হ্যাকড ইভ্যালি: ‘সব গ্রাহকের তথ্য আমার কাছে’- হ্যাকার

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ২০:৪০:৫১
হ্যাকড ইভ্যালি: ‘সব গ্রাহকের তথ্য আমার কাছে’- হ্যাকার

এক সময়ের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। শনিবার (২৪ মে) বিকেলে ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ভেসে ওঠে একটি বার্তা, যেখানে হ্যাকার দাবি করে, প্রতিষ্ঠানটির সব গ্রাহকের তথ্য তাদের দখলে রয়েছে। হ্যাকার ইভ্যালি কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট ইমেইল ঠিকানায় ([email protected]) যোগাযোগ করতে বলে, নইলে এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় গ্রাহকদের তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি আগেও গ্রাহক প্রতারণা ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল।২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাজারে আত্মপ্রকাশ করে ইভ্যালি। কোম্পানিটি শুরুর দিকে গাড়ি, মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, স্মার্ট টিভি, এসি ও আসবাবপত্রসহ নানা পণ্য অস্বাভাবিক কম দামে অফার দিয়ে ব্যাপক সাড়া তোলে। অনেকে "অ্যাডভান্স পেমেন্টে অর্ধেক দামে পণ্য" পেতে আগ্রহী হয়ে অগ্রিম অর্থ প্রদান করেন।

তবে কিছুদিন পর থেকেই ইভ্যালির কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ বাড়তে থাকে। ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বিপুল অঙ্কের অগ্রিম অর্থ ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।

২০২১ সালে তদন্তে দেখা যায়, ইভ্যালি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছে প্রায় ৫৪৩ কোটি টাকা দেনায় পড়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণা ও মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার হয়ে তারা দীর্ঘদিন কারাবন্দিও ছিলেন।এবারের হ্যাকিং ইভ্যালিকে আরও গভীর সংকটে ফেলেছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি আগে থেকেই অর্থনৈতিক অনিয়ম, গ্রাহক ঠকানো এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্য সমালোচনার মুখে ছিল। হ্যাকারদের দাবি যদি সত্য হয়, তাহলে এতে ইভ্যালির লাখো গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ব্যাংক তথ্যসহ সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ই-কমার্স খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রাহকের আস্থা। আর সে আস্থা এখন চরমভাবে নড়বড়ে হয়ে উঠেছে ইভ্যালির মতো কোম্পানির কারণে।

এখন পর্যন্ত ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া বা বিবৃতি দেয়নি। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা নাজুক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তত্ত্বাবধানে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি দ্রুত তদন্ত শুরু করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে অতীতের প্রতারণার অভিযোগের রেশ না কাটতেই এবার সাইবার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এটি শুধু ইভ্যালির জন্য নয়, দেশের পুরো ই-কমার্স খাতের জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা।

গ্রাহকের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে যা দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য হবে মারাত্মক হুমকি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ