পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস

নীল নদের দেশ মিশর, যেখানে যুগে যুগে রাজত্ব করেছেন ফারাওরা। তাদের গৌরবময় সাম্রাজ্য, বিশাল পিরামিড আর রহস্যময় মমিগুলো আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের বিস্ময় কেড়ে নেয়। কিন্তু এই ৫০০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে আছে এক অপ্রত্যাশিত সংযোগ, যা ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী আর ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলে। এটি শুধু ফারাওদের উত্থান-পতনের গল্প নয়, এটি এক মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের দম্ভ, পতন এবং মুসলিমদের বিজয়ের এক অসাধারণ আখ্যান।
নীল নদের দান ও ফারাওদের উত্থান: প্রায় ৫০০০ বছর আগে, যখন পৃথিবীতে জলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, তখন নীল নদের অফুরন্ত জলরাশি মিশরকে দিয়েছিল এক অতুলনীয় শক্তি। এই নদের আশীর্বাদে মিশর হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে কিং নরমালের মতো নেতার নেতৃত্বে মিশরে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম সুসংগঠিত রাজতন্ত্র। হাজার বছর ধরে মিশর ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি। এই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে ফারাওরা নিজেদেরকে কেবল রাজা নয়, বরং 'খোদা' হিসেবে দাবি করতে শুরু করে। তারা এমন এক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে প্রজারা বিশ্বাস করত যে ফারাওদের দাসত্ব করলেই কেবল পরকালে মুক্তি মিলবে।
মমি আর পিরামিডের রহস্য: ফারাওদের এই খোদা হওয়ার ধারণার একটি অদ্ভুত পরিণতি ছিল মমি তৈরির প্রচলন। তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও যদি শরীর অক্ষত থাকে, তবে তাদের 'খোদা' সত্তা টিকে থাকবে। তাই ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ থেকে অত্যন্ত নিপুণভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে (কেবল হৃদপিণ্ড বাদে) বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত করা হতো। এরপর সেই মমির ওপর তৈরি হতো বিশাল সব পিরামিড। খুফুর মতো ফারাওদের পিরামিডগুলো এত বিশাল ছিল যে, প্রায় ৩৫০০ বছর ধরে এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম স্থাপনা। কিন্তু এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ মিশরের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়।
হযরত ইউসুফ (আঃ) ও বনি ইসরাইলের আগমন: মিশরের অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে এক দাস হিসেবে আগমন ঘটে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর। তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করে তোলেন। এরপর তার বংশধর, অর্থাৎ বনি ইসরাইলরা মিশরে বসবাস শুরু করে এবং এক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এক নতুন ফারাওয়ের অত্যাচার ও হযরত মূসা (আঃ)-এর আবির্ভাব: কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! এক নতুন ফারাওয়ের আগমনের সাথে সাথে বনি ইসরাইলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এই ফারাও তাদের দাস বানিয়ে নেয় এবং জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, তার সাম্রাজ্য বিনাশকারী এক বনি ইসরাইলী শিশুর জন্ম ঠেকানোর জন্য সমস্ত নবজাতক পুত্রসন্তানকে হত্যার নির্দেশ দেয়। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেই জন্ম নেন হযরত মূসা (আঃ), যিনি অলৌকিকভাবে ফারাওয়ের ঘরেই পালিত হন।
ফারাও রামসেসের পতন ও মিশরের অন্ধকার যুগ: নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে হযরত মূসা (আঃ) ফারাও রামসেসের কাছে বনি ইসরাইলকে মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফারাও রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বনি ইসরাইলের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় লোহিত সাগরে ফারাও রামসেস ও তার বিশাল বাহিনী ডুবে যায়, যা ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনার পর মিশর আর কখনও তার পুরনো শক্তি ফিরে পায়নি এবং প্রবেশ করে এক দীর্ঘ অন্ধকার যুগে।
রাসূল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও মুসলিমদের বিজয়: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুসলিমরা একদিন মিশর জয় করবে এবং তিনি সেখানকার মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। রোমানদের ৬০০ বছরের শাসনের পর, হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের সময় সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত হয়। মুসলিমরা মিশর জয় করে এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
উপসংহার: ফারাওদের মিশর, তার সমৃদ্ধি, ধর্মীয় উন্মাদনা, এবং পতনের গল্প আজও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মের এই সমন্বিত আখ্যান প্রমাণ করে, মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার পেছনে রয়েছে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যা কখনো কখনো হাজার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।

প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে
আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে এই বিশাল মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণবন্ত সত্তার টিকে থাকার পেছনে রয়েছে এক অপরিহার্য উপাদান – পানি। 'পানির অপর নাম জীবন' – এই প্রবাদ বাক্যটি তাই কেবল কথার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে সুগভীর বৈজ্ঞানিক ও মহাজাগতিক সত্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে পানি আমাদের অস্তিত্বের মূল, সেই পানির জন্ম ঠিক কখন, কীভাবে হয়েছিল এই অনন্ত মহাবিশ্বে? সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের এক চমকপ্রদ উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
বিগ ব্যাং ও পানির প্রথম কণা: আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল ঘটনা 'বিগ ব্যাং' বা মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরেই প্রথম পানির কণা তৈরি হয়েছিল। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে একটি অতি ক্ষুদ্র, উত্তপ্ত এবং ঘন বিন্দু থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়। এরপর এই মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হতে হতে বিভিন্ন কণার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি।
কোরআনের অবাক করা ইঙ্গিত: বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারের বহু শতাব্দী আগেই পবিত্র কোরআনে পানির উৎপত্তির এক ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?"। এই আয়াতে 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল' (অর্থাৎ একীভূত অবস্থা) এবং 'অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম' (অর্থাৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং) – এই দুটি ধাপের পরপরই 'প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম' (অর্থাৎ পানির উৎপত্তি) – এই ধারাবাহিকতা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এটি নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে প্রথম দিকেই পানির অস্তিত্ব ছিল।
সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও পানির জন্ম প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে আরও গভীরের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের মতে, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রগুলো ধ্বংস হওয়ার পর যে 'সুপারনোভা' বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তারই ফলস্বরূপ পানির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন ঠান্ডা হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি তৈরি হয়। আমরা জানি, পানি রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত।
বিগ ব্যাংয়ের শুরুর দিকে যখন মহাবিশ্ব শীতল হতে শুরু করে, তখন হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মতো হালকা উপাদানগুলো তৈরি হয়। প্রায় ১০ কোটি বছর পর এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে একত্রিত হয়ে নক্ষত্রে পরিণত হয়। এই নক্ষত্রগুলো যখন তাদের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে বিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে যায়, তখন তাপমাত্রা প্রায় ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর অণু, অর্থাৎ পানির অণু তৈরি করে।
উপসংহার: পানির এই মহাজাগতিক সৃষ্টি প্রক্রিয়া, যা সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে শুরু হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিলনে শেষ হয়, তা অত্যন্ত দীর্ঘ ও জটিল একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এই বিশাল মহাজাগতিক ঘটনাপ্রবাহ কোনো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার নির্দেশ ছাড়া ঘটা কি সম্ভব? আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্যগুলো উন্মোচন করছে, তখন কোরআনের হাজার বছর আগের আয়াতগুলো যেন সেই রহস্যের চাবি হয়ে ধরা দিচ্ছে।
জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। আমাদের জানার বাইরেও রয়েছে এক বিশাল ও অদৃশ্য জগৎ। যুগ যুগ ধরে ধর্মগ্রন্থগুলো, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন, জ্বীন নামক এক অদৃশ্য জাতির কথা বলে আসছে, যারা আগুন থেকে তৈরি এবং যাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনব্যবস্থা। এতদিন এই বিশ্বাসটি মূলত আধ্যাত্মিক জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু যুগান্তকারী তত্ত্ব এই অদৃশ্য জগতের রহস্যের দিকে নতুন করে আঙুল তুলেছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স, প্যারালাল ইউনিভার্স এবং অ্যান্টিম্যাটারের মতো জটিল ধারণাগুলো কি তবে জ্বীনের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হতে চলেছে?
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্বীন হলো এক বিশেষ সৃষ্টি, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের মতোই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" এই অদৃশ্য সৃষ্টিকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মনে অবিশ্বাস থাকলেও বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক কিছু তত্ত্ব নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
অ্যান্টিম্যাটার ও অদৃশ্য জগৎ: পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বে প্রতিটি কণার (Particle) বিপরীতে একটি প্রতিকণা (Anti-particle) রয়েছে। যেমন, ইলেকট্রনের বিপরীতে রয়েছে পজিট্রন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের দৃশ্যমান জগৎ যদি পদার্থ (Matter) দিয়ে তৈরি হয়, তবে এর সমান্তরালে প্রতিপদার্থ (Anti-matter) দিয়ে তৈরি একটি জগৎ থাকাও সম্ভব। এই প্রতিপদার্থের জগৎ আমাদের কাছে অদৃশ্য। পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বিপরীতে যদি সমসংখ্যক 'প্রতি-মানুষ' থাকে, যারা অদৃশ্য, তবে সেই ধারণাকে কি জ্বীনের অস্তিত্বের সাথে তুলনা করা চলে?
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অদ্ভুত জগৎ: কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগৎ আরও রহস্যময়। এর 'সুপারপোজিশন' তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে এবং একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। আবার 'কোয়ান্টাম টানেলিং' তত্ত্ব বলছে, একটি কণা যেকোনো বাধা ভেদ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। এই ধারণাগুলো যদি সত্যি হয়, তবে এমন এক সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব, যারা আমাদের মাত্রার সীমাবদ্ধতা মানে না এবং যেকোনো বাধা অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে। কোরআনে বর্ণিত জ্বীনদের অদৃশ্য থাকার এবং বিভিন্ন রূপ ধারণ করার ক্ষমতার সঙ্গে এই ধারণাগুলোর অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব: আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো 'প্যারালাল ইউনিভার্স' বা সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা। আমাদের মহাবিশ্বের মতোই আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব একইসাথে বিদ্যমান, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। পবিত্র কোরআনে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানের 'মাল্টিভার্স' তত্ত্ব যেন কোরআনের এই ধারণারই প্রতিধ্বনি। যদি সত্যিই সমান্তরাল কোনো জগৎ থেকে থাকে, তবে সেখানে জ্বীনের মতো বুদ্ধিমান مخلوق বসবাস করতেই পারে।
শেষ কথা: যদিও বিজ্ঞানীরা জ্বীনের অস্তিত্ব নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে পদার্থবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী তত্ত্বগুলো আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা এতদিন কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল, তা এখন বিজ্ঞানের আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে। ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই মেলবন্ধন হয়তো একদিন অদৃশ্য জগতের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করবে।
ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ছিনতাই: ২ লক্ষ ডলার নিয়ে আকাশেই উধাও সেই রহস্যমানব!
১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর, থ্যাংকসগিভিং উৎসবের ঠিক আগের সন্ধ্যায় আমেরিকার পোর্টল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩০৫ সিয়াটলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। যাত্রীরা জানতেন না, তারা আমেরিকার বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে কিংবদন্তী তুল্য এক অপরাধের সাক্ষী হতে চলেছেন। বিমানে আরোহণকারী যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৪০ ঊর্ধ্ব এক শান্ত চেহারার ভদ্রলোক, যিনি নিজের টিকিট কিনেছিলেন 'ড্যান কুপার' নামে। বিমান আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণ পর কুপার একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টকে একটি নোট দিয়ে জানান যে, তার কাছে বোমা আছে। এরপরের কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে আমেরিকার বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক এবং রহস্যময় ছিনতাইয়ের ঘটনা।
ডিবি কুপার: এক রহস্যময় ছিনতাইকারী ড্যান কুপারকে দেখে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে তিনি একটি বিমান ছিনতাই করতে চলেছেন। তার পরনে ছিল একটি কালো বিজনেস সুট, সাদা শার্ট এবং একটি কালো ক্লিপ-অন টাই। তার আচরণ ছিল অবিশ্বাস্য রকম শান্ত এবং পেশাদার, যা তাকে সেই সময়ের অন্যান্য ছিনতাইকারীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তুলেছিল।
কুপারের দাবি ও কৌশল ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট ফ্লোরেন্স শ্যাপনার যখন কুপারের নোটটি পড়েন, তখন তিনি ভয়ে জমে যান। নোটে লেখা ছিল যে তার ব্রিফকেসে একটি বোমা আছে এবং তিনি চান ফ্লোরেন্স তার পাশে এসে বসুক। ফ্লোরেন্স তার পাশে বসার পর কুপার তার ব্রিফকেসটি সামান্য খুলে ভেতরে থাকা আটটি লাল রঙের সিলিন্ডার (যা দেখতে ডিনামাইট-এর মতো), একটি বড় ব্যাটারি এবং কিছু তারের একটি জট দেখান।
কুপার তার দাবিগুলো পরিষ্কারভাবে জানান:
মুক্তিপন হিসেবে ২ লক্ষ আমেরিকান ডলার, যা হবে ২০ ডলারের অচিহ্নিত (unmarked) সিরিয়াল নম্বরের নোটে।
চারটি প্যারাসুট: দুটি প্রধান ব্যাকপ্যাক স্টাইলের এবং দুটি রিজার্ভ (বুকের উপর বাঁধার মতো)।
সিয়াটল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বিমানটিতে পুনরায় জ্বালানি ভরার জন্য একটি ফুয়েল ট্রাক প্রস্তুত রাখতে হবে।
কুপারের আচরণ এবং তার দাবিগুলো এফবিআই এবং এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে হতবাক করে দেয়। তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে কথা বলছিলেন এবং তার নির্দেশের পেছনে একটি অসাধারণ মনস্তাত্ত্বিক চাল ছিল। তিনি চারটি প্যারাসুট চেয়েছিলেন কারণ তিনি এটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে কর্তৃপক্ষ তাকে ত্রুটিপূর্ণ প্যারাসুট দেবে না, কারণ তারা ভাববে যে কুপার হয়তো একজন ক্রুকে জিম্মি হিসেবে সাথে নিয়ে ঝাঁপ দিতে পারে।
ঘটনার বিবরণ কুপারের নির্দেশ অনুযায়ী বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন উইলিয়াম স্কট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানান। নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড নায়রব তৎক্ষণাৎ মুক্তিপন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এফবিআই দ্রুত ১০,০০০টি ২০ ডলারের নোট যোগাড় করে, যার প্রতিটি নোটের সিরিয়াল নম্বর মাইক্রোফিল্ম ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় যাতে পরবর্তীতে টাকাগুলো ট্র্যাক করা যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলার সময় ফ্লাইট ৩০৫ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সিয়াটলের পিউজেট সাউন্ডের আকাশে চক্কর কাটতে থাকে। যাত্রীরা তখনও জানত না যে তাদের বিমানটি ছিনতাই হয়েছে; তাদের বলা হয়েছিল যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণে দেরি হচ্ছে।
বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি সিয়াটল টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুপার নির্দেশ দেন বিমানটিকে রানওয়ের একটি নির্জন এবং উজ্জ্বলভাবে আলোকিত স্থানে নিয়ে যেতে। সেখানে নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্টের একজন কর্মচারী টাকা ভর্তি একটি নাইলনের ব্যাগ এবং প্যারাসুটগুলো নিয়ে বিমানে ওঠান। টাকা এবং প্যারাসুট হাতে পাওয়ার পর কুপার তার কথা রাখেন এবং বিমানের ৩৬ জন যাত্রী ও দুজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টকে মুক্তি দেন। বিমানে তখন থেকে যায় শুধু পাইলট, কো-পাইলট, একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট টিনা ম্যাকলো এবং ড্যান কুপার।
পলায়ন সিয়াটলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে জ্বালানি ভরার পর কুপার পাইলটকে তার নতুন এবং চূড়ান্ত পরিকল্পনা জানান। তার নির্দেশগুলো আরো বেশি অবাক করার মতো ছিল এবং এটি প্রমাণ করে যে তিনি কোনো সাধারণ অপরাধী নন, তার বিমান এবং এরোডাইনামিক্স সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল। তার ফ্লাইট প্ল্যান ছিল বিমানটিকে মেক্সিকো সিটির দিকে উড়ে যেতে হবে, তবে রেনো, নেভাদায় জ্বালানি ভরার জন্য একটি স্টপ থাকবে। তিনি নির্দেশ দেন, বিমান থেকে ১০,০০০ ফুটের নিচে এবং প্রতি ঘণ্টায় ২০০ নট (প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার) এর কম গতিতে উড়তে হবে। সেই সাথে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো থাকতে হবে, ট্রেইলিং ফ্ল্যাপ ১৫ ডিগ্রিতে বাঁকানো থাকতে হবে এবং কেবিনের ভেতরের বায়ুচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এই সবগুলোই ছিল একটি বোয়িং ৭২৭ এর মতো বাণিজ্যিক জেটলাইনার থেকে প্যারাসুট দিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য আদর্শ এবং নিরাপদ পরিস্থিতি।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি ছিল বিমানের পেছনের দিকের সিঁড়ি বা আফটার স্টার সম্পর্কিত। বোয়িং ৭২৭ এর পেছনে একটি সিঁড়ি ছিল যা মাটি থেকে যাত্রী উঠানামার জন্য ব্যবহৃত হতো। কুপার নির্দেশ দেন উড্ডয়নের পর এই সিঁড়িটি নামিয়ে রাখতে হবে। এটি ছিল তার পালিয়ে যাওয়ার মূল পরিকল্পনা। এর আগে কোনো ছিনতাইকারী এই দুর্বলতাটি ব্যবহার করেনি।
রাত প্রায় ৭টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইট ৩০৫ সিয়াটল থেকে আবারও আকাশে ওড়ে। মার্কিন বিমান বাহিনী দুটি এফ-১০৬ ফাইটার জেটকে বিমানটিকে অনুসরণ করার জন্য পাঠায়, কিন্তু কুপারের নির্দেশ অনুযায়ী বিমানটি এত নিচ দিয়ে এবং ধীরগতিতে উড়ছিল যে রাতের অন্ধকারে ফাইটার জেটগুলো নিরাপদে খুব কাছাকাছি আসতে পারছিল না। তারা এমনকি কুপারকে ঝাঁপ দিতেও দেখেনি।
বিমানটি সিয়াটল এবং রেনোর মাঝপথে থাকাকালীন কুপার কেবিনে থাকা শেষ ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট টিনা ম্যাকলোকে ককপিটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। রাত ৮টার ঠিক পরে ককপিটের একটি সতর্কীকরণ বাতি জ্বলে ওঠে, যা নির্দেশ করে যে পেছনের সিঁড়িটি নামানো হয়েছে। এরপর রাত ৮টা ১৩ মিনিটে দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়াশিংটনের ঘন অন্ধকার জঙ্গলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিমানের লেজের অংশটি হঠাৎ সামান্য উপরের দিকে উঠে যায়। পাইলটরা বুঝতে পারেন কোনো ভারী বস্তু বিমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ড্যান কুপার ২ লক্ষ ডলারের ব্যাগ এবং দুটি প্যারাসুট সহ মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঠান্ডা এবং ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে ১০,০০০ ফুট উপর থেকে নিকষ কালো রাতের গভীরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
তদন্ত ও রহস্য এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিমানটি উড়তে থাকে। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে বিমানটি নেভাদার রেনো বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। এফবিআই এজেন্টরা বন্দুক হাতে বিমানটিকে ঘিরে ফেলে এবং ভেতরে প্রবেশ করে, কিন্তু তারা যা খুঁজে পায় তা হলো একটি খালি কেবিন, কুপারের ফেলে যাওয়া কালো ক্লিপ-অন টাই এবং দুটি প্যারাসুট। ডিবি কুপার উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর শুরু হয় এফবিআই-এর ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল তদন্ত, যার সাংকেতিক নাম ছিল 'নোরজ্যাক' (NORJAK)। এফবিআই এজেন্ট, মার্কিন সৈন্য এবং শত শত স্বেচ্ছাসেবক মিলে ওয়াশিংটন এবং ওরেগনের সেই বিস্তীর্ণ এবং দুর্গম জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি চালায়। কিন্তু তারা কুপারের কোনো চিহ্ন, তার প্যারাসুট বা টাকার ব্যাগের কোনো অংশই খুঁজে পায়নি। এফবিআই প্রথম পাঁচ বছরেই ৮০০-এর বেশি সন্দেহভাজনকে জেরা করে, কিন্তু কারো বিরুদ্ধেই কোনো শক্ত প্রমাণ মেলেনি। 'ডিবি কুপার' নামটি আসলে একটি মিডিয়ার ভুল ছিল; ছিনতাইকারী নিজের নাম বলেছিল 'ড্যান কুপার', কিন্তু পুলিশ ঘটনার পরপরই পোর্টল্যান্ডের 'ডিবি কুপার' নামে এক ব্যক্তিকে জেরা করে এবং একজন রিপোর্টার ভুল করে সেই নামটি প্রকাশ করে দেন। এরপর থেকে ডিবি কুপার নামটি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়।
কুপার বিমানে যা কিছু ফেলে গিয়েছিলেন তা নিয়ে গবেষকরা দশকের পর দশক ধরে গবেষণা চালিয়েছেন। তার ফেলে যাওয়া টাই থেকে পরবর্তীতে ডিএনএর আংশিক প্রোফাইল পাওয়া গেলেও তা কোনো সন্দেহভাজনের সাথে মেলেনি। তবে টাই থেকে কিছু বিরল টাইটেনিয়ামের কণা পাওয়া গিয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা হয় যে কুপার হয়তো সে সময়ে বোয়িং এর মতো কোনো এরোস্পেস বা রাসায়নিক কারখানায় কাজ করতেন। তার এই একটি অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সমস্ত বোয়িং ৭২৭ বিমানে একটি বিশেষ যন্ত্র বা 'কুপার ভেন' (Cooper Vane) লাগানোর নির্দেশ দেয়, যা ছিল বিমান চলাকালীন পেছনের সিঁড়ি নামানো আটকানোর জন্য।
টাকার সন্ধান ও নতুন প্রশ্ন ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। ওয়াশিংটনের টিনাব নামক স্থানে আট বছর বয়সী এক বালক ব্রায়ান ইঙ্গলম্যান কলম্বিয়া নদীর তীরে বালিতে খেলার সময় মাটির নিচে পুঁতে রাখা তিনটি টাকার বান্ডেল খুঁজে পায়। সেগুলো ছিল ২০ ডলারের নোট, এবং এফবিআই নিশ্চিত হয় যে এগুলো সেই টাকা যা নয় বছর আগে ডিবি কুপারকে মুক্তিপন হিসেবে দেয়া হয়েছিল। সেখানে ছিল মোট ৫৮০০ ডলার, যা কুপার কেসের একমাত্র বাস্তব প্রমাণ। কিন্তু এই আবিষ্কার রহস্যের কোনো সমাধান করার পরিবর্তে আরও নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়। টাকাগুলো কুপারের ঝাঁপ দেওয়ার সম্ভাব্য স্থান থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে ছিল। কীভাবে এগুলো এখানে এলো? কুপার কি ঝাঁপ দেওয়ার সময় টাকার একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছিল, নাকি সে বেঁচে ছিল এবং পরে টাকাগুলো এখানে পুঁতে রেখেছিল? অথবা নদীর স্রোতে কি কয়েক বছর ধরে বান্ডেলগুলোকে এখানে ভাসিয়ে এনেছিল? টাকায় লেগে থাকা 'ডায়াটম' নামক এক ধরনের শৈবালের উপর গবেষণা করে গবেষকরা ধারণা করেন যে, টাকাগুলো সম্ভবত নদীতে ভেসে এসেছিল, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। সবচেয়ে বড় রহস্য হলো, বাকি ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২০০ ডলারের একটি নোটও আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কুপারের পরিণতি বিগত ৫০ বছরে অসংখ্য তত্ত্ব এবং সন্দেহভাজনের নাম উঠে এসেছে। তবে এফবিআই এবং অনেক বিশেষজ্ঞই বিশ্বাস করেন যে কুপারের সেদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। তিনি একটি প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে রাতের অন্ধকারে অপরিচিত এক দুর্গম জঙ্গলের উপর ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তার পরনে ছিল সাধারণ বিজনেস সুট এবং লোফার জুতো, যা সেই ঠান্ডার জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। অনেকেই মনে করেন তিনি হয়তো ঝাঁপ দেওয়ার সময়ই মারা গিয়েছিলেন অথবা মাটিতে নামার পর প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।
২০১৬ সালে প্রায় ৪৫ বছর ধরে তদন্ত চালানোর পর এফবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবি কুপার কেসটি ক্লোজ করে দেয়। তারা জানায় যে এই মামলার পেছনে আর অর্থ এবং সময় ব্যয় করা সম্ভব নয়। তবে যদি ভবিষ্যতে প্যারাশুট বা টাকার মতো কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তারা পুনরায় তদন্ত শুরু করবে।
ডিবি কুপারের গল্পটি শুধু একটি অমীমাংসিত অপরাধের কাহিনী নয়, এটি হলো সাহস, ধৃষ্টতা এবং রহস্যের এমন এক মিশ্রণ যা তাকে আমেরিকান লোককথার এক কিংবদন্তী চরিত্রে পরিণত করেছে।
মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান
মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা যে স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। কোরআনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুপ্রেরণায় মুসলমানরা বিজ্ঞানের সব শাখায় জ্ঞানচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন এবং এক অনন্য স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। পবিত্র কোরআনে মানুষের চিন্তা ও সৃষ্টিকে অন্বেষণের যে আহ্বান করা হয়েছে, তার ফলেই মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেয়। ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি তার বিখ্যাত গ্রন্থে বলেছেন, “কোরআনে এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা খণ্ডনযোগ্য।”
৫টি প্রধান ক্ষেত্রে মুসলিম অবদান
১. রসায়ন (Chemistry): রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান
প্রাচীন মিশরে রসায়ন চর্চা শুরু হলেও, তা প্রকৃত বৈজ্ঞানিক শাখায় রূপ নেয় মুসলমানদের হাতে। জাবির ইবনে হাইয়ানকে বলা হয় ‘রসায়নের জনক’। তিনি হারুনুর রশিদের শাসনামলে কুফায় তার গবেষণাগারে গন্ধক ও পারদের সংমিশ্রণে সোনা উৎপাদনের ফরমূলা আবিষ্কার করে পৃথিবীকে বিস্মিত করেছিলেন। তিনি প্রথমবার রাসায়নিক বিক্রিয়ার নীতি, গলন, স্ফুটন, পাতন ও স্ফটিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন। ঐতিহাসিক আমির আলি যথার্থই বলেছেন, “রসায়ন একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রশ্নাতীতভাবে মুসলমানদের আবিষ্কার।”
২. পদার্থবিজ্ঞান (Physics): আলোকবিজ্ঞানের সূচনা
পবিত্র কোরআনের সুরা নূর-এর অনুপ্রেরণায় মুসলমান বিজ্ঞানীরা আলোর রহস্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইবনে হাইসাম (আলহাজেন) আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত। তার লেখা ‘কিতাব আল-মানাজির’ গ্রন্থে তিনি আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সঠিক ব্যাখ্যা দেন। তিনিই প্রথম ক্যামেরা অবস্কিউরা-এর ধারণা দেন, যা আধুনিক ক্যামেরার ভিত্তি।
৩. চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science): ইবনে সিনা ও আল-জাহরাবি
ইসলাম চিকিৎসাকে ধর্মীয় দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইসলামী চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্থান ঘটে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে।
ইবনে সিনা: তিনি চিকিৎসাবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তার বিখ্যাত ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ গ্রন্থটি কয়েক শতাব্দী ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।
আবুল কাসেম আজ-জাহরাবি: তিনি সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের জনক। তিনি প্রথম সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন।
ইবনে নাফিস: তিনিই প্রথম রক্ত সঞ্চালনের ধারণা দেন, যা আধুনিক শারীরবিদ্যার এক মৌলিক আবিষ্কার।
৪. গণিত ও বীজগণিত (Mathematics and Algebra): অ্যালগরিদমের জন্ম
সংখ্যা ও পরিমাপ ছাড়া বিজ্ঞান কল্পনাই করা যায় না। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি-এর নাম থেকেই অ্যালগরিদম শব্দের উৎপত্তি। তার ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ গ্রন্থ থেকেই অ্যালজেবরা শব্দের জন্ম। তিনি প্রথম ‘শূন্য’ ধারণা প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টির মতে, “ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত ও জ্যামিতি প্রধানত মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”
৫. সমর বিজ্ঞান (Military Science) ও জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)
সামরিক: ওমর (রা.) সৈন্যদের বেতন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ‘দিওয়ান’ পদ্ধতি চালু করেন। উমাইয়া যুগে মুসলমানরা প্রথম ‘মিনজানিক’ নামক কামান বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। মুআবিয়া (রা.)-এর সময় গঠিত হয় মুসলমানদের প্রথম নৌবাহিনী।
জ্যোতির্বিজ্ঞান: কোরআনের অনুপ্রেরণায় আল-ফারাবি প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্র আবিষ্কার করেন। মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহারিক পরিমাপ প্রবর্তন করেন।
ইসলামী বিজ্ঞানের প্রভাব
মুসলিম বিজ্ঞানীরা ইউরোপে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেন। বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমা’ বা হাউস অফ উইজডমে অনুবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রীক, পারস্য ও ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে ইসলামী চিন্তার সঙ্গে একীভূত করা হয়, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় রেনেসাঁঁর জন্ম দেয়। ইসলামী সভ্যতার সেই অর্জন আজও মানবজাতির অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক।
লেখক: শিক্ষার্থী ও দপ্তর সম্পাদক, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার কলাম এন্ড কনটেন্ট রাইটার্স
১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই
এক শতাব্দী আগে, ১৯২৯ সালে, স্কটিশ উদ্ভাবক এডউইন হাবল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার এক পর্যবেক্ষণাগার থেকে এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে আসেন।
তিনি ঘোষণা করেন যে, কোনো ছায়াপথ (Galaxy) আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে মহাকাশে সরে যাচ্ছে। হাবলের এই কাজ প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
গ্রেট ডিবেট এবং মিল্কি ওয়ের বাইরে জগৎ
১৯১৯ সালে হাবল মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি বড় বিতর্ক চলছিল, যা 'দ্য গ্রেট ডিবেট অফ ১৯২০' নামে পরিচিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হার্লো শেপলি জোর দিচ্ছিলেন যে আমাদের পরিচিত স্থানীয় ছায়াপথ (Milky Way) এতই বিশাল যে এর বাইরে আর কোনো মহাজাগতিক বস্তু নেই। অন্যদিকে, হেবার কার্টিস যুক্তি দেন যে আমাদের ছায়াপথের বাইরেও অন্য ছায়াপথ বিদ্যমান।
এই বিতর্কে প্রবেশ করে হাবল মাউন্ট উইলসনের ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অ্যান্ড্রোমিডা ‘নেবুলা’-র দিকে নজর দেন। নেবুলা ছিল সে সময় আকাশের অনির্দিষ্ট আলোর মেঘকে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ।
হেনরিটার কাজ ও হাবলের গণনা
অন্যান্য ছায়াপথের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হার্ভার্ড কলেজ অবজারভেটরির হেনরিয়েটা সোয়ান লেভিট-এর কাজ হাবলের জন্য ভিত্তি তৈরি করে দেয়। লেভিট সেফেইড ভ্যারিয়েবল নামের এক শ্রেণির তারার উজ্জ্বলতা এবং তাদের পালসেশন পিরিয়ডের (আলোর বাড়া-কমার সময়কাল) মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আবিষ্কার করেন, যা এখন লেভিট’স ল (Leavitt's Law) নামে পরিচিত।
১৯২৩ সালের শরতে হাবল অ্যান্ড্রোমিডা নেবুলাতে প্রথম সেফেইড শনাক্ত করেন। এই স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেলগুলোর সাহায্যে তিনি হিসাব করে দেখেন, অ্যান্ড্রোমিডা প্রায় ১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত—যা আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে উদার অনুমান থেকেও অনেক বেশি।
এই আবিষ্কারের খবর পেয়ে শেপলি তার এক সহকর্মীকে বলেছিলেন, "এই সেই চিঠি যা আমার মহাবিশ্বকে ধ্বংস করে দিল।" এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অন্যান্য ছায়াপথের অস্তিত্বের বিতর্ক চিরতরে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
প্রসারিত মহাবিশ্ব ও রেডশিফ্টিং
কয়েক বছর পর হাবল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেন। এর আগে ১৯১২ সালের দিকে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেস্টো স্লাইফার অ্যান্ড্রোমিডার মতো নেবুলাগুলোর ‘রেডশিফ্টিং’ আবিষ্কার করেন। সহজ কথায়, কোনো বস্তু যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তার আলো বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে সরে যায়। স্লাইফার দেখলেন, অধিকাংশ নেবুলাই দ্রুত গতিতে সরে যাচ্ছে।
১৯২৮ সালে হাবল তার সহকারী মিলটন হিউম্যাসনকে নিয়ে এই রেডশিফ্টিংয়ের তথ্য এবং ছায়াপথগুলোর দূরত্ব গণনা করেন। পরের বছর ১৯২৯ সালে হাবল তার গবেষণাপত্র "A Relation Between Distance and Radial Velocity Among Extra-Galactic Nebulae" প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রটি ঘোষণা করে যে:
মহাকাশের কোনো বস্তুর বাইরের দিকে যাওয়ার গতি (velocity) তার পৃথিবী থেকে দূরত্বের সমানুপাতিক (Hubble constant)।
অর্থাৎ, একটি ছায়াপথ আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে সরে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তই মহাবিশ্বের প্রসারণের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করে।
হাবলের উত্তরাধিকার
হাবল তার আবিষ্কারের চূড়ান্ত কারণ ব্যাখ্যা না করলেও, পরবর্তী বিজ্ঞানীরা তার পর্যবেক্ষণকেই মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন। তার গণনা করা কিছু সংখ্যায় সামান্য ত্রুটি ছিল (যেমন অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব এখন ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ এবং হাবল কনস্ট্যান্টের মান বর্তমানে ৭০ কিমি/সে/এমপিসি), তবুও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার প্রভাব ছিল বিশাল।
অধ্যাপক এড বুই বলেন, “তিনি প্রায় একটি নতুন শাখার জন্ম দিয়েছেন—এক্সট্রাগ্যালাকটিক অ্যাস্ট্রোনমি।” হাবলের এই উত্তরাধিকারই ১৯৯০ সালে উৎক্ষেপিত শক্তিশালী হাবল স্পেস টেলিস্কোপ-এর নামকরণের অনুপ্রেরণা।
আমাজনের গভীরে লুকানো রহস্যময় সোনালী শহর, যা খুঁজছে বিশ্ব
আমাজন রেইনফরেস্ট, পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়, আজও অনেক দুর্ভেদ্য রহস্যের কুল কিনারা হয়নি। এই সুবিস্তৃত ঘন অরণ্য প্রাচীন সভ্যতার গোপন কথা, লোককথা ও রোমাঞ্চকর উপাখ্যানে মোড়া। আমাজন বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট, যা দক্ষিণ আমেরিকার আটটি দেশকে জড়িয়ে রেখেছে এবং এর বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের পাশাপাশি রয়েছে এক গভীর ও চিরায়ত রহস্যের হাতছানি।
এল ডোরাডো বা সোনালী শহরের কিংবদন্তি:
শত শত বছর ধরে এই বনের রহস্য নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। পর্তুগিজরা বিশ্বাস করত, এই ঘন অরণ্যের গভীরে লুকিয়ে আছে এক গুপ্ত শহর যা সম্পূর্ণ সোনার তৈরি। এই শহরটি 'এল ডোরাডো' (El Dorado) নামে পরিচিত ছিল। তাদের ধারণা ছিল, এখানে অমূল্য রত্নরাজি সঞ্চিত রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক গল্প থেকে এই বিশ্বাসটি আসে, যেখানে বলা হয় লুকানো এই শহরটি পাহারা দেয় 'আমাজন' নামে অভিহিত বিশেষ একদল নারী যোদ্ধা। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, ফরাসি অভিযাত্রীরা একসময় এই লুকায়িত শহরের খোঁজ করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। শত চেষ্টা সত্ত্বেও কেউই এর হদিস পায়নি। তবে এই নারী যোদ্ধাদের নাম অনুসারেই বনটির নাম হয় 'আমাজন'।
অজানা উপজাতি ও প্রাচীন নিদর্শন:
আমাজন বনভূমির প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। জানা যায়, এখানে এখনো বহু অজানা উপজাতির বসবাস, যারা আধুনিক জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বাইরের বিশ্ব প্রায় কিছুই জানে না। আমাজনে বরফ যুগের বেশ কিছু চিত্রকর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে একসময় এই অঞ্চল বরফে ঢাকা ছিল। ২০১৩ সালে আমাজনের গভীরে একটি অদ্ভুত কাঠামো পাওয়া যায়, যা মাকড়সার বাসা বা প্রাচীন সংস্কৃতির প্রতীক তা নিয়ে রয়েছে গভীর সংশয়।
আমাজনীয় অন্ধকার পৃথিবী (ADE):
আমাজনের গভীরতম গোপন রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক ভিন্ন ধরনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের অভিযানে নেমেছেন, যেখানে মিলেছে প্রাচীন মানুষের স্বাক্ষর। ধ্বংসাবশেষটি 'আমাজনীয় অন্ধকার পৃথিবী' (Amazonian Dark Earth বা ADE) নামে পরিচিত। ধ্বংসাবশেষের কাঠকয়লা কালো মাটির স্তরটিকে 'কালো সোনা' বা 'টেরাপেতা' (Terra Preta) নামে অভিহিত করা হয়। এ স্তরটি প্রায় ৩.৮ মিটার পর্যন্ত পুরু হতে পারে এবং এটি আমাজন অববাহিকা জুড়ে ভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। রেইনফরেস্টের সাধারণ বালুকাময় মাটির তুলনায় এটি অত্যন্ত উর্বর, যা ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই উর্বর স্তরটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি; এটি প্রাচীন মানুষের কাজ। এ সমৃদ্ধ মাটি এক ভিন্ন সময়ের সাক্ষ্য বহন করে, যখন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো এই রেইনফরেস্ট জুড়ে বসতির এক সমৃদ্ধ জাল তৈরি করেছিল।
উপান উপত্যকার হারানো শহর:
ইকুয়েডরের উপান উপত্যকায় সম্প্রতি ২০০০ বছরের পুরনো একটি হারানো শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যেখানে মিলেছে লুকানো সভ্যতার চিহ্ন। এটি এই প্রশ্ন আরও জোরালো করেছে যে, আমাজনে এমন আরও অনেক প্রাচীন বসতি লুকিয়ে থাকতে পারে। আমাজনে যাত্রাপথ অত্যন্ত কঠিন হলেও গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু মন তাদের থামাতে পারেনি। তবে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা আমাজন রেইনফরেস্টের সমৃদ্ধ রহস্য, যার প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার স্বাক্ষর এবং প্রকৃতির অমূল্য দান, আজও অধরা রয়ে গেছে।
হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?
১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল, এই পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। এই ভয়াবহ গণহত্যার পর তিনি বলেছিলেন যে, কিছু ইহুদিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন জানতে পারে কেন তিনি এই হত্যাযজ্ঞে মেতেছিলেন। গ্যাস চেম্বার, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বা গণগুলি বর্ষণের মতো ভয়ানক উপায়ে হিটলার ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু ইহুদি নয়, তিনি ১ লাখ সমকামী পুরুষকেও হত্যা করেছিলেন।
আত্মহত্যার আগে, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল, হিটলার একটি নোটে লিখেছিলেন যে, কয়েক শতাব্দী পর ইহুদিরা পৃথিবীতে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালাবে এবং ইউরোপীয়রা এই রক্তপাতের জন্য দায়ী থাকবে।
ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ঘৃণার কারণ:
নিকৃষ্ট জীব ও অশান্তির মূল: হিটলার ইহুদিদেরকে 'নিকৃষ্ট জীব' (আর্গানিমাস নিদ্রিম নিভেউ) বলে অভিহিত করতেন। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী 'মাইন ক্যাম্প' (Mein Kampf) বইয়ে তিনি লেখেন, "পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ইহুদিরাই। নর্দমার কিটের মতো তাদের আচরণ, এরা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে মানব সমাজের ধ্বংস শুরু করে"।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
আর্ট স্কুলের প্রত্যাখ্যান: জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান হিটলারের স্বপ্ন ছিল চিত্রশিল্পী হওয়ার। কিন্তু ভিয়েনার আর্ট স্কুল একাডেমি টানা দুই বছর তার ভর্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। শোনা যায়, সেই আর্ট স্কুলের রেক্টর ছিলেন একজন ইহুদি, এবং ধারণা করা হয় এখান থেকেই তার ইহুদি বিদ্বেষের সূত্রপাত।
মায়ের চিকিৎসকের ধর্ম: হিটলারের মা ক্লারা হিটলার স্তন ক্যান্সারে মারা যান। তার চিকিৎসা করেছিলেন একজন ইহুদি চিকিৎসক ডক্টর এডোয়ার্ড ব্লক। কিছু মানুষ দাবি করে, মায়ের মৃত্যুর কারণে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ক্ষোভ বেড়েছিল, যদিও এই যুক্তি যথেষ্ট দুর্বল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়: ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির শোচনীয় পরাজয় হয়। হিটলার নিজে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জার্মান আর্মির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি এবং অনেক জার্মান জাতীয়তাবাদী বিশ্বাস করতেন যে, জার্মানি যুদ্ধে পরাজিত হয়নি, বরং দেশের অভ্যন্তরে থাকা ইহুদি ও সমাজতান্ত্রিকরাই জার্মানির বুকে ছুরি মেরেছে। এই ধারণা থেকেই হিটলার ইহুদিদেরকে 'বেইমান জাতি' মনে করতে শুরু করেন এবং তাদের কারণেই জার্মানির পরাজয় হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন।
ক্ষমতায় আগমন ও জনসমর্থন: ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব এবং হতাশায় ভোগা জার্মান জনগণকে তিনি আশার আলো দেখিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং দেশের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে—এই বিশ্বাস তিনি জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিলেন। এই বিপুল জনসমর্থন ছাড়া হিটলারের পক্ষে ইহুদি নিধনযজ্ঞ চালানো সম্ভব হতো না।
হলোকাস্ট ও ফাইনাল সলিউশন:
১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে সংঘটিত ইহুদি নিধনের এই প্রয়াসকে 'হলোকাস্ট' (Holocaust) বলা হয়। হিটলারের 'ফাইনাল সলিউশন' (Final Solution) নীতির ওপর ভিত্তি করে হলোকাস্ট বাস্তবায়িত হয়েছিল। 'ফাইনাল সলিউশন' বলতে হিটলারের সেই চূড়ান্ত পরিকল্পনাকে বোঝায়, যার লক্ষ্য ছিল ইউরোপ থেকে ইহুদি জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এই পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪২ সালে ওয়ানসি কনফারেন্সে গৃহীত হয়।
ইউরোপীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
হিটলারের ইহুদি গণহত্যার খবর প্রচারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে একপেশে নীতি অনুসরণের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়, গণমাধ্যমগুলো হিটলারের নৃশংসতা এবং ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরলেও, কী কারণে তিনি এতটা ইহুদি-বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এড়িয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পেছনে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্রের মতো বিষয়গুলো ইউরোপীয় গণমাধ্যম সচেতনভাবে চেপে রাখে। একইভাবে, হিটলারের কিছু ভিন্ন দিক, যেমন তাঁর ধূমপান-বিরোধী কঠোর প্রচারণা বা সমকামিতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান, এগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয় না বলে মনে করা হয়।
ধারণা করা হয়, এই একপেশে প্রচারণার মূল কারণ হলো, গণহত্যার পেছনের কারণগুলো প্রকাশ পেলে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্র এবং তাতে ইউরোপীয়দের স্বার্থ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে পারে, যা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।
পূর্বের আটলান্টিস: চীনের সেই ডুবো শহর যেখানে সময় থেমে আছে!
চীনের ঝেঝিয়াং প্রদেশের কিয়ানদাও হ্রদের গভীর তলদেশে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন শহর— শি চেং, যার অর্থ 'সিংহ শহর'। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পূর্ব হান রাজবংশের আমলে গড়ে ওঠা এই শহরটি একসময় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন ছিল। রাজপ্রাসাদ, পাথরের খোদাই করা তোরন, রাজকীয় মন্দির, সুশৃঙ্খল বাজার এবং পাথরের খিলান ও সিংহ মূর্তিতে সাজানো রাস্তা নিয়ে এটি দক্ষিণ চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। এক লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এই শহরটি তার চারপাশের পাহাড় ও নদীর সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল।
ডুবে যাওয়ার পেছনের ইতিহাস:
১৯৫০-এর দশকে চীন যখন শিল্পায়নের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল, তখন সরকারের একটি বড় পরিকল্পনা ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিনান নদীর উপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করা। ১৯৫৯ সালে গড়ে ওঠে কিয়ানদাও হ্রদ প্রকল্প, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম তৈরি করবে। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য যে বিশাল জলাধার প্রয়োজন ছিল, তার গভীরে চলে যেত শি চেং সহ প্রায় ১৩৭৭টি গ্রাম এবং একাধিক শহর। সরকার মাত্র কয়েক মাসের নোটিশে এসব এলাকার মানুষদের উচ্ছেদ করে, এবং হাজার বছরের ইতিহাস ও স্মৃতির শহর শি চেং নিমেষেই পানির নিচের নগরীতে পরিণত হয়।
অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকার রহস্য:
সাধারণত পানির নিচে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কাঠামো অক্ষত থাকে না, কিন্তু শি চেং যেন সময়ের নিয়ম মানতে অস্বীকার করেছে। ২০০১ সালে যখন ডুবুরিরা প্রথম এই শহরটি খুঁজে পান, তখন তারা বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, পাঁচতলা ভবন, রাস্তার খিলান, মন্দিরের খোদাই করা সিংহ ও ড্রাগনের মূর্তি সবই প্রায় অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি দরজার ফ্রেম ও কাঠের শিল্পকর্মও অনেক জায়গায় অক্ষত ছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পানির নিচে স্থিরতা, অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং সূর্যের আলো না পৌঁছানো— এই তিনটি কারণে শহরটি প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয়ে আছে। কিয়ানদাও হ্রদের পানির তাপমাত্রা সারা বছর প্রায় একই থাকে, যা শহরের কাঠামো রক্ষা করেছে।
অটলান্টিস অফ দ্য ইস্ট:
আজ শি চেং ডুবুরিদের জন্য এক স্বর্গ, যেখানে অভিজ্ঞ ডুবুরিরা পানির নিচের এক বিশাল রাজপ্রাসাদে ভাসার অনুভূতি পান। নীলচে সবুজ পানির গভীরে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের তোরন, খোদাই করা সিংহ মূর্তি এবং চীনা ড্রাগনের কারুকাজ এক মায়াবী অনুভূতি দেয়। বহু আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল, ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং ইতিহাসবিদ এখানে গবেষণা করেছেন। চীনের সরকার এখন এই শহরকে "অটলান্টিস অফ দ্যা ইস্ট" বা "পূর্বের অটলান্টিস" বলছে এবং পর্যটকদের জন্য এখানে বিশেষ ডাইভিং ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে। হাজার বছরের পুরনো এই শহরকে পানির নিচে সুরক্ষিত রাখতে নানা প্রকল্পও চলছে।
শি চেং শুধু একটি শহর নয়, এটি মানুষের অগ্রগতির নামে ইতিহাসের মর্মান্তিক সিদ্ধান্তের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। শিল্পায়নের তাড়নায় আমরা কত সভ্যতাকে হারিয়ে ফেলেছি, তারই প্রতিচ্ছবি এই ডুবে যাওয়া নগরী।
কুরআন ও বিজ্ঞানের মহাবিস্ময়: যেভাবে মিলে যাচ্ছে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ তত্ত্ব ও কিয়ামতের ভবিষ্যদ্বাণী!
মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে যেমন 'বিগ ব্যাং' (Big Bang) তত্ত্ব বহুল পরিচিত, তেমনই এর সম্ভাব্য শেষ পরিণতি নিয়েও বিজ্ঞানীরা এক নতুন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন, যার নাম 'বিগ ক্রাঞ্চ' (Big Crunch)। আশ্চর্যজনকভাবে, এই তত্ত্বের সাথে ইসলামী আকিদায় বর্ণিত কিয়ামতের দিনের ধারণার এক গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আধুনিক বিজ্ঞানও কিয়ামতকে 'স্বীকার' করতে শুরু করেছে? কোরআন ও বিজ্ঞান মহাবিশ্বের এই শেষ অধ্যায় সম্পর্কে কী বলে?
বিগ ক্রাঞ্চ কী?
প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে 'বিগ ব্যাং'-এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম হয়। এরপর থেকে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকে, যেখানে তারকা, গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র সবই একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন মহাকর্ষ এই সম্প্রসারণ থামিয়ে দেবে, কিন্তু ১৯৯৮ সালে তারা জানতে পারেন যে মহাবিশ্ব শুধু প্রসারিতই হচ্ছে না, বরং 'ডার্ক এনার্জি' (Dark Energy) নামক এক রহস্যময় শক্তির প্রভাবে এটি দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে।
তবে নতুন গবেষণা বলছে, এই ডার্ক এনার্জিও একসময় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি মহাকর্ষ তখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে মহাবিশ্বের প্রসারণ থেমে গিয়ে সংকোচন শুরু হবে। এই সংকোচনকেই বিজ্ঞানীরা 'বিগ ক্রাঞ্চ' নাম দিয়েছেন।
বিগ ক্রাঞ্চের পরিণতি
'বিগ ক্রাঞ্চ' তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে শুরু করলে গ্যালাক্সিগুলো ধীরে ধীরে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসবে, গ্রহ ও তারাগুলোর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটবে। সময় ও স্থান 'রিভার্স মোডে' (reverse mode) চলে যাবে, এবং পুরো মহাবিশ্ব যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। মহাবিশ্ব তার চিরচেনা রূপ হারাবে এবং আমরা যেভাবে মহাবিশ্বকে জানি, তার কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
কোরআন ও বিগ ক্রাঞ্চের মিল
বিগ ক্রাঞ্চের এই ধারণা, যেখানে গ্যালাক্সি, গ্রহ, তারা এমনকি সময় সবকিছু একসাথে গুটিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে, তা ইসলামী আকিদায় বর্ণিত কিয়ামতের দিনের অবস্থার সাথে অনেক মিল রাখে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: "সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নিব যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই"। এই আয়াত স্পষ্টভাবে মহাবিশ্বের সংকোচন বা গুটিয়ে নেওয়ার ধারণাকে সমর্থন করে।
কোরআনে আরও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের পর আল্লাহ সবকিছু নতুন করে সৃষ্টি করবেন। বিজ্ঞানও 'বিগ ক্রাঞ্চ'-এর পর আরেকটি নতুন মহাবিশ্বের জন্মের সম্ভাবনার কথা বলে, যাকে তারা 'বিগ বাউন্স' (Big Bounce) নাম দিয়েছে।
সময় ও স্থান রিভার্স মোডে চলে যাওয়ার বিষয়ে কোরআনের অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে: "এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়কে দেখবে ভয়ে নত যেন হয়ে আছে। প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের আমলনামা দেখতে বলা হবে, তোমরা যা করতে অদ্য তোমাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে"। এই আয়াত ইঙ্গিত দেয় যে, কিয়ামতের দিনে সময়ের পুনরাবৃত্তি বা প্রতিফলন ঘটবে, যেখানে মানুষের সমস্ত কাজ তাদের সামনে প্রকাশিত হবে, যা বিগ ক্রাঞ্চে মহাবিশ্বের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দেখা যাচ্ছে, কোরআন ও বিজ্ঞান উভয়ই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে প্রায় একই রকম ধারণা দিচ্ছে। কোরআন এটিকে আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করে এর অবশ্যম্ভাবিতা নিশ্চিত করেছে, যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও এটিকে হাইপোথেটিক্যাল বা কল্পবিজ্ঞানের পর্যায়ে রেখে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। 'বিগ ক্রাঞ্চ' বা কিয়ামত, উভয়ই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এই মহাবিশ্ব চিরকাল থাকবে না, এবং দুনিয়াতে আমাদের প্রতিটি কাজ ও পদক্ষেপের গুরুত্ব অপরিসীম।
পাঠকের মতামত:
- ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- সাইবার হামলা ঠেকাতে মেটার নতুন পাসকি ও সতর্কতা সুবিধা চালু
- জামায়াতের হুঁশিয়ারি: কিছু উপদেষ্টা একটি দলের পক্ষে কাজ করছে
- নাহিদ ইসলামের বিস্ফোরক দাবি: জানালেন কেন নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা জরুরি
- ফরজ গোসলে দেরি করলে কি গুনাহ হয়? জেনে নিন ইসলামি স্কলারদের মত
- ‘৩আই/অ্যাটলাস’ কি এলিয়েনদের তৈরি? হার্ভার্ড বিজ্ঞানীর অভিযোগে নতুন মোড়
- সারজিসের নতুন বার্তা: নন-ক্যাডার পদে নিয়োগবিধি নিয়ে কী বললেন?
- সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিয়ে নতুন ঘোষণা
- বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা ছাড়া সই নয়: জুলাই সনদে এনসিপি’র শর্ত
- কাশির সিরাপ কি শিশুদের জন্য নিরাপদ? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
- ত্বকের যত্নে ‘বেসিক’ রুটিন: কীভাবে ঘরোয়া উপায়েই ত্বককে রাখবেন সতেজ ও উজ্জ্বল
- জাপান সাগরে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ
- জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল যমুনায়
- বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, শুধু নিরপেক্ষতা চেয়েছে: ড. আসিফ নজরুল
- সরকারে দলীয় লোকজন থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়: রিজভী
- তারেক রহমানের নির্দেশে প্রার্থী বাছাই ২০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত
- কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার নয়, ইউএনওদের প্রতি সিইসি’র কঠোর নির্দেশ
- ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরও ক্লান্তি? ঘুমের গুণমান নষ্ট করছে ৬টি অভ্যাস
- শুষ্ক কাশির সমাধান: এই ৪টি ঘরোয়া উপাদানই যথেষ্ট
- পেটের মেদ কমাবে ৫ পানীয়: সকালে পান করলেই মিলবে চমকপ্রদ ফল
- ২২ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ২২ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ২২ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- এনসিপি’র সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ: জুলাই সনদের সমাধান কী আসবে?
- প্রবাসীরাও এবার ভোট দেবেন: অ্যাপ চালু নিয়ে ইসি’র বড় ঘোষণা
- সত্যিকারের অপরাধী ভারতে,আত্মসমর্পণ করা ১৫ সেনা কর্মকর্তা নির্দোষ
- ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতিতে আসছে আমূল পরিবর্তন
- আইন উপদেষ্টা: রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সংশয়
- ফারমিনের হ্যাটট্রিক, রাশফোর্ডের জোড়া—এল ক্লাসিকোর আগে উড়ছে বার্সেলোনা
- নিজ সরকারের বিরুদ্ধেই ট্রাম্পের মামলা: মার্কিন রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা
- কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে বেঁধে লাঠিপেটা করলেন যুবলীগ নেতা
- “অবৈধ অনুপ্রবেশ”–অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চীনের অভিযোগে কূটনৈতিক টানাপোড়েন
- সেনা কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন
- শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
- ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
- ইবন খালদুন: রাজনীতি, সমাজ ও ইতিহাসের এক অবিনশ্বর তাত্ত্বিক
- জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট থাকবে না:গোলাম পরওয়ার
- মস্কোর কৌশলী অবস্থান: ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কেন ‘সময়সীমা নেই’?
- কানাডায় প্রবেশ করলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা হবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
- ২২ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে
- পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস
- প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বিএনপির উদ্বেগ: ফখরুল জানালেন আলোচনার বিষয়
- দুই উপদেষ্টার মতবিরোধ: ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি বাতিল নিয়ে বিতর্ক
- জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?
- টানা ১০ দিন চিনি না খেলে শরীরে কী হয়?
- আই লাভ মুহাম্মদ লেখা নিয়ে ভারতে উত্তেজনা: পুলিশের গুলি ও উচ্ছেদ অভিযান
- মির্জা ফখরুল, সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যমুনায়
- বান্দরবান সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি
- লিংকডইনে চাকরি খুঁজছেন? প্রোফাইল আকর্ষণীয় করার ৫টি কৌশল
- ইবন খালদুন: রাজনীতি, সমাজ ও ইতিহাসের এক অবিনশ্বর তাত্ত্বিক
- ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
- পূর্বাচল প্লট অনিয়ম মামলা: শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে পাঁচজনের সাক্ষ্য
- মাইগ্রেন কি শুধু মাথাব্যথা? জেনে নিন এর ৫টি ভিন্ন ধরন
- রিশাদ ম্যাজিক স্পিনে উড়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- বান্দরবান সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি
- মাইগ্রেনের সমস্যা: যে ৬টি অভ্যাস আজই আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে
- জাল টাকার প্রচলন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
- শীতকাল আসছে: সুস্থ থাকতে এখনই বর্জন করুন এই ৫টি অভ্যাস
- অভিভাবকতন্ত্রের প্রলোভন: জেনারেল ভূঁইয়ার বয়ান ও গণতন্ত্রের ঘড়ি থামানোর বিপদ
- শিক্ষক আন্দোলনের মোড়বদল: ‘লংমার্চ টু যমুনা’ স্থগিত, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
- ২০ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ২১ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- ‘জুলাই সনদ’-এর ৫ নম্বর দফা সংশোধনের প্রস্তাব দিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ