কর্ণফুলীতে জমজমাট সাম্পানবাইচ, দুই তীরে দর্শকের ঢল

সত্য নিউজ: চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র কর্ণফুলী নদীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী সাম্পানবাইচ, যা এবারও পরিণত হয় নদীপাড়ের মানুষের মিলনমেলায়। নদী রক্ষা ও চাটগাঁইয়া সংস্কৃতির প্রচারে ১৯তম ‘সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সংস্কৃতি মেলার’ অংশ হিসেবে এই প্রতিযোগিতাটি রোববার (১১ মে) বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়।

তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের শেষ দিনের মূল আকর্ষণ ছিল সাম্পানবাইচ, যেখানে অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা ঘাট পর্যন্ত নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলে ১১টি সাম্পান। প্রতিটি সাম্পানে ৯ জন মাঝি বৈঠা চালিয়ে অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়। নদীর দুই তীর জুড়ে এবং ভাসমান নৌযানে হাজারো নারী-পুরুষ সাম্পান প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে সমবেত হন। বাদ্যযন্ত্র আর গান-বাজনায় তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন ইছানগরের ইউসুফ মাঝি ও তাঁর দল। দ্বিতীয় হন বোয়ালখালীর মো. রনি এবং তৃতীয় স্থান পান চর পাথরঘাটার মো. তারেক ও তাঁর দল। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া, তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলী আব্বাস, চুয়েটের সাবেক উপাচার্য মোজাম্মেল হক, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাহমুদুল হাসান, ও চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান।

সাম্পান প্রতিযোগিতার পর বিজয়ীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয় চরপাথরঘাটা সিডিএ মার্কেটে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহদাত হোসেন। তিনি বলেন, “কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে। নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এই প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।”

সাম্পানবাইচ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এই আয়োজন চট্টগ্রামের প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী নদীর রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের মাধ্যমে নদী ও জলসম্পদ রক্ষার দাবিটিকে সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব—এমনটাই আশা করছেন আয়োজকেরা।