গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে নিয়ে যে তথ্য দিল গুম কমিশন

বাংলাদেশে গুম সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে গঠিত কমিশন জানিয়েছে, গুমের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জড়িত না থাকলেও সেনাবাহিনীর ডেপুটেশনে থাকা কিছু কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে ডিজিএফআই, এনএসআই ও র্যাব যেসব কর্মকর্তা গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তারা সবাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন।”
বিচারপতি মইনুল আরও ব্যাখ্যা করেন, “র্যাবের কমান্ডিং অফিসার থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তা মূলত আর্মি, নেভি কিংবা এয়ার ফোর্স থেকে ডেপুটেড হয়ে এসেছেন। ফলে অফিসিয়াল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী দায়ী না হলেও এর সদস্যরা গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।”
কমিশনের আরেক সদস্য, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ‘অবগত নয়’ থাকার কথা বলার সুযোগ নেই। এমনকি এক প্রাক্তন সেনাপ্রধান জনসমক্ষে স্বীকার করেছেন, দুজন সেনাসদস্য গুম অভিযানের কাজে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “এর মানে হলো, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী জড়িত না হলেও এই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা জানতেন। সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে নৈতিক বা প্রশাসনিক দায় থেকে মুক্ত থাকা কঠিন।”
প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতাবাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত গুম, নিখোঁজ ও গোপন আটক নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে বহুদিন ধরে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে বারবার তদন্ত ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে।
সরকার গঠিত এই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গুম সংক্রান্ত ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে এবং ২০২৫ সালের শেষে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল জানান, “আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। যারা গুমের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা যে বাহিনীরই হোক, তা চিহ্নিত করে সুপারিশ পেশ করা হবে।”
তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পথ সুগম হবে, এবং দীর্ঘদিন ধরে গুম হওয়া পরিবারগুলো ন্যায়বিচারের আশায় কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হতে পারবে।
এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে প্রাতিষ্ঠানিক দায় এড়িয়ে গেলেও, ব্যক্তি বা ডেপুটেড কর্মকর্তার দায় চিহ্নিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিচার প্রক্রিয়া ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান