“ড্যাপ মানি না”: রাজউক কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধন চেয়ে মঙ্গলবার রাজধানীতে রাজউক প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেছেন একদল ভূমি মালিক ও নাগরিক। ‘ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা নতুন ড্যাপ পরিকল্পনাকে “সিন্ডিকেট নির্ভর, বৈষম্যমূলক ও জনস্বার্থবিরোধী” আখ্যা দেন।

আন্দোলনের পটভূমি ও দাবিগুলো

সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর রাজউক ভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘রাজউকের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রতিবাদ’ এবং ২০২২ সালের ড্যাপ বাতিল করে ২০০৮ সালের ড্যাপ কার্যকরের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

একজন আন্দোলনকারী সাইদুর রহমান বলেন, “চূড়ান্ত ড্যাপে ঢাকার ভবনের উচ্চতা নির্বিচারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার জমির পাশেই ১০ তলা ভবন, অথচ আমাকে দেওয়া হচ্ছে ২ তলার অনুমোদন। এ বৈষম্য আমরা মানি না।”

অন্য একজন বলেন, “নতুন ড্যাপে ঢাকার অপরিকল্পিত এলাকাগুলোতে চরম বৈষম্য রাখা হয়েছে। আমরা চাই পরিকল্পনাটি সমতাভিত্তিক হোক।”

রাজউকের প্রতিক্রিয়া

বিক্ষোভ চলাকালে রাজউকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আজ ড্যাপ বিধিমালা নিয়ে রাজউকে একটি বৈঠক হচ্ছে। এই সভাকে কেন্দ্র করেই কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন। আন্দোলনের পেছনে আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রভাব রয়েছে বলেও আমাদের ধারণা।”

তিনি আরও জানান, “২০২২ সালের ড্যাপ বাস্তবায়নের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সংশোধনের দাবি উঠেছে। এসব দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে কিছু সংশোধনীও আনা হয়েছে।”

ড্যাপ: বিতর্কিত পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২০২২ সালের ২৪ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ‘ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এটি ঢাকায় ভূমির ব্যবহার ও ভবন নির্মাণের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। তবে এই পরিকল্পনায় ভবনের উচ্চতা সীমিত করে দেওয়ায় আবাসন খাত ও জমির মালিকদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করে।

সরকার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংশোধিত ড্যাপ প্রকাশ করে, যেখানে একাধিক সুবিধা—যেমন একত্রীভূত প্লটে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) বৃদ্ধি, ভবনের উচ্চতা ও প্রশস্ততায় ছাড় এবং সড়কের প্রস্থতাকে নমনীয় করা হয়।

তবে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই সংশোধন ‘আংশিক’ এবং ‘বৈষম্যপূর্ণ’, যা মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র জমির মালিকদের ভবিষ্যৎ সংকটে ফেলবে।

নীতিগত প্রশ্ন ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

নতুন ড্যাপ ঢাকার অবকাঠামোগত ভারসাম্য ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলেও, এতে নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য ও বাস্তবতা উপেক্ষার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের স্বার্থে ড্যাপ সংশোধন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।