আগামীকাল ড. ইউনূস-বিএনপি বৈঠক: আলোচনা না ‘আনুষ্ঠানিকতা’?

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আগামীকাল (২ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে দ্বিতীয় দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা। তবে আলোচনার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন,

"সরকার একের পর এক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার নাটক করছে। আনুষ্ঠানিকতা আছে, কিন্তু বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। জনগণের আস্থার সংকট কাটাতে হলে সরকারকে কেবল প্রটোকল দেখিয়ে নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।"

সালাহউদ্দিন আহমদ আলোচনার পেছনে সরকারের ‘অপরিণত মনোভাব’ ও ‘প্রতারণামূলক রাজনীতি’র ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “প্রথম দফা আলোচনা, তারপর দ্বিতীয় দফারও আবার ‘শুভ উদ্বোধন’। আলোচনার জন্য কতবার উদ্বোধন করতে হয়? প্রতিবারই আমরা নতুন করে শুনি—আলোচনা শুরু হচ্ছে, কিন্তু কোথাও গিয়ে থেমে যায়।”

তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “সরকার বিএনপিকে ‘সংস্কারের কলা’ দেখাচ্ছে। যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তার কার্যকর কোনো প্রস্তাব বা বাস্তবায়ন নেই।”

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন না দিলে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। জনগণের দাবিই হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন। সরকার যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন না করে, তাহলে তারা জনগণকে উপেক্ষা করছে।”

তিনি বলেন, “সরকার বারবার বলছে, ডিসেম্বর থেকে জুন, কেন এই জুন? এর পেছনে একটিও যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেনি। আমরা চাই, সরকার যদি ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করতে চায়, তার পক্ষে যুক্তি জাতির সামনে তুলে ধরুক।”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, “এই কমিশন নিজেদের মতো করে সংবিধান পরিবর্তন করতে চায়। জাতিকে না জানিয়ে, জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো সংবিধান সংস্কার গণতান্ত্রিক হতে পারে না। এভাবে চাপিয়ে দিলে সেটা গণতন্ত্র নয়, বরং আরেকটি বাকশালই প্রতিষ্ঠিত হবে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সরকার জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলকে (এনসিসি) সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব দিতে চায়। এতে সংসদ, বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সব অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অংশ নয়।”

আলোচনায় সালাহউদ্দিন বলেন, “সংস্কার আমাদের অন্যতম এজেন্ডা হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের দাবিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে।”

তিনি বলেন, “যেই দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংস্কার প্রক্রিয়া ও বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এটা কোনো একক সরকারের এজেন্ডা নয়, বরং জাতির দাবি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সময় ও চাহিদার সঙ্গে পরিবর্তিত হবে।”

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, “গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার চাওয়াটাই যদি দেশদ্রোহিতা হয়, তাহলে আমরা সবাই দেশদ্রোহী। তারেক রহমানসহ অনেক নেতা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন। আজ তাদের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের হাত রয়েছে।”

তিনি কৌশলে সাবধান করেন, “গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে একটি মহল তৎপর। তারা চায় দেশে যেন কখনো একটি গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার না আসে।”

এর আগে, ২৪ মে প্রথম দফায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সরকারি বাসভবন 'যমুনা'য় বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়। ওইদিন জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বৈঠকে নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার প্রক্রিয়া ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়, তবে ফলাফল নিয়ে স্পষ্ট কিছু প্রকাশ পায়নি।

২ জুনের এই দ্বিতীয় দফার বৈঠককে বিএনপি 'ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ' হিসেবে দেখলেও দলটি এই বৈঠককে বাস্তব ভিত্তি ও অগ্রগতি ছাড়া একটি আনুষ্ঠানিকতা বলেই মনে করছে।