২৪১ নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন একজন

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়ার ২৪১ আরোহী। বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন মাত্র একজন, যিনি ছিলেন ১১-এ নম্বর আসনে। তাঁর পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার, শরীরে রক্তাক্ত ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্ট হলেও তিনি নিজে হেঁটে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ফ্লাইট AI-171 আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দর। দুর্ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি অস্বাভাবিকভাবে দুলতে দুলতে নিচে নামতে থাকে এবং মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে আছড়ে পড়ে।

বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ভবনের ওপর, ফলে মাটির ওপরও হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের ধারণা: পাখির ধাক্কাই বিপর্যয়ের সূত্রপাত

বিমান চলাচল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর NDTV-কে জানান, প্রাথমিক বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে উড্ডয়নের সময় বিমানটিকে একাধিক পাখি ধাক্কা দেয়, যার ফলে দু’টি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়ে। ল্যান্ডিং গিয়ার তোলার আগেই বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটির দিকে নামতে শুরু করে। যদিও পাইলট শেষ মুহূর্তে ‘মে ডে’ কল পাঠান, ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ ও ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

বেঁচে যাওয়া যাত্রী: এক জীবন্ত সাক্ষ্য

আহমেদাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, একমাত্র জীবিত ওই যাত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর জবানবন্দি ভবিষ্যতে এই দুর্ঘটনার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে।

বিমানে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডীয় নাগরিক। এই দুর্ঘটনায় বহু দেশের নাগরিক নিহত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন।

আধুনিক প্রযুক্তি আর পাইলটের প্রশিক্ষণের যুগেও আকাশপথে বিপর্যয়ের ভয়াবহতা নতুন করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আহমেদাবাদ ট্র্যাজেডি। একটি অলৌকিক জীবন-রক্ষা যেন পুরো মানবসভ্যতার সামনে একটাই প্রশ্ন রেখে গেল আসলে কতটা নিরাপদ আমাদের আকাশ?