বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নিচ্ছে: ড. ইউনূসের

বাংলাদেশ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের টোকিওতে আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফোরামে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই, যা ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই নির্বাচন হবে গণতন্ত্রে একটি শান্তিপূর্ণ এবং কার্যকর রূপান্তরের সূচনা।”

বৈশ্বিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বর্তমান বিশ্বে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং তৃণমূল নেতৃত্ব আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”তিনি উল্লেখ করেন, “ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চলমান সংঘাত ও মানবিক সংকট বিশ্বশান্তির জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাংলাদেশ সরকারের মানবিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।” পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণকেও তুলে ধরেন।

সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘটিত সীমিত যুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রত্যাশা করি।”

ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃনির্ভরশীলতাকে দ্বন্দ্বের উৎস নয়, বরং সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উচিত শূন্য-সমষ্টিক প্রতিযোগিতা পরিহার করে ভাগাভাগি করা সমৃদ্ধির পথে হাঁটা।”

এশিয়ার অস্থির বাস্তবতায় তিনি তুলে ধরেন শান্তি, পারস্পরিক আস্থা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের গুরুত্ব। তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নয়, মানুষের সার্বিক কল্যাণ, বিশ্বাস ও সাহসী নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে।”

প্রধান উপদেষ্টা তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা কেবল চাকরির জন্য অপেক্ষা করো না—উদ্যোক্তা হও। তোমরাই পারো এই অঞ্চলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও বৃহত্তর এশিয়ায় শান্তি ও সমৃদ্ধির রূপরেখা হাজির করে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে প্রস্তুতি চলছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।