদিন ধরে পাঠ্যপুস্তকনির্ভর শিক্ষা ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক মূল্যায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের... বিস্তারিত

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

বোহেমিয়ার অরণ্যমালায় একটি দুর্গ, হাউসকা ক্যাসেল, আর তার কয়েক মাইল দূরে এক সন্ন্যাসীর লেখা বিশাল এক পুঁথি, কোডেক্স গিগাস। শতাব্দীজুড়ে... বিস্তারিত

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নতুন এক ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক মানবদেহে পরীক্ষায় শতভাগ সাড়া পাওয়ার দাবি... বিস্তারিত