ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মাঝে মার্কিন রণতরীর পথ পরিবর্তন

বর্তমান ইরান-ইসরায়েল বিরোধের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান যুদ্ধজাহাজ বহনকারী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ হঠাৎ করে তার নির্ধারিত দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম সফর বাতিল করে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল ট্র্যাকিং সংস্থা মেরিন ট্রাফিক ও একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইতিপূর্বে ইউএসএস নিমিৎজ ভিয়েতনামের উপকূলীয় শহর দানাং পৌঁছানোর কথা ছিল, যেখানে আগামী ২০ জুন ক্রুদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছিল। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার একটি রুটিন পদক্ষেপ। তবে সোমবার ভোরের দিকে যুদ্ধজাহাজটি হঠাৎ দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা ত্যাগ করে পশ্চিমমুখী হয়ে পারস্য উপসাগর এবং লোহিত সাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে, যা কূটনৈতিক মহলে নতুন সর্তকতার সৃষ্টি করেছে।

ভিয়েতনামের এক কূটনৈতিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, “দানাংয়ে ইউএসএস নিমিৎজের নির্ধারিত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে গন্তব্য পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।” অন্যদিকে, হ্যানয়ে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) এর আওতায় পরিচালিত এই পদক্ষেপ মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের রুটিন সামরিক উপস্থিতির অংশ হলেও, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনার মধ্যদিয়ে এটি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তার সামরিক জোরদার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ইউএসএস নিমিৎজকে পাঠিয়েছে।

বর্তমান ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি হামলা ও তেহরানের পাল্টা জবাব আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তেজনা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে কৌশলগত নিরাপত্তা ও শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউএসএস নিমিৎজের গন্তব্য পরিবর্তন কেবল সামরিক গুরুত্ব বহন করে না, এটি কূটনৈতিক সংকেত হিসেবেও কাজ করছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থেকে সামরিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা বিবেচনায় নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সাথে এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোকেও সতর্ক করে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবে।

এ ছাড়া, দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে চলমান চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের মধ্যে এ ধরণের গতি পরিবর্তন সামরিক কূটনীতিতে নতুন রকমের চাপ ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল এবং সামরিক বিশ্লেষকরা ইউএসএস নিমিৎজের গতিপথ পরিবর্তনের পেছনে প্রাধান্য পাচ্ছে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কারণগুলোর ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান উত্তপ্ত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ও সংকল্প প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক