শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে ইউনূসের কৌশলগত নির্দেশনা

সত্য নিউজ: অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরউন্নয়ন নিয়ে এটি ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব করতে একটি সমন্বিত রোডম্যাপের প্রস্তাব দেন, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করা।

প্রথমত, বৈঠকে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশে পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর, যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর অংশীদার সরকার নিজেই। এসব কোম্পানিকে দ্রুত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তার মতে, এই ধরনের কোম্পানির বাজারে অংশগ্রহণ কেবল বাজারের পরিধিই বাড়াবে না, বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থাও সুদৃঢ় করবে।

অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের বড় ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। এগুলোর মধ্যে কর সুবিধা, নীতিগত সহায়তা কিংবা সহজতর তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উদ্দেশ্য হলো, বাজারে ভালো মানের কোম্পানির সরবরাহ বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমিয়ে আনা।

এছাড়া, পুঁজিবাজারের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পরামর্শক দল গঠন করার সুপারিশ করেন তিনি। এই দলকে তিন মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে বাজার ব্যবস্থাপনা হয় আরও আধুনিক ও কার্যকর।

বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোর ওপর। যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যাতে পুঁজিবাজার পরিচালনায় নৈতিকতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

সবশেষে, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যাংকঋণের বিকল্প উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করার দিকে নজর দিতে বলা হয়। বিশেষ করে বন্ড ও শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের পথ সুগম করতে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান তিনি। এতে বাজার যেমন গভীরতা পাবে, তেমনি অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে।

এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এই নির্দেশনাগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এই বৈঠক এবং গৃহীত নির্দেশনাগুলোকে শেয়ারবাজারে এক নতুন গতিপথের সূচনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বাজারে আস্থা ফেরাতে এবং অর্থনীতিকে বহুমুখী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এ পদক্ষেপগুলো সময়োপযোগী ও কার্যকর বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।