৮১২ কোটি টাকার দুর্নীতিতে শেখ হাসিনাকে দুদকে তলব

শেখ হাসিনাকে দুদকের তলব: বিমানবন্দর প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হয়েছে বৃহস্পতিবার

ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর আলোকে তাঁকে আগামী বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। চিঠিটি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির সুধাসদন এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, “শেখ হাসিনার জবাবদিহির সুযোগটি এটাই প্রাথমিক ধাপ। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হাজির না হলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হারাতে পারেন।”

এর আগে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি, বিমানবন্দর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক মামলা দায়ের করে দুদক। আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হক এবং বেবিচক (বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো এমন এক সময় সামনে এসেছে, যখন তিনি ছাত্র-জনতার ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ভারত পালিয়ে গিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন। এ ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে চলে যান, যদিও কয়েকজনকে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গ্রেপ্তার করেছে।

এছাড়া, চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর পরিচালিত দমন-পীড়নকে “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, গত ২৩ ডিসেম্বর, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কাছে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়। যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

দুদকের তলব এবং চলমান বিচারিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ—সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে দেশ-বিদেশে উত্তেজনা ও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ এবং দেশের রাজনীতির গতিপথে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।